স্বপ্ন ছোঁয়ার দ্বারপ্রান্তে


অনলাইন ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 22-01-2023

স্বপ্ন ছোঁয়ার দ্বারপ্রান্তে

দেশের বহু মেগাপ্রকল্পের অন্যতম স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেল। এ স্বপ্ন ছোঁয়ার অপেক্ষায় এখন। চীনের সাংহাই নগরীর আদলে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম হবে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’। কর্ণফুলী নদীর তলদেশ হয়ে চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ পাড়ের সংযুক্তি ইতোমধ্যে ঘটেছে। দেশের অর্থনীতির গতিকে নিঃসন্দেহে আরও সমৃদ্ধ করতে যাচ্ছে এই টানেল।
এই টানেলের নির্মাণকাজের ৯৬ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। আর মাত্র ৪ শতাংশ কাজ বাকি। টানেল প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ চৌধুরী নিশ্চিত করেছেন টানেলের সিভিল ওয়ার্ক সম্পন্ন হওয়ার পর বর্তমানে ইলেক্ট্রো মেকানিক্যাল কাজের যাবতীয় প্রক্রিয়াও শেষ হওয়ার পথে। সঙ্গে চলছে প্রি-কমিশনিং কাজ। প্রি-কমিশনের পর হবে কমিশনের কাজ। স্বপ্নের এই টানেল ইতোমধ্যে দৃশ্যমান। চট্টগ্রামের সঙ্গে এই টানেল সংযুক্ত করেছে উপজেলা আনোয়ারাকে। আনোয়ারা হয়ে উঠছে একটি উপশহর।
ইতোমধ্যে সরকার ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে টানেল নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধি অনুমোদন করেছে। পুরো প্রকল্প সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে সময় বাড়িয়েছে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে আগামী মার্চের মধ্যে এ টানেল চালু হয়ে যাবে বলে সেতু বিভাগ সূত্রে ধারণা দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। তবে উদ্বোধনের দিনক্ষণ এখনো ঠিক হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানিয়েছে, এই টানেল প্রকল্পে খরচের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকারও বেশি। এই প্রকল্প শেষ করার জন্য পূর্বে সময় দেয়া হয়েছিল গেল বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। সম্প্রতি এই মেয়াদ বাড়িয়ে দিয়েছে সরকার। সূত্র জানায়, গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ডলারের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে এই বৃদ্ধির বিপরীতে ভ্যাট বাবদ সরকার পাবে ২২৯ কোটি টাকারও বেশি। উল্লেখ করা যেতে পারে, ২০১৫ সালে প্রকল্পটি পাস হয়।

তখন এই প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছির ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে প্রকল্প ব্যয় সংশোধন করা হয়। ব্যয় ধরা হয় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। সময় দেয়া হয় ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। গেল সপ্তাহে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে নির্বাহী কমিটি একনেক প্রকল্প ব্যয় আরেক দফা বাড়িয়েছে। 
বাংলাদেশ ও চীন সরকারের মধ্যে জি টু জি পদ্ধতিতে এই প্রকল্পের ব্যয় নির্বাহ করা হচ্ছে। টানেল সম্পূর্ণভাবে চালু হওয়ার পর বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বিস্তৃতির পাশাপাশি ব্যবসাও শিল্প প্রতিষ্ঠায় সমৃদ্ধ করবে বলে ব্যবসায়ীরা আশা করছেন। টানেলের মাধ্যমে মজবুত করে দেশের অর্থনীতির ভিত। প্রকল্প সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে টানেলে দুই টিউবের চার লেনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সিভিল ওয়ার্কও সম্পন্ন।

এখন চলছে একেবারে শেষ পর্যায়ে ইলেক্ট্রো মেকানিক্যাল কাজের পাশাপাশি অন্যান্য পারিপাশির্^ক কর্মকা-। প্রকল্পের সঙ্গে জড়িতরা পতেঙ্গা পয়েন্ট থেকে আনোয়ারা পয়েন্ট পর্যন্ত বিস্তৃত টানেল দিয়ে নিজেদের যানবাহন চালিয়ে ট্রায়াল কর্মকা- করে যাচ্ছে। 

চার লেনের দুই টিউবসহ কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে এই টানেল নির্মিত হয়েছে। টানেলের পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার এপ্রোচ রোড এবং ৭২৭ মিটার ওভারব্রিজ নির্মিত হয়েছে। দুই টিউবের মধ্যভাবে তিনটি ক্রস প্যাসেজের ঝুঁকিপূর্ণ কাজও সম্পন্ন হয়ে গেছে। সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে সংযোগ পথের কাজও। 
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ও চীন সরকার জি টু জি অর্থায়নে টানেল নির্মাণে চীন সরকার দিচ্ছে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা। অবশিষ্ট অর্থ দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। 
বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পের পরিচালক জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথম এই টানেল নির্মিত হয়েছে। এটি সম্পূর্ণভাবে দৃশ্যমান হতে আগামী মার্চ মাস নাগাদ লেগে যেতে পারে। টানেল নির্মাণ উচ্চ ক্ষমতার কারিগরি কাজ।

সেতু বিভাগ সূত্রে জানানো হয়েছে, এই টানেল চালু হওয়ার পর এক বছরের মধ্যে ৬৩ লাখ যানবাহন চলাচল করার কথা রয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় দিনে ১৭ হাজারেরও বেশি যানবাহন চলাচল করবে। যানবাহন চলাচলে ইতোমধ্যে নির্মিত হয়েছে দৃষ্টিনন্দন টোলপ্লাজা। চট্টগ্রামের পতেঙ্গা প্রান্তে এই টোলপ্লাজা নির্মিত হয়েছে। আগামী ২৫ সালের মধ্যে এই টানেল দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ২৮ হাজারেরও বেশি যানবাহন চলাচল করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিদিন গড়ে চলবে প্রায় ৩৮ হাজার যানবাহন। 
এদিকে, বঙ্গবন্ধু টানেলের অপরপ্রান্ত অর্থাৎ আনোয়ারায় সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। যানবাহন চলাচলের জন্য এ সড়ক এখন প্রস্তুত। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে যানবাহন চট্টগ্রাম শহরে প্রবেশ না করে টানেলের মাধ্যমে আনোয়ারা হয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার অর্থাৎ আরাকান সড়কে পৌঁছে যাবে। 
টানেল দিয়ে যানচলাচলে টোল আদায়ের হারের প্রস্তাবনাও চূড়ান্ত হয়ে গেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ে এটি এখন চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এতে ১২ ধরনের যানবাহনের জন্য টোলের আদায়ের হার প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ। 
চট্টগ্রাম শহরের সঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রামের যোগাযোগে বর্তমানে রয়েছে শাহ আমানত সেতু। এ সেতু দিয়ে ১১ ধরনের যানবাহন চলাচল করে থাকে। এ সেতু দিয়ে যে টোল আদায় হয় তাকে সামনে রেখে কর্ণফুলী টানেল দিয়ে টোল আদায়ের হারের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা প্রায় তিন গুণের কাছাকাছি বেশি। এই টোল আদায়ের তথ্য নিয়ে যানবাহন চালক ও মালিকদের মধ্যে ইতোমধ্যে প্রতিক্রিয়াও সৃষ্টি হয়েছে। এসব বিষয় আমলে নিয়ে টোল আদায়ের হার চূড়ান্ত করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, টিউবসহ কর্ণফুলী টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। এর মধ্যে টিউবের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। টানেলের সঙ্গে পতেঙ্গা প্রান্তে রয়েছে শূন্য দশমিক ৫৫ কিলোমিটার, আনোয়ারা প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক রয়েছে। এছাড়া আনোয়ারা প্রান্তের সংযোগ সড়কের সঙ্গে ৭২৭ মিটার উড়াল সেতু রয়েছে। 
দেশের অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে উন্নয়নসহ এই টানেল আগামীতে চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়ন কর্মকা-কেও ত্বরান্বিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিস্তীর্ণ অঞ্চলে শিল্পায়ন আবাসন ও বাণিজ্যে উন্নয়ন ঘটবে। ভারতের সেভেন সিস্টার্স খ্যাত রাজ্যগুলো চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের জন্য বহু আগে থেকে আগ্রহ প্রকাশ করে আসছে। এক্ষেত্রে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বাড়তি জেটি নির্মাণের মাধ্যমে সক্ষমতা বাড়ালে আঞ্চলিক ব্যবহারের দ্বারও উন্মুক্ত হয়ে যাবে বলে ব্যবসায়ীদের ধারণা। 


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]