সামরিক ইতিহাসে একটি মাত্র অস্ত্র পুরো যুগের প্রতীক হয়ে উঠতে পারে। যেমন মনে করা হয় ইংরেজ তীরন্দাজদের দ্বারা ব্যবহৃত লংবো মধ্যযুগে এবং ভারী সাঁজোয়া ট্যাঙ্ক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রতীক।
তবে সামরিক অস্ত্রের দিক থেকে প্রতিটি দেশই এখন অনেক উন্নত হয়ে উঠেছে। তার মধ্যে নবতম সংযোজন ড্রোন। প্রযুক্তির ব্যাপক বিস্তার এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উদ্ভাবন ড্রোন যুদ্ধের ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। তবে ড্রোনের সামরিক মর্যাদা তখনই বৃদ্ধি পায় যখন সেগুলি ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সজ্জিত থাকে।
আধুনিক সময়ে ব়ড় বড় সমস্ত যুদ্ধেই ড্রোনের ব্যবহার লক্ষ করা গিয়েছে। ড্রোন একটি মানববিহীন যুদ্ধবিমান, যা আধুনিক অস্ত্র এবং ক্ষেপণাস্ত্র দ্বারা সুসজ্জিত থাকে। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি স্বয়ংক্রিয় ভাবে লক্ষ্যবস্তুর উপর আঘাত হানতে পারদর্শী। এমনকি ড্রোনের আঘাতে যুদ্ধের ট্যাঙ্কও নিমিষে ভেঙে গুঁড়িয়ে যেতে পারে।
আধুনিক ড্রোনের সামনের ছুঁচলো অংশে একটি সেন্সর যুক্ত ক্যামেরা বসানো থাকে যা দিয়ে লক্ষ্যবস্তুর উপর নজরদারি চালানো হয়। মূলত স্থিতিশীলতার জন্য এ গুলির শেষ ভাগ ভি-আকৃতির হয়।
রাজশাহীর সময় / এম জি
এই ড্রোনগুলিতে মূলত জিপিএস বা লেজার পরিচালিত ক্ষেপণাস্ত্র এবং বোমা যুক্ত থাকে। ক্যামেরার মাধ্যমে লক্ষ্যবস্তুর গতিবিধির উপর নজর রেখে এই ক্ষেপণাস্ত্র এবং বোমাগুলি নিক্ষেপ করা হয়।
ড্রোনের দৈর্ঘ্য সাধারণত ১১ মিটার বা ৩৬ ফুট-এর আশেপাশে থাকে। উচ্চতা হয় ৩.৫-৪ মিটার।
ড্রোন উচ্চগতি সম্পন্ন যুদ্ধবিমান। একটি রিপার ড্রোন প্রতি ঘণ্টায় সর্বাধিক ৪৬৩ কিলোমিটার যাত্রাপথ অতিক্রম করতে পারে।
সামরিক ড্রোনের আদর্শ উদাহরণ ‘এমকিউ-১ প্রিডেটর’। এটি আমেরিকার একটি সামরিক ড্রোন। আমেরিকার সঙ্গে আফগানিস্তান, ইরাক যুদ্ধে এটি অন্যতম প্রধান অস্ত্র হয়ে উঠেছিল।
ড্রোনের উত্তরসূরি, রিপার বিশেষ ভাবে তৈরি করা হয়েছে। এটি ড্রোনের তুলনায় বড় এবং ভারী ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে সক্ষম। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে বাগদাদ বিমানবন্দরের বাইরে ইরানি জেনারেল কাসেম সোলেমানিকে হত্যা করার জন্য রিপার ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছিল বলে মনে করা হয়।
আধুনিক সময়ের বিভিন্ন রক্তাক্ত যুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করেছে ড্রোন। সাম্প্রতিক কালে সরকার বিরোধী টাইগ্রে পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট (টিপিএলএফ)-এর সদস্যদের আক্রমণের মুখে থাকা আদ্দিস আবাবা সরকারের অবস্থানকে শক্তিশালী করতে ড্রোন হামলার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
ইথিওপিয়ান সরকারও তুরস্ক এবং ইরান থেকে সশস্ত্র ড্রোন কিনেছে। সংযুক্ত আরব আমিরশাহি একই ভাবে লিবিয়ার গৃহযুদ্ধে জেনারেল খলিফা হাফতারকে ড্রোন সরবরাহ করেছিল বলে মনে করা হয়।
অনেক ক্ষেত্রে সশস্ত্র ড্রোনের একটি সিদ্ধান্তমূলক প্রভাবও রয়েছে। ত্রিপোলিতে লিবিয়ার আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত সরকার কায়েম রাখতে ড্রোন-এর ভূমিকা আছে বলে মনে করা হয়।
তবে ড্রোন হামলা প্রায়ই জটিল আইনি ও নৈতিক মতবিরোধ তৈরি করে। অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তির মাধ্যমে ড্রোন ব্যবহার বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে সাফল্য আসেনি কোনও বারই।
আগে মূলত আমেরিকা এবং ইজরায়েল যুদ্ধক্ষেত্রে ড্রোন ব্যবহার করত। আমেরিকা এবং ইজরায়েল ছাড়াও আরও অনেক দেশ সামরিক ড্রোন ব্যবহার শুরু করেছে। সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান-সহ বিভিন্ন যুদ্ধে এখন মানববিহীন ড্রোন ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। বর্তমানে একশোটিরও বেশি দেশ এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীর কাছে ড্রোন রয়েছে। অনেক প্রতিরক্ষা সংস্থার কাছেও সশস্ত্র ড্রোন ব্যবহারের ছাড়পত্র রয়েছে।