শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র্যাগিং বা বুলিং দমন করতে নীতিমালা করছে মন্ত্রণালয়। নীতিমালা অনুযায়ী কোনো শিক্ষার্থী র্যাগিং করলেই তাকে সাময়িক বা স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা যাবে। এসবের সঙ্গে শিক্ষকরা জড়িত থাকলে তাদের বেতন বন্ধ হয়ে যাবে। জড়িতদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে মামলাও করা যাবে। এমন অপরাধ করে পার পাবেন না গভর্নিং বডির সদস্যরাও। শিগগিরই এই নীতিমালা চূড়ান্ত করা হবে বলে জানা গেছে।
‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং/র্যাগিং প্রতিরোধ সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২৩’ চূড়ান্তকরণের লক্ষ্যে গত বৃহস্পতিবার সভার আয়োজন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। তবে সভায় নীতিমালাটি চূড়ান্ত হয়নি। অধিকতর যাচাই-বাছাই শেষে ফের বৈঠক ডেকে এটি চূড়ান্ত হবে বলে জানা গেছে।
সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজ-মাদরাসা-কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি এই নীতিমালার আওতায় থাকবে। ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যঙ্গ করে নাম ধরে ডাকা, বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ অঙ্গভঙ্গি করা, উত্ত্যক্ত করা, শিস দেওয়া, এমনকি মানসিক চাপ প্রয়োগ করাও বুলিং/র্যাগিং-এর অন্তর্ভুক্ত হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ অশালীন মন্তব্য করলেও এই নীতিমালা কার্যকর হবে। নীতিমালার খসড়ায় দেখা গেছে- এ নীতিমালা বাস্তবায়নে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র্যাগিং প্রতিরোধে কমিটি গঠন করতে হবে। এ সংক্রান্ত অভিযোগ সংগ্রহে অভিযোগ বক্স রাখতে হবে প্রতিষ্ঠানে। নিয়মিত সভার মাধ্যমে এসব অভিযোগের মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। প্রতি ছয় মাসে অন্তত একবার ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে র্যাগিং থেকে উত্তরণের জন্য সেমিনার-সিম্পোজিয়াম-ওয়ার্কশপের আয়োজন করতে হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে। যেসব স্থানে র্যাগিং হওয়ার আশঙ্কা থাকে প্রয়োজনে সেসব স্থান সিসিটিভির আওতায় আনা হবে। এর কুফল সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করতে শিক্ষাবর্ষের শুরুতে এক দিন অ্যান্টি বুলিং ডে পালন করতে হবে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়কে। মাঝে-মধ্যে অভিভাবক সমাবেশ ডেকে শিক্ষার্থীর বাবা-মার কাছেও সতর্কতামূলক বার্তা পৌঁছে দেওয়া হবে। সাইকোলজিস্ট হিসেবে প্রশিক্ষণ পাবেন কয়েকজন শিক্ষক। এ ছাড়া সহপাঠ কার্যক্রমে বুলিং বিষয়ক পাঠ অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
এমন অপরাধের শাস্তি হিসেবে বলা হয়েছে, কোনো শিক্ষক বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে র্যাগিং কিংবা বুলিংয়ের অভিযোগ পাওয়া গেলে তা ১৯৭৯ সালের সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা পরিপন্থী হবে এবং তা শাস্তিমূলক অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা র্যাগিং কর্মকান্ডে জড়িত থাকলে কারণ দর্শানো সাপেক্ষে তাদের এমপিও স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে বাতিল করা যাবে। স্থায়ীভাবে বরখাস্তও হতে পারেন অভিযুক্তরা। উপযুক্ত কারণ দর্শানো সাপেক্ষে নন এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে অপসারণ বা বরখাস্ত করা যাবে। ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় ফৌজদারি মামলা করা যাবে তাদের বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে অভিযোগের ধরন ও গুরুত্ব অনুযায়ী অভিযুক্তকে সাময়িক বা স্থায়ী বহিষ্কার করা যাবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ থাকলে তদন্ত রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে সদস্য পদ থেকে অপসারণ করা যাবে। এমনকি সংশ্লিষ্ট কমিটিও বাতিল হয়ে যেতে পারে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ গতকাল এই নীতিমালা সম্পর্কে এ প্রতিবেদককে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাঝে-মধ্যেই র্যাগিং বা বুলিংয়ের অভিযোগ পাওয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবাসিক হলগুলোতে সাংঘাতিকভাবে র্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটে থাকে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন অমানবিক আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। যে কোনো মূল্যে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই নীতিমালা বাস্তবায়ন করা হবে। নীতিমালার মাধ্যমে শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে যেন এমন আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।