বৈশ্বিক নানা সংকটের মধ্যেও বাংলাদেশের রপ্তানি খাত এখন পর্যন্ত ভালো অবস্থানেই আছে। সদ্য সমাপ্ত ২০২২ সালের ডিসেম্বরে মোট ৫৩৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। কোনো একক মাসে এটিই দেশের সর্বোচ্চ রপ্তানি আয়। এর আগে গত নভেম্বরে প্রথমবারের মতো একক কোনো মাসে ৫০০ কোটি ডলারের বেশি রপ্তানি আয় হয়।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে এ রপ্তানির পরিমাণ ছিল প্রায় ৪৯১ কোটি ডলার। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় গত ডিসেম্বরে রপ্তানি বেড়েছে ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। গতকাল সোমবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
সব মিলিয়ে গত বছরের শেষ ছয় মাসে বা চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে ২ হাজার ৭৩১ কোটি ডলারের। আগের বছরের একই সময়ে এটি ছিল ২ হাজার ৪৭০ কোটি ডলার। ছয় মাসের হিসাবে রপ্তানি আয় বেড়েছে সাড়ে ১০ শতাংশ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, মূলত তিনটি কারণে রপ্তানি আয় বেড়েছে। এর একটি হচ্ছে কাঁচামালের দাম বাড়ার কারণে পণ্যের রপ্তানি মূল্য বেড়েছে। আরেকটি কারণ হলো, বাংলাদেশ এখন বিভিন্ন দেশের মতো দামি পণ্যের ক্রয়াদেশ পাচ্ছে এবং কোরিয়া, ভারতসহ নতুন বাজারে পণ্য রপ্তানি বেড়েছে। এ ছাড়া কারখানায় নতুন যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির সংযোজন, পণ্যের ব্র্যান্ডিং, কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করাসহ কয়েকটি বিষয় রপ্তানি বাড়াতে অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে।
আগামী মাসগুলোতে রপ্তানি কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ফারুক হাসান। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, গত কয়েক মাসে ক্রয় আদেশ কমে গেছে, যার প্রভাব পড়তে পারে আগামী কয়েক মাসে রপ্তানি আয়ে। বর্তমান ধারা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করতে হবে। সে জন্য সরকার ও সংশ্নিষ্ট সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
ইপিবির ছয় মাসের তথ্য বিশ্নেষণে দেখা যায়, বরাবরের মতো সবচেয়ে বেশি রপ্তানি আয় এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এ খাতে রপ্তানি আয় হয়েছে ২ হাজার ২৯৯ কোটি ডলারের বেশি। আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে যা সাড়ে ১৫ শতাংশ বেশি। গত ছয় মাসে নিটওয়্যার থেকে এসেছে ১ হাজার ২৬৫ কোটি ডলার। আর ওভেন থেকে ১ হাজার ৩৪ কোটি ডলার। ওভেন পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ১৮ শতাংশেরও বেশি। আর নিটে ১৩ শতাংশের মতো।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি হয়েছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে। এ খাতে এসেছে প্রায় ৬৪ কোটি ডলার। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ১৩ শতাংশ। তৃতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি আয় হোম টেক্সটাইলে। এ খাতে এসেছে ৬০ কোটি ডলার। যদিও তা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে তা ১১ কোটি ডলার কম। এ ছাড়া প্লাস্টিক খাত বেশ চমক দেখিয়েছে। এ খাতে রপ্তানি আয় হয়েছে ১০ কোটি ডলারের। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা বেড়েছে প্রায় ৪১ শতাংশ।
সার্বিকভাবে কৃষিপণ্য থেকে রপ্তানি আয় এসেছে ৫০ কোটি ডলার। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় তা ২৩ শতাংশ কম। তবে কৃষিপণ্যের মধ্যে চা, তামাক ও মসলার রপ্তানি বেড়েছে। পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৪৮ কোটি ডলারের। আগের বছরের তুলানায় যা প্রায় ১৮ শতাংশ কম। এ ছাড়া হিমায়িত খাদ্যপণ্য রপ্তানি কমেছে ২৭ শতাংশ।