যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে অনুষ্ঠিত কথিত ৩৬তম ফোবানা সম্মেলনে জড়িত ৮ বাংলাদেশিকে খুঁজছে মার্কিন ব্যবসায়ী ম্যারিয়ট আবাসিক হোটেল কর্তৃপক্ষ। চলতি বছর সেপ্টেম্বরে লস অ্যাঞ্জেলেসের ম্যারিয়ট বারব্যাঙ্ক হোটেল ও মিলনায়তন ভাড়া নিয়ে তিনদিনব্যাপী কথিত ফোবানা সম্মেলনের নামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে প্রায় ২০ হাজার ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২০ লাখ টাকা)-এর ভুয়া চেক প্রদান করে চম্পট দেন কথিত ৩৬তম যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশনস ইন নর্থ আমেরিকা (ফোবানা) সম্মেলনের আয়োজক ৮ বাংলাদেশি। গত চার মাসেও তাদের আর কোন হদিস না পেয়ে আন্তর্জাতিক ঋণ সংগ্রাহক সংস্থার মাধ্যমে তাদের পাওনা টাকা আদায়ের চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে। এ খবর জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস।
লস অ্যাঞ্জেলেসের ম্যারিয়ট বারব্যাঙ্ক হোটেল কর্তৃপক্ষ যে ৮ জন বাংলদেশিকে খুঁজছেন তারা হলেন-কথিত ৩৬তম ফোবানা সম্মেলনের আহবায়ক আবুল ইব্রাহিম, সদস্য সচিব সৈয়দ এম হোসেন বাবু, সম্মেলনে সভাপতি জাহিদ হোসেন পিন্টু, প্রধান সমন্বয়কারী কাজী মশহুরুল হুদা, ৩৬তম ফোবানা সম্মেলনের স্বঘোষিত চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান ও নির্বাহী সদস্য ড. রফিক খান, হোষ্ট কমিটির কোষাধ্যক্ষ দেওয়ান জামির এবং সেন্ট্রাল কমিটির কোষাধ্যক্ষ এসএম লতিফুর রেজা তুষার। এছাড়াও উক্ত ফোবানা সম্মেলনের নেপথ্য সমন্বয়কারী ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত ৩৫তম ফোবানার সাবেক চেয়ারম্যান জাকারিয়া চৌধুরী, আহবায়ক জি আই রাসেল, সদস্য সচিব শিব্বির আহমেদ ও বেদারুল ইসলাম বাবলাকে খুঁজছেন ম্যারিয়ট বারব্যাঙ্ক হোটেল কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে মূল ফোবানা থেকে বহিস্কৃত হয়ে উক্ত ব্যক্তিরা চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেসে অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশনস ইন নর্থ আমেরিকা (ফোবানা)’র নাম ব্যবহার করে লস অ্যাঞ্জেলেসের ম্যারিয়ট বারব্যাঙ্ক হোটেলর মিলনায়তনে যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করেছিল তার ভাড়া বাবদ ১৮ হাজার ৯ শত ৪৮ ডলার এবং অন্যান্য খরচ বাবদ আরও ৯১৪ ডলারসহ মোট ১৯ হাজার ৮ শত ৬২ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২০ লাখ টাকা) পাওনা অর্থ পরিশোধের জন্য দু’টি ভুয়া চেক প্রদান করেন। হোটেল কর্তৃপক্ষ ব্যাংকে চেক জমা দিয়ে গেলে বিষয়টি তাদের কাছে ধরা পড়ে। গত চার মাসেও পাওনা টাকা আদায় করতে না পেরে বাধ্য হয়ে চেক প্রদানকারীদের খুঁজতে থাকেন। শেষে আন্তর্জাতিক ঋণ সংগ্রাহক সংস্থার কাছে স্মরণাপন্ন হন এবং সেই সংস্থা নিয়মিত অর্থ আদায়ের তাগিদ দিচ্ছেন।
লস অ্যাঞ্জেলেসের ম্যারিয়ট বারব্যাঙ্ক হোটেল কর্তৃপক্ষ মূল ফোবানার ওয়েবসাইট ঘেটে প্রকৃত ফোবানার সন্ধান পান এবং তাদের সাথে যোগাযোগ করেন। কিন্তু বকেয়া অর্থ আদায়ের জন্য মূল ফোবানা কর্তৃপক্ষ কোন দায় দায়িত্ব নেবেন না বলে হোটেল কর্তৃপক্ষকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।
জানা যায়, ফোবানার সংবিধান পরিপন্থী কর্মকান্ডে জড়িত থাকায় মূল কমিটি থেকে বহিস্কৃত হয়ে চলতি বছর সেপ্টেম্বর ২-৪ (ফোবানা)’র নাম ব্যবহার করে লস অ্যাঞ্জেলেসের ম্যারিয়ট বারব্যাঙ্ক হোটেল মিলনায়তনে তিনদিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন আহবায়ক আবুল ইব্রাহিম, সদস্য সচিব সৈয়দ এম হোসেন বাবু, সম্মেলনে সভাপতি জাহিদ হোসেন পিন্টু, প্রধান সমন্বয়কারী কাজী মশহুরুল হুদা, ৩৬তম ফোবানা সম্মেলনের স্বঘোষিত চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান ও নির্বাহী সদস্য ড. রফিক খান, হোষ্ট কমিটির কোষাধ্যক্ষ দেওয়ান জামির এবং সেন্ট্রাল কমিটির কোষাধ্যক্ষ এসএম লতিফুর রেজা তুষার। এছাড়াও উক্ত ফোবানা সম্মেলনের নেপথ্য সমন্বয়কারী ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত ৩৫তম ফোবানার সাবেক চেয়ারম্যান জাকারিয়া চৌধুরী, আহবায়ক জি আই রাসেল, সদস্য সচিব শিব্বির আহমেদ ও বেদারুল ইসলাম বাবলা।
এ বিষয়টি নিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস লস অ্যাঞ্জেলেসে অনুষ্ঠিত ফোবানা সম্মেলনে সংশ্লিষ্ট সকলের সাথেই পৃথক পৃথকভাবে যোগাযোগ করে বিস্তারিত জানতে চান। শুধুমাত্র উক্ত সম্মেলনে সভাপতি জাহিদ হোসেন পিন্টু জানিয়েছেন, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত লস অ্যাঞ্জেলেস ফোবানা কনভেনশনে হোস্ট কমিটি আর্থিক ঘাটতির সাথে শেষ হয়েছিল। যাই হোক কেন্দ্রীয় এবং হোস্ট কমিটি উভয়ই ক্ষতির বিষয়ে আলোচনা করছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিষয়টি সমাধান করার জন্য তাদের ঋণী সত্তার সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এদিকে, কথিত ৩৬তম ফোবানা সম্মেলনের আয়োজকবৃন্দ গত ২ সেপ্টেম্বর সম্মেলন শুরুর দিন ১০ হাজার ডলার এবং সেপ্টেম্বর ৬ তারিখে ৮ হাজার ৯ শত ৪৮ ডলারের দু’টি চেক প্রদান করেন ম্যারিয়ট বারব্যাঙ্ক হোটেল কর্তৃপক্ষের কাছে। ব্যাংকে পর্যাপ্ত পরিমান তহবিল না থাকায় ব্যাংক থেকে চেক দু’টি ফেরত পাঠানো হয়।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রাণের মিলন মেলা ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোশিয়েশন্স ইন নর্থ আমেরিকা (ফোবানা)-কে নিয়ে নতুন করে ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেন ৩৬তম ফোবানা সম্মেলনের স্বঘোষিত চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান, নির্বাহী সদস্য ড. রফিক খান, আহবায়ক আবুল ইব্রাহিম, সদস্য সচিব সৈয়দ এম হোসেন বাবু, সম্মেলনে সভাপতি জাহিদ হোসেন পিন্টু, প্রধান সমন্বয়কারী কাজী মশহুরুল হুদা, নেপথ্য সমন্বয়কারী ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত ৩৫তম ফোবানার সাবেক চেয়ারম্যান জাকারিয়া চৌধুরী, আহবায়ক জি আই রাসেল, সদস্য সচিব শিব্বির আহমেদ ও বেদারুল ইসলাম বাবলা। অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অপরাধে বহিস্কৃত এবং ফোবানার নির্বাচনে পরাজিত হয়ে তারা একটি ভূয়া আহবায়ক কমিটি গঠন করে গত ২-৪ তারিখে শিকাগোতে অনুষ্ঠিত ৩৬তম ফোবানা সম্মেলনকে পন্ড করার জন্য নানা কুৎসা রটিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের মাঝে বিভ্রান্ত ছড়ান বলে অভিযোগ রয়েছে।
ফোবানার কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় অগ্রহণযোগ্য আচরণের জন্য সভা থেকে বহিস্কৃত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অপরাধে বহিস্কৃত এবং ফোবানার নির্বাচনে পরাজিত কিছু ব্যক্তি একটি ভূয়া আহবায়ক কমিটিও গঠন করেন যা সম্পূর্ণভাবে অবৈধ ও সংবিধান পরিপন্থী বলে দাবি করেন ফোবানা কর্তৃপক্ষ।
আতিকুর রহমান আতিক এবং রফিক খান যথাক্রমে আহবায়ক কমিটির চেয়ারম্যান ও সেক্রেটারি হিসেবে ঘোষনা করেন। আতিক ফোবানার একজন সাবেক সদস্য ছিলেন। তাকে অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অপরাধে বহিস্কৃত করা হয়েছিল। তিনি বেশ কয়েকবার ফোবানা সম্মেলনের দায়িত্ব পালন করলেও ফোবানা পরিচালনা কমিটির সদস্যদের কাছে তিনিই সবচেয়ে বিতর্কিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত।
রফিক খান সেক্রেটারি হিসেবে একটি নির্বাচনে বিব্রতকর এবং লজ্জাজনকভাবে পরাজিত হন। এরপর তিনি ফোবানায় কোনো ভবিষ্যৎ খুঁজে পাননি। ফোবানার অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে সংবিধান এবং উপবিধি অননুমোদিত পরিবর্তন করে তিনি নিজেকে ফোবানা-তে সবচেয়ে ধূর্ত ব্যক্তি হিসাবে বিবেচনা করেছিলেন। তিনি ফোবানার অনুমোদন ছাড়াই ফোবানা ডিসি কর্পোরেট অফিসে পরিচালকদের পরিবর্তন করেছিলেন, যা একটি সাইবার অপরাধ হিসাবে বিবেচিত হয়। কবির কিরণ আহবায়ক কমিটির যুগ্ম সম্পাদক। তিনি মাত্র ৭ ভোট পেয়েছিলেন, ফোবানার গত নির্বাচনে কোষাধ্যক্ষ পদে ডা. মানিকের বিরুদ্ধে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন। মানিক পেয়েছিলেন ৩৮ ভোট।
রফিক খান দম্পতি মিলে একটি সংগঠন পরিচালনা করেন। বৈধ ফোবানায় তার কোন ভবিষ্যৎ নেই। কবির কিরণ একটি বৈধ নির্বাচনে তার লজ্জাজনক পরাজয়ের পর তার আত্মসম্মান বাড়ানোর জন্য ভূয়া আহবায়ক কমিটিতে যোগদানের জরুরি প্রয়োজন অনুভব করেন। আহবায়ক কমিটির তথাকথিত ভাইস-চেয়ার জাহিদ হোসেন পিন্টু একইভাবে ফোবানা নির্বাচনে কার্যনির্বাহী সদস্য পদে পরাজিত হন। একাধিক ফোবানার উপবিধি এবং সংবিধান লঙ্ঘনের জন্য তাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। লস অ্যাঞ্জেলেসে তার সম্মেলন চলাকালীন অনেক জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক শিল্পীদের সাথে প্রতারণার ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। তার লস অ্যাঞ্জেলেসে কনভেনশনের ব্যর্থতা এবং তহবিলের অপব্যবহার নিয়ে সেই সময় বাংলাদেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক সংবাদ প্রচার হয়। আহবায়ক কমিটির অন্য একজন নির্বাচিত সদস্য বেদারুল ইসলাম বাবলা ২০১৫ সালে তার সম্মেলনে ব্যাপকহারে আদম ব্যবসার চালিয়ে তার শ্যালক শাহিনসহ ফোবানার নামে হাজার হাজার ডলার সংগ্রহ করে করেছেন। তিনিও নির্বাচনে পরাজিত হন এবং নির্বাচনে একজন অসামান্য সদস্য হিসাবে সর্বনিম্ন সংখ্যক ভোট পেয়েছিলেন কিন্তু শুধুমাত্র সমস্ত প্রাক্তন চেয়ারম্যানদের অনুগ্রহে তিনি এই সময়ে মেয়াদে জয়লাভ করতে পেরেছিলেন।
তথাকথিত আহবায়ক কমিটির অন্য এক সদস্য জাকারিয়া চৌধুরী কমিটির একজন স্বঘোষিত ষড়যন্ত্রকারী এবং মাস্টারমাইন্ড। প্রাক্তন চেয়ারম্যান হিসাবে তিনি উপ-আইন এবং সংবিধানের জিরো টলারেন্স নীতি লঙ্ঘন করেছেন। ফলে চেয়ারম্যান থাকাকালে তাকে অযোগ্য ও নিরক্ষর ঘোষণা ঘোষনা করা হয়। তার বিদ্বেষমূলক কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে বেআইনিভাবে এবং একতরফাভাবে ফোবানা কে বহিষ্কার করার জন্য ভাইস চেয়ারম্যান এবং নির্বাহী সেক্রেটারি যদিও তা করার কোনো ক্ষমতা নেই। ফোবানা থেকে ঘুষ দিয়ে দেশের টেলিভিশন এবং সংবাদপত্রের সাক্ষাৎকার প্রদান করেন। তার নিজের জন্য প্রচার করা ছাড়া আর কোন বিপণন যোগ্যতা নেই। তদুপরি তিনি জি আই রাসেল এবং শিব্বির আহমদের অসম্মানজনক কর্মের পরামর্শদাতা এবং মাস্টারমাইন্ড ছিলেন। জাকারিয়া চৌধুরী ফোবানা শিল্পী এবং পৃষ্ঠপোষকদের সাথেও প্রতারণা করেছেন। এটা আশ্চর্যের কিছু নয় যে, উপরোক্ত দুই ব্যক্তি জি আই রাসেল এবং শিব্বির আহমেদ এই তথাকথিত আহবায়ক কমিটিতে রয়েছেন। যেহেতু তাদের বেআইনি কাজের কারণে তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে এবং দ্রুত ফোবানা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘনের ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। তারা গত ফোবানা সম্মেলনে হাজার হাজার ডলার হাতিয়ে আত্মসাত করেছেন এবং ফোবানা সদস্যদের সাথে প্রতারণা করেছেন। তথাকথিত আহবায়ক কমিটির অধীনে তালিকাভুক্ত বেশ কিছু ব্যক্তি এবং সংস্থা রয়েছে, যারা এমনকি জানেন না যে তারা এই ভুয়া আহবায়ক কমিটিতে রয়েছেন। সবচেয়ে বড় কথা এই বেআইনিভাবে গঠিত আহবায়ক কমিটি বেশিরভাগই এক-ব্যক্তি সংস্থা, স্ত্রী-স্বামী সংস্থা, বা ব্যবসায়িক অংশীদার সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত এবং বেশিরভাগেরই ফোবানা সদস্য হওয়ার যোগ্যতাও নেই।