প্রেমের টানে নারী থেকে পুরুষ, সেই প্রেমিকাই দিলো ধর্ষণের অভিযোগ


সুমাইয়া তাবাস্সুম: , আপডেট করা হয়েছে : 24-01-2023

প্রেমের টানে নারী থেকে পুরুষ, সেই প্রেমিকাই  দিলো ধর্ষণের অভিযোগ

দুই নারী, আর তাঁদের তথাকথিত সমাজবিরুদ্ধ নিষিদ্ধ প্রেমের গল্প। যে প্রেমের জন্য অস্ত্রোপচার করে ‘পুরুষ’ হয়েছিলেন একজন। কিন্তু তারপরেও পূর্ণতা পায়নি ভালবাসা। সম্পর্ক তো ভেঙেছেই, এমনকী, একে অপরের দিকে তুলেছেন অভিযোগের আঙুল। জল এতদূর গড়িয়েছে যে থানা-পুলিশ কোর্ট-কাছারি করেও এখন মুক্তি মিলছে না।

উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসির বাসিন্দা সোনাল। বাবা-মায়ের সঙ্গেই থাকতেন তিনি। ২০১৬ সালে সরকারি চাকরি পেয়ে পোস্টিং নিয়ে ঝাঁসিতে আসেন সানা নামের আর এক তরুণী। সোনালের বাড়িতে পেয়িং গেস্ট হিসেবে থাকতে শুরু করেন তিনি। অল্প সময়েই বন্ধুত্ব হয়ে যায় সোনাল এবং সানার। মাসকয়েক যেতে না যেতেই পরস্পরের প্রেমে পড়েন যুগল।

দুজনের ঘনিষ্ঠতা নজর এড়ায়নি সোনালের বাবা-মার। বিষয়টি ভালভাবে মেনে নিতে পারেননি তাঁরা। সমস্যার সমাধানে সানাকে তাঁরা বলেন, অন্য বাড়ি দেখে সেখানে চলে যেতে। ঘটনাচক্রে চাকরি পাওয়ার এক বছর পরেই থাকার জন্য সরকার থেকে কোয়ার্টার দেওয়া হয় সানাকে। ২০১৭ সালের অগস্ট মাসে জিনিসপত্র নিয়ে সেখানে চলে যান সানা।

তখন সানাকে না দেখে এক মুহূর্তও থাকতে পারতেন না সোনাল। তাই বাবা মায়ের ইচ্ছের তোয়াক্কা না করেই ৪ দিন পর সানার কাছে চলে আসেন তিনি। সরকারি কোয়ার্টারে দুজনের একত্রবাস শুরু হয়। কিন্তু সোনাল বুঝেছিলেন, সমপ্রেম মেনে নেবে না সমাজ। তাই সানাকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে লিঙ্গ পরিবর্তন করার জন্য বোঝাতে শুরু করেন তিনি। শুরুতে রাজি না হলেও পরে মেনে নেন সানা। দিল্লির স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালের তরফে মেডিক্যাল পরীক্ষার পর অস্ত্রোপচারের জন্য ‘ফিট’ বলে জানানো হয় সানাকে। হাসপাতালের কাগজপত্রে নাকি সর্বত্রই নিজেকে সানার ‘স্ত্রী’ বলে পরিচয় দিয়েছিলেন সোনাল। ২০২০ সালের জুন মাসে সেই কাঙ্খিত অস্ত্রোপচার হয়। ‘পুরুষ’ হয়ে ওঠেন সানা। নতুন নাম রাখেন নিজের, সোহেল খান।

নতুন পরিচয়ে দিব্যি এগোচ্ছিল সম্পর্ক। গোলমাল শুরু হয় সোনাল চাকরি পাওয়ার পর। ২০২২ সালে একটি হাসাপাতালে চাকরি পান সোনাল। সানার দাবি, তারপর থেকেই নাকি সোনালের আচরণে পরিবর্তন লক্ষ্য করেন তিনি। তাঁকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে সোনাল, তাঁর বেশিরভাগ সময় নাকি কেটে যেত হাসপাতালেই।

এই নিয়ে যুগলের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়। একদিন সানা দেখেন, সোনাল একটি গ্রুপ ফোন কলে কথা বলছেন অন্য দুজনের সঙ্গে। হাউহাউ করে কাঁদছেন তিনি। বলছেন, বাড়ির লোককে না দেখে আর থাকতে পারছেন না তিনি।

এরপর আস্তে আস্তে নতুন নতুন অনেক জিনিস জানতে শুরু করেন সোহেল ওরফে সানা। তেমনভাবেই একদিন আবিষ্কার করেন, তাঁকে ছেড়ে একই হাসপাতালের কর্মী জ্ঞান নামে এক যুবকের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন সোনাল। কান্নাকাটি ঝগড়াঝাটির পর সোনাল স্বীকার করেন সবটা। জ্ঞানের সঙ্গেই থাকতে চান তিনি, সাফ জানিয়ে দেন সানাকে।

তারপর তো আর সানার বাড়িতে থাকার প্রশ্নই ওঠে না। যাঁর জন্য একদিন পরিবারকে ছেড়ে এসেছিলেন, তাঁকেই ছেড়ে ফের ঝাঁসিতে বাবা মায়ের কাছে ফিরে গেলেন সোনাল। শুধু তাই নয়, প্রাক্তনের বিরুদ্ধে তাঁকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়া এবং ধর্ষণের অভিযোগে থানায় মামলাও দায়ের করলেন সোনাল ও তাঁর বাবা মা। এরপর তো তদন্তকারীদের সামনে সব কথা খুলে বলা ছাড়া উপায় ছিল না সানার। সব জানার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সোনালকে থানায় ডেকে পাঠানো হয়। কিন্তু তিনি আসেননি।

বাধ্য হয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন সানা। কিন্তু একাধিক সমনের পরেও একবারের জন্যও হাজিরা দেননি সোনাল। আদালত অবমাননার অভিযোগে গত ১৮ জানুয়ারি সোনালকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আপাতত জামিনে মুক্ত রয়েছেন তিনি। আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]