জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে প্রথমবারের মত 'রোহিঙ্গা সমস্যা' নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ


ইমা এলিস/ বাংলা প্রেস, নিউ ইয়র্ক: , আপডেট করা হয়েছে : 22-12-2022

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে প্রথমবারের মত 'রোহিঙ্গা সমস্যা' নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ

প্রথমবারের মত 'মিয়ানমারের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে।

স্থানীয় সময় বুধবার (২১ ডিসেন্বর)জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভায় মিয়ানমারের বিদ্যমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, জরুরি অবস্থা, বন্দি মুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া হয়। সিদ্ধান্তটির উপর ভোট আহবান করা হলে তা ১২-০ ভোটে অনুমোদিত হয়। ভোটাভুটি পর্বে এই প্রস্তাবনার বিপক্ষে কোন সদস্য ভোট অথবা ভেটো প্রদান করেনি। চীন, ভারত ও রাশিয়া ভোটদানে বিরত ছিল। এ খবর জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস।

ভোটদান শেষে সংযুক্ত আরব আমিরাত, ফ্রান্স, মেক্সিকো, গ্যাবন এবং নরওয়ে তাদের বক্তব্যে সিদ্ধান্তটিতে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি অন্তর্ভুক্তি করণের প্রশংসা করে এই সমস্যা সমাধানে নিরাপত্তা পরিষদের জোরালো ভূমিকার দাবি জানান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার বক্তব্যে সিদ্ধান্তটি উত্থাপন করার জন্য যুক্তরাজ্যকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে। বলা বাহুল্য, এই সিদ্ধান্তটি রোহিঙ্গা বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থানের প্রতি জাতিসংঘের সবচেয়ে ক্ষমতাধর অঙ্গটির শক্তিশালি সমর্থনেরই বহিঃপ্রকাশ। রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটসহ অন্যান্য বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের প্রেক্ষাপটে গৃহীত সিদ্ধান্তটি রোহিঙ্গা সংকটের প্রতি বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আরো সুসংহত করতে সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়।

মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের অমানবিক নির্যাতনের স্বীকার হয়ে ২০১৭ সালে ৮ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাসহ এ পর্যন্ত ১.২ মিলিয়নের অধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক কারণে তাদের অস্থায়ীভাবে বাংলাদেশে আশ্রয় প্রদান করেন এবং শুরু থেকেই তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে নিরাপদ, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রতাবসনের নিমিত্ত্ব বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছে জোরালো দাবি উত্থাপন করে আসছেন। এই প্রস্তাবনা অনুমোদিত হওয়ার ফলে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের বিষয়টি নিরাপত্তা পরিষদের নিয়মিত কার্যকলাপের অংশ হয়ে গেল। একই সাথে এটি রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুত ও স্থায়ী সমাধানে বাংলাদেশের এতদসংক্রান্ত অব্যাহত প্রচেষ্টাকে আরো শক্তিশালি ও ত্বরান্বিত করবে।

সিদ্ধান্তটিতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয়, নিরাপত্তা ও মানবিক সহযোগিতা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করা হয়। পরিষদ রোহিঙ্গা সঙ্কটের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে তাদের নিরাপদ, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবসনের নিমিত্ত্ব অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে আহবান জানায়। মিয়ানমারের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা যে রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ বাসভূমি মিয়ানমারে প্রত্যাবসনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলবে, সে বিষয়টি দৃঢ়ভাবে তুলে ধরা হয়। এছাড়া, এ সমস্যার সমাধানে আসিয়ানের সদস্য রাষ্ট্রসমূহের ২০২১ সালে গৃহীত পাঁচ দফা ঐক্যমত্যের দ্রুত ও পূর্ণবাস্তবায়নের উপর গুরুত্বারোপ করা হয় এবং এর বাস্তবায়নে জাতিসংঘের কোন সহযোগিতার প্রয়োজন হবে কিনা সে বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব এবং মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূতকে আগামি ১৫ মার্চ ২০২৩ তারিখের মধ্যে নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রতিবেদন পেশ করার জন্য অনুরোধ করা হয়।

জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন সিদ্ধান্তটিতে বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে বলা শা প্রকাশ করেন। বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত নিরাপত্তা পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ স্থায়ী ও অস্থায়ী বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্রের সাথে প্রয়োজনীয় দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন এবং বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো যাতে রেজুল্যুশনে অন্তর্ভুক্ত হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

উল্লেখ্য, রেজুল্যুশনটির পেন হোল্ডার (মূল স্পন্সর) পরিষদের অন্যতম স্থায়ী সদস্য যুক্তরাজ্য। বিগত তিনমাস ধরে রেজুল্যুশনটির নেগোশিয়েশন শেষে আজ এটি নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত হয়। নিরাপত্তা পরিষদের ডিসেম্বর ২০২২ এর সভাপতি ভারত এবং তাদের সভাপতি থাকাকালীন সময়েই রেজুল্যুশনটি নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত  হল। এর ফলে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বহুপাক্ষিক কূটনীতিতে এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টায় সফল হল বাংলাদেশ।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]