ওয়াশিংটন ডিসি'র বাংলাদেশ দূতাবাসে বিজয় দিবস উদযাপন


ইমা এলিস/ বাংলা প্রেস, নিউ ইয়র্ক , আপডেট করা হয়েছে : 18-12-2022

ওয়াশিংটন ডিসি'র বাংলাদেশ দূতাবাসে বিজয় দিবস উদযাপন

যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি, দক্ষিণ ও ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরো আফরিন আক্তার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে একটি সত্যিকার গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার হিসেবে দেখছে এবং আগামী ৫০ বছরে দু'দেশের মধ্যে আরও শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে উঠবে বলে আশা করেন তিনি। এ খবর জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস।
স্থানীয় সময় শুক্রবার ( ১৬ ডিসেম্বর) ওয়াশিংটন ডিসি'র বাংলাদেশ দূতাবাসে অনুষ্ঠিত ৫২তম বিজয় দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আফরিন আক্তার আরও বলেন গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে দুদেশের জনগণ, সরকার ও অর্থনীতির মধ্যে, অসাধারণ অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। আফরিন আক্তার দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর বলেও উল্লেখ করেন।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করে যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি বলেন, মাত্র কয়েক দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে কৃষি ভিত্তিক সমাজ থেকে অর্থনৈতিক শক্তিতে সম্প্রসারিত হয়েছে।
তিনি বলেন এটি সত্যিই গর্ব করার মতো গল্প যে বাংলাদেশ লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্যের কষাঘাত থেকে বের করে এনেছে এবং প্রজন্মের মধ্যে মধ্যম আয়ের মর্যাদা অর্জন করবে, যা সত্যিই অসাধারণ।
অর্থনৈতিক সহযোগিতার বাইরেও আফরিন আক্তার কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সরবরাহ এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ অংশীদারিত্বের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বিপুল সংখ্যক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
বাঙালি জাতির দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার জন্য যেসকল বীর মুক্তিযোদ্ধা লড়াই এবং সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করেছিলেন তাদেরকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা।
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান কর্তৃক সকালে দূতাবাস প্রাঙ্গণে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিনের প্রথম পর্বের কর্মসূচি শুরু হয়। এ সময় দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
পরে রাষ্ট্রদূত দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে দূতাবাসের বঙ্গবন্ধু কর্নারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আবক্ষ মূর্তিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে জাতির পিতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আবদুল মোমেন, এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহরিয়ার আলম কর্তৃক প্রদত্ত বাণী পাঠ করে শোনান ডেপুটি চিফ অব মিশন ফেরদৌসী শাহরিয়ার, মিনিস্টার (কর্মাস) মোঃ সেলিম রেজা, কাউন্সেলর (পাবলিক ডিপ্লোমেসি) আরিফা রহমান রুমা এবং কাউন্সেলর (পলিটিক্যাল-১) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান।
পরে জাতির অব্যাহত শান্তি, অগ্রগতি ও উন্নয়নের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে সকল শহিদ ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে কর্মসূচির দ্বিতীয় পর্বে দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান, এবং মিস আফরিন আক্তার, ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরো, ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট, আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। রাষ্ট্রদূত ইমরান তার স্বাগত বক্তব্যে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশবাসী ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান।
তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি এবং স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। রাষ্ট্রদূত ৩০ লাখ শহিদ এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় নির্যাতিত দুই লাখ নারীর সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
মহান বিজয় দিবসকে বাঙালি জাতির জন্য একটি গৌরবময় দিন বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন ১৯৭১ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ২৩ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রাম ও নয় মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের পর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে।
রাষ্ট্রদূত ইমরান জাতির পিতা ও ৩০ লাখ শহিদের স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়তে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করার আহ্বান জানান।
বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় দিনের কর্মসূচি। অনুষ্ঠানে দূতাবাসের কর্মকর্তা ও তাদের সহধর্মিণীরা দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন এবং স্টেট ডিপার্টমেন্টের অতিথি জেমস ব্রেনান ফ্লানিগান প্রখ্যাত কবি শামসুর রাহমানের একটি কবিতা বাংলায় আবৃত্তি করেন। বাংলাদেশী-আমেরিকান সাংস্কৃতিক সংগঠন ধ্রুপদী’র শিল্পীরা দেশাত্মবোধক গানের সাথে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন।
দিনব্যাপী কর্মসূচির দুই পর্বের অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন কাউন্সেলর শামীমা ইয়াসমিন স্মৃতি ও ফার্স্ট সেক্রেটারী মোঃ আতাউর রহমান। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দূতাবাসে একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়।
বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও উর্ধ্বতন কুটনৈতিকবৃন্দ, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী এবং দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবারের সদস্যরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]