অর্থ পাচার ও দুর্নীতি নিয়ে সোচ্চার উচ্চ আদালত


অনলাইন ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 31-12-2022

অর্থ পাচার ও দুর্নীতি নিয়ে সোচ্চার উচ্চ আদালত

অর্থ পাচার, দুর্নীতি বন্ধে বছরজুড়ে সোচ্চার ছিলেন উচ্চ আদালত। বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরাতে এবং সর্বস্তরে দুর্নীতি বন্ধে বিভিন্ন সময়ে নির্দেশনা, রুল জারিসহ নানা মন্তব্য করেন আদালত। চাঞ্চল্যকর পি কে হালদারসংশ্লিষ্ট অর্থ পাচার মামলা, কয়েকটি ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আদালতপাড়া ছিল সরগরম।

দুর্নীতির কোনো কোনো মামলা তদন্তে দুর্নীতি দমন কমিশনের গাফিলতি নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। হাইকোর্ট বলেন, আমাদের বার্তা পরিষ্কার, অর্থ পাচার ও দুর্নীতির ব্যাপারে আমরা জিরো টলারেন্স। কোনো দুর্নীতিবাজ বা অর্থ পাচারকারীকে ছাড় দেওয়া হবে না।

স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এক আদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরাতে এমএলএ চুক্তির পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে তিন মাস সময় দেন হাইকোর্ট।

বেসিক ব্যাংকের অর্থ পাচারসংক্রান্ত অপর এক মামলার শুনানিতে দেশের ব্যাংকগুলোয় অর্থ কেলেঙ্কারির বিষয়ে হাইকোর্ট বলেন, সব ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে, আমরা কি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখব। এটা কি হয়? এসব অর্থ কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন যা করছে তাতে মনে হয়, আমরা যেন নাটক দেখছি। হাততালি দেওয়া ছাড়া আর কী করার আছে, না হয় বসে থাকতে হবে।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিকের কাছে জানতে চাইলে তিনি শনিবার যুগান্তরকে বলেন, হাইকোর্ট দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপ্ন দেখেছিলেন সোনার বাংলা গড়ার। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স অবস্থান ছিল হাইকোর্ট বেঞ্চের।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মামলা পরিচালনায় সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে। আদালত আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট।

জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশনের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান যুগান্তরকে বলেন, দুর্নীতি এবং অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালত বরাবরই সোচ্চার ছিল। দুদকের প্রতি যখন যে নির্দেশনা এসেছে, তা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, চাঞ্চল্যকর পি কে হালদারের মামলাগুলো যেন তদন্ত দ্রুত সম্পন্ন হয় দুদকের প্রতি হাইকোর্টের নির্দেশনা ছিল, তা করা হচ্ছে। সুইস ব্যাংকে টাকা পাচার নিয়ে যে তথ্য-উপাত্ত ছিল, তা হাইকোর্টে জমা দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে একটি সুখবর আছে জানিয়ে দুদকের এ জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বলেন, সম্প্রতি এ বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সুইস ব্যাংকসহ যেসব ব্যাংক বা দেশে অর্থ পাচার হয়েছে, তাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, দুদকের কোথাও যদি পদ্ধতিগত ভুল হয়ে থাকে, তবে সেটা যদি আপিল বিভাগ বা হাইকোর্ট বলে দেয়, তাহলে সেটি আমলে নিয়ে ভবিষ্যতে আরও সতর্কতার সঙ্গে মামলা পরিচালনা করা হবে। দুদক এ ব্যাপারে শতভাগ সিরিয়াস, কাউকে ছাড় দেয় না। দুর্নীতিবাজ যেই হোক, এ ব্যাপারে দুদক জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করছে। আইনজীবী বলেন, হাইকোর্টে চাঁদপুরের বালুখেকো সেলিম খানের জামিনের সিরিয়াসলি বিরোধিতা করেছি। বিচারিক আদালতে গিয়ে শুনানি করেছি। সে বর্তমানে কারাগারে আছে।

অর্থ পাচার নিয়ে বিএফআইইউ’কে তিন মাস সময় : সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোয় বাংলাদেশিদের জমা করা অর্থের তথ্য চাওয়া হয়নি বলে গত ১০ আগস্ট ঢাকায় সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি শুয়ার বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এরপর হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের ব্যাখ্যা জানতে চান।

এর ধারাবাহিকতায় পরে ২৬ অক্টোবর পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে এমএলএ চুক্তির পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) তিন মাস সময় দেন হাইকোর্ট।

যারা বেসিক ব্যাংকের টাকা লুটপাট করেছে, তাদের ‘শুট ডাউন’ করা উচিত : গত ৮ নভেম্বর বেসিক ব্যাংকের অর্থ পাচারের মামলার আসামি মোহাম্মদ আলীসহ তিনজনের জামিন শুনানি হয়। শুনানিতে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেন, যারা বেসিক ব্যাংকের চার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে, পাচার করেছে, তাদের ‘শুট ডাউন’ করা উচিত।

পি কে হালদারের গ্রেফতারে ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানানো উচিত : পি কে (প্রশান্ত কুমার) হালদার ও তার সহযোগীরা ২০০৯-২০১৯ সালের মধ্যে চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর হাইকোর্ট বেঞ্চ জানতে চান, পি কে হালদারকে গ্রেফতার করে বিদেশ থেকে দেশে ফিরিয়ে আনতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তা জানাতে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।

এ অবস্থায় ১৪ মে পি কে হালদারসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করে ভারতের অর্থসংক্রান্ত গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। ১৬ মে পি কে হালদারের গ্রেফতারের খবরে সন্তোষ প্রকাশ করে হাইকোর্ট বলেন, ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানানো উচিত।

বালুখেকো সেলিম খানকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা : গত বছর চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণে অধিগ্রহণের পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া নিয়ে রিট করেন চাঁদপুরের বিতর্কিত ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানসহ তিন ব্যক্তি। রিট আবেদনকারীরা আদালতে কিছু জাল ডকুমেন্ট দেন। এতে আদালতের সময় নষ্ট করায় চলতি বছরের ৯ জুন রুল খারিজ করেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। একই সঙ্গে সেলিম খানকে ৫০ লাখ টাকা ও অপর দুজনকে ২৫ লাখ টাকা করে জরিমানা করেন আদালত। বর্তমানে সেলিম খান কারাগারেই আছেন।

অর্থ আত্মসাতের নর্থ সাউথের চার ট্রাস্টিকে পুলিশে সোপর্দ : নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের জমি কেনা বাবদ অতিরিক্ত ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয় দেখিয়ে তা আত্মসাতের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ৫ মে মামলা করে দুদক। ছয়জনের মধ্যে ওই চারজন আগাম জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন।

এর ওপর ২২ মে শুনানি শেষে আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করে চার ট্রাস্টিকে পুলিশে সোপর্দ করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে হেফাজতে নেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই চারজনকে সংশ্লিষ্ট আদালতে হাজির করতে শাহবাগ থানাপুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়। চারজন হলেন রেহানা রহমান, এমএ কাশেম, মোহাম্মদ শাহজাহান ও বেনজীর আহমেদ। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]