লাতিন আমেরিকার দেশ পেরুতে সরকার বিরোধী আন্দোলন চলছে ৬ সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে। ২০২২ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলনে এখন পর্যন্ত অন্তত ৪৭ জন নিহত হয়েছে। এর বাইরেও গ্রেফতার হয়েছেন আরও শতাধিক আন্দোলনকারী। সর্বশেষ শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) দেশটির পুলিশ ২০০ জনেরও বেশি আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করেছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, শুক্রবার পেরুর রাজধানী লিমায় বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বোতল, ইট-পাটকেল ছুঁড়ে। জবাবে পুলিশও টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে। এতে বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী আহত হন। পরে বিক্ষোভ আরও ছড়িয়ে পড়ে। শহরের রাস্তায় রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ করতে থাকে আন্দোলনকারীরা।
এদিকে, লিমার একটি প্রধান বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে অন্তত ২০৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পেরুভিয়ান পুলিশ। লিমায় অবস্থিত ইউনিভার্সিদাদ ন্যাছিওনাল মেয়র দে স্যান মার্কোসের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করার কারণে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির ক্রাইম প্রিভেনশন ডিভিশনের কর্মকর্তা আলফানসো বারানেসিয়া। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম চুরির অভিযোগও আনা হয়েছে।
অপরদিকে, সরকারবিরোধী আন্দোলন কেবল রাজধানীতে সীমাবদ্ধ নেই। ছড়িয়ে পড়েছে দেশটির আনাচে-কানাচে। দেশটিতে থাকা ইনকা সভ্যতার নিদর্শন মাচু পিচুর প্রবেশদ্বার বলে খ্যাত কুসকো শহরে একটি তামা খনিতে আন্দোলনকারীরা আক্রমণ করায় খনি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। একই কারণে এর আগেও আরও দুই বার খনিটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। কেবল তাই, অস্থিতিশীলতা বাড়তে থাকায় মাচু পিুচ পর্যটন কেন্দ্রও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
এর আগে, গত ৭ ডিসেম্বর ২০২১ সালে কংগ্রেস বাতিল করার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে নির্বাচিত বামপন্থি নেতা পেদ্রো কাস্তিলোকে অভিশংসনের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি অবৈধভাবে দেশটির পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে চেয়েছিলেন। এর ফলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কপার উৎপাদনকারী দেশটিতে রাজনৈতিক সংকটের শুরু হয়।
পদ থেকে অপসারণ করার পর পেদ্রো কাস্তিলোকে আটক করা হয়। এরপরই বিক্ষোভে প্রায় অচল হয়ে গেছে দক্ষিণ আমেরিকার এ দেশটি। পেদ্রোকে অপসারণ করার পর দেশটির ক্ষমতায় বসেন সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট দিনা বলুয়ার্তে। তিনি ২০২৬ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। তবে তার নতুন প্রস্তাব অনুসারে ২০২৪ সালেই পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
বলুয়ার্তেকে পদত্যাগ করে অবিলম্বে নতুন করে নির্বাচনের আয়োজন করার দাবি জানিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।