রসিকতা করে কাউকে কষ্ট দেওয়া যাবে কি?


ধর্ম ডেস্ক: , আপডেট করা হয়েছে : 25-12-2022

রসিকতা করে কাউকে কষ্ট দেওয়া যাবে কি?

হাস্যরস, খোশগল্প ও রসিকতা হবে মিথ্যা ও ধোঁকা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। মানবজীবনের সুখকর উপাদান খোশগল্প, হাস্যরস, কৌতুক। এ ব্যাপারে অতিরিক্ত করা যেমন ক্ষতিকর তেমনি হাস্যরসবিহীন জীবন বেমানান। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও হাস্যরস ও কৌতুক করতেন। কেননা একজন মহান ব্যক্তির পক্ষ থেকে ছোটদের সঙ্গে হাস্যরসের আচরণ ও কৌতুকের মাধ্যমে মনোরঞ্জন তাদের সম্মান বৃদ্ধির কারণ হয়ে ওঠে। কিন্তু রসিকতার নামে কাউকে কি কষ্ট দেওয়া যাবে?

চিত্তবিনোদনের জন্য খোশগল্প, হাস্যরস, কৌতুক করায় কোনো অন্যায় নেই; যদি সে রসিকতা বা হাস্যরসে গুনাহ বা মিথ্যা না থাকে। আবার রসিকতায় যদি কেউ শারীরিক বা মানসিক কষ্ট পায় আর গুনাহ বা মিথ্যার সংস্পর্শ থাকে তবে এমন হাস্যরস কৌতুক করা যাবে না। রসিকতার নামে এমন কোনো কথা বা কাজ করা যাবে না; যাতে মানুষ শারীরিক বা মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়।

রসিকতায় যা করা যাবে না

অনেকেই রসিকতার নামে শরীরে আঘাত করেন। এ ধরনের রসিকতা ঠিক নয়। এগুলো পরিহার করা জরুরি। যেমন- কেউ হাত বা চিকন কঞ্চি দ্বারা কারো মাথায় আঘাত করে বা চুল ধরে টান দিয়ে কিংবা শরীরে চিমটি কেটে মজা করলো আর জিজ্ঞাসা করলো- বন্ধু কেমন আছিস? যে ব্যক্তি এগুলো করলো সে হয়তো মজা বা আনন্দ অনুভব করলো কিন্তু যার সঙ্গে এ আচরণ করা হলো সেতো কষ্ট পেল। আর তা ঐ কথার মতো-

‘এ যেন তোমাদের খেলা আমাদের মরণ’-এরই প্রতিরূপ হয়ে যায়।

বিশেষ করে

ছোট ছোট শিশু-কিশোরদের সঙ্গে এজাতীয় রসিকতা নির্মম নিষ্ঠুরতা ছাড়া কিছুই নয়। মনে রাখতে হবে এটা রসিকতা নয়। রসিকতার নামে জুলুম।

বিরক্তিকর রসিকতা

সমাজে এখনো কিছু সহজ ও সরল প্রকৃতির লোক রয়েছে; যাদের নির্দিষ্ট কোনো কথা বললেই তারা ক্ষেপে যান। প্রথমত তাদের এ ক্ষেপানো কথাগুলো একবার বা দু'বার বললে সাধারণত তাদের মাঝে কোনো বিরক্তি আসে না।

কিন্তু যখনই একাধিকবার বলা হয়, তখনি তারা ক্ষেপে যায়। এ রকম রসিকতা একেবারেই নির্বুদ্ধিতার শামিল। যা কোনো ভাবেই কাম্য নয়। এটি রসিকতা নয় বরং এ রসিকতায় উত্যক্ত করার উদ্দেশ্যেই করা হয়। এ রকমের রসিকতা অনেক সময় মারাত্মক ধরণের বাড়াবাড়ি ও ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অথচ এটা রসিকতার নামে চরম বাড়াবাড়ি।

তাই অহেতুক রসিকতার নামে অন্যকে বিরক্ত করা কোনো সুস্থ মানসিকতার লক্ষণ নয়। কাজেই রসিকতার নামে কাউকে কষ্ট দেয়া অনুচিত এবং তা পরিত্যাজ্য বিষয়। 

মনে রাখতে হবে

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এদিকে ইঙ্গিত করেই বলেছেন ‘তোমার ভাইয়ের সঙ্গে ঝগড়া করো না এবং ঠাট্টা-বিদ্রুপ করো না। অর্থাৎ যে হাসি রসিকতা অন্তরে কঠোরতা সৃষ্টি করে অথবা আল্লাহর ধ্যান থেকে মানুষকে গাফেল করে বা কারো কষ্টের কারণ হয় কিংবা কারো গাম্ভীর্য ও মর্যাদা নষ্ট করে এ ধরনের হাসি-তামাশা নিষেধ। পক্ষান্তরে যে হাস্যরস মনে প্রফুল্লতা আনে এবং যে রসিকতা ইবাদত-বন্দেগি ও দ্বীনী কাজে দেহ-মনকে সজিব করা এবং দৈহিক ও মানসিক অবসাদ ও ক্লান্তি দূর করার উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে এবং তা নির্দোষ হয় তা শুধু জায়েযই নয় বরং মুস্তাহাব।

নবিজির রসিকতা

হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো কখনো তাকে (কৌতুক করে) ‘দুই কানওয়ালা’ বলে ডাকতেন। ’ (শামায়েলে তিরমিজি ২৩৬)

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে দুই কানওয়ালা বলে সম্বোধন করেছেন এতে কোনো মিথ্যা বা ভুল ছিলো না। বিশেষ কোনো কারণে হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে দুই কানওয়ালা বলেছেন। যেমন তার দুই কান তুলনামূলক বড় ছিল বা তার শ্রবণশক্তি প্রবল ছিল। তিনি দূরের কথাও অনায়াসে শুনতে পেতেন।

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছোট শিশুদের সঙ্গেও হাসি-মজা করতেন। তাদের আনন্দ দিতেন। হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের সঙ্গে অবাধে মিশতেন। এমনকি তিনি আমার ছোট ভাইকে কৌতুক করে বলতেন- ‘আবু উমায়ের কি করে নুগাইর। ’ অর্থাৎ তোমার নুগাইর পাখিটার কি অবস্থা? আবু উমায়ের এর খেলার পাখিটা মারা গেলে সে অনেক কষ্ট পায়। তাই তার মনোরঞ্জনের জন্য নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে সান্তনা দেওয়ার জন্য পাখিটির অবস্থার কথা জিজ্ঞাসা করেন। এভাবে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সঙ্গে কথা বলার দ্বারা তার দুঃখ দূর হয়, সে আনন্দিত হয়।

রসিকতায় আদব

রসিকতা ছোট-বড় সবার সঙ্গেই হতে পারে। সে ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে, ছোটদের রসিকতা যেন বড়দের সঙ্গে আদবের গণ্ডি অতিক্রম না করে। আবার বড়দের রসিকতায়ও যেন ছোটদের প্রতি আদর-স্নেহের আবহ থাকে।

এক সাহাবির ঘটনা

একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি তাঁবুর ভেতর অবস্থান করছিলেন। সেই সাহাবি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চাইলেন। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে ভেতরে প্রবেশ করতে বললেন; কিন্তু তাঁবুটি ছিল বেশ ছোট। সাহাবি রসিকতা করে বললেন, হে আল্লাহ রাসুল! (তাবুতে) আমার পুরো শরীরটাই প্রবেশ করাব নাকি আংশিক? নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, পুরোটাই।’ (আবু দাউদ)

হাস্যরস, খোশগল্প ও রসিকতায় ইসলামি দিক-নির্দেশনাগুলো মেনে চলা আবশ্যক। রসিকতা খোশগল্প ও কৌতুক যেন অভদ্র ও অযাচিত আচরণ প্রকাশ না পায়। রসিকতার নামে যেন কেউ শারীরিক বা মানসিকভাবে আঘাত না পায় সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি।

খোশগল্পে, রস আড্ডায় রসিকতাকে সব রকম ক্ষতি থেকে মুক্ত রাখার মাধ্যমে শিক্ষণীয় করে তোলার জন্য স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনায় রেখে ভাষা ও বিষয়বস্তু নির্ধারণে সতর্কতা অবলম্বন করাও আবশ্যক।

খোশগল্প ও রসিকতার বিষয়ে হজরত সাঈদ ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক তাঁর সন্তানকে দেওয়া উপদেশটি শিক্ষণীয় হতে পারে। তাহলো-

হে বৎস! রসিকতায় পরিমিতিবোধের পরিচয় দেবে। এতে বাড়াবাড়ি ভাবমূর্তি নষ্ট করে ও মূর্খদের অন্তরে ধৃষ্টতার জন্ম দেয়। আবার এর অভাবে প্রিয়জনেরা তোমার থেকে দূরে সরে যাবে এবং সংগী-সাথীরা তোমাকে নিয়ে অস্বস্তি বোধ করবে। এমন যেন না হয়।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রসিকতা, কৌতুক ও খোশগল্পে মিথ্যাচার ও অনৈসলামিক বিষয়সহ কাউকে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]