কৃচ্ছ্রসাধনের পরিপত্র জারি, সাশ্রয় সোয়া লাখ কোটি টাকা


অনলাইন ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 15-12-2022

কৃচ্ছ্রসাধনের পরিপত্র জারি, সাশ্রয় সোয়া লাখ কোটি টাকা

আজ থেকে সরকারিভাবে সব ধরনের ভূমি অধিগ্রহণ বন্ধ থাকবে। কার্যাদেশ দেওয়া যাবে না নতুন করে কোনো ভবন ও স্থাপনা নির্মাণের।

পাশাপাশি ভবন ও স্থাপনার ক্ষেত্রে আগের কার্যাদেশের বিপরীতে ৫০ শতাংশ ব্যয় স্থগিত থাকবে। এছাড়া অফিস-আদালতের যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি খাতেও অর্থব্যয় সম্পূর্ণ স্থগিত করা হয়েছে।

অর্থবছরের মাঝামাঝি এসে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার অর্থ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

অর্থ বিভাগের এ উদ্যোগটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এটি বাস্তবায়নের ফলে এতে চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার ব্যয় সাশ্রয় হবে। এটি মোট বাজেটের ১৭ দশমিক ৫২ শতাংশের সমান। বর্তমান বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।

জানতে চাইলে সাবেক সিনিয়র অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, ভবন ও স্থাপনা নির্মাণ ব্যয় স্থগিত করা হয়েছে, এটি আমি সমর্থন করি। কারণ, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে অনেক ভবন নির্মাণে ব্যয় বাড়ছে, জমি নষ্ট হচ্ছে। এক্ষেত্রে বহুতল ভবন নির্মাণ করে একাধিক সরকারি অফিসের কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলে আগামী দিনে ভবন ব্যবস্থাপনা ব্যয় মেটানো কঠিন হবে। তিনি আরও বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ বন্ধ রাখা হয়েছে। ঠিক আছে। তবে ভূমি অধিগ্রহণ নীতি কিছুটা সংশোধন করা দরকার। বর্তমানে অধিগ্রহণ করলে তিনগুণ জমির মূল্য পান ভুক্তভোগী। এজন্য অনেকে স্বেচ্ছায় জমি দিতে চান অধিগ্রহণের জন্য। এটি বন্ধ করতে হলে নীতি পরিবর্তন করতে হবে।

সূত্র জানায়, বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় কৃচ্ছ সাধন কর্মসূচির আওতায় অর্থ বিভাগ এ উদ্যোগ নিয়েছে। এর আগে কয়েক দফা ব্যয় সাশ্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ বিভাগ। তবে চলতি বাজেটে ব্যয় সাশ্রয়ের ক্ষেত্রে এটি সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত। অর্থ বিভাগের পরিপত্রে বলা হয়, সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালন বাজেট থেকে কোনো অর্থ ব্যয় করে ভূমি অধিগ্রহণ করা যাবে না। এ খাতে অর্থব্যয় সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। এছাড়া পরিচালন বাজেটের আওতায় নতুন ভবন নির্মাণ ও স্থাপনা খাতে বছরের শুরুতে যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে, তার বিপরীতে কোনো ধরনের কার্যাদেশ দেওয়া যাবে না। তবে এ নির্দেশনা জারির আগে যেসব নতুন ভবন ও স্থাপনার কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে, সেসবের বিপরীতে মাত্র ৫০ শতাংশ অর্থ ছাড় করতে পারবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থা। বাকি ৫০ শতাংশ কার্যাদেশের বিপরীতে অর্থ বরাদ্দ স্থগিত থাকবে। পরিপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, বছরব্যাপী যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কেনাকাটা খাতে বিশেষ করে কম্পিউটার, আসবাবপত্র, বৈদেশিক সরঞ্জামাদি এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম খাতে পুরোপুরি অর্থব্যয় বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, সব মিলে উল্লিখিত খাতে বরাদ্দ আছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৩ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। আবাসিক ভবন নির্মাণ খাতে বরাদ্দ ৬ হাজার ৪২৮ কোটি, অনাবাসিক ভবন খাতে ২৪ হাজার ৮২২ কোটি এবং অন্যান্য স্থাপনা খাতে বরাদ্দ আছে ৫৬ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। এছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অফিস-আদালতে কম্পিউটার ক্রয়ে বরাদ্দ আছে ২ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা, আসবাবপত্র, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি ক্রয় বাবদ দেওয়া আছে ১৫ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা; যা এখন ব্যয় করা যাবে না। এই সাশ্রয়কৃত অর্থ অন্য কোনো খাতে ব্যয় করা এবং অন্য কোনো খাত থেকে এনে স্থগিত খাতগুলোয় অর্থ ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে ওই পরিপত্রে।

সূত্রমতে, আগামী সপ্তাহে অর্থনৈতিক পর্যালোচনাসংক্রান্ত সবচেয়ে বড় বৈঠক সরকারের কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, চলতি বাজেট বাস্তবায়ন হার এবং আগামী বাজেটের আকার নিয়ে পর্যালোচনা করা হবে। ওই বৈঠককে সামনে রেখে এরই মধ্যে একাধিক বৈঠক করেছে অর্থ বিভাগ। সেখানে চলতি বাজেট আরও ছোট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি অর্থ সাশ্রয়ের জন্য কৃচ্ছ সাধন কর্মসূচি আরও বড় করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় অর্থ বিভাগ এ ব্যয় কমাচ্ছে।

অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় অর্থ সাশ্রয়ের জন্য অনেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগ উদাসীন। এটি অর্থ বিভাগ পর্যবেক্ষণ করেছে। অনেক মন্ত্রণালয় এই সংকটের মধ্যেও রাস্তা নির্মাণ, নতুন ভবন নির্মাণ, স্থাপনা খাতে ব্যয় করছে। এ খাতে অর্থব্যয়ের জন্য অর্থ বিভাগের অনুমোদনও চাচ্ছে। প্রকৃত অর্থে এই সময়ে খাদ্য, জ্বালানি ও সার আমদানি ব্যয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে অর্থ বিভাগ। ফলে এই উদাসীনতার কারণে এই মুহূর্তে জরুরি নয়-এমন ব্যয়গুলো স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

জানা যায়, গত সেপ্টেম্বরে রাজধানীর মোহাম্মদপুর হাউজিং এস্টেটের আদাস অ্যাভিনিউয়ে ১৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪তলা আবাসিক ভবন নির্মাণ প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে।

জানা যায়, এর আগে চলমান ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে সৃষ্ট বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় বড় ধরনের কৃচ্ছ্রসাধনের সিদ্ধান্ত নেয় অর্থ বিভাগ। অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ ৫০ প্রকল্পে (সি-ক্যাটাগরি) অর্থছাড় স্থগিত, বি-ক্যাটাগরির প্রায় ৫০০ প্রকল্পের মোট ব্যয়ের ২৫ শতাংশ অর্থছাড় স্থগিত করা হয়। এছাড়া মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থায় সব ধরনের মোটরযান ও জলযান কেনাকাটায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ, আপ্যায়ন ও ভ্রমণ ব্যয়সহ মনিহারি, কম্পিউটার-আনুষঙ্গিক, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও আসবাবপত্র কেনাকাটায় ৫০ শতাংশ ব্যয় করতে বলা হয়েছে। বাকি ৫০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে না। এছাড়া উন্নয়ন প্রকল্পের বিভিন্ন কমিটির সম্মানি ব্যয়ও পুরোপুরি স্থগিত করা হয়। সব মিলিয়ে প্রাথমিকভাবে সম্ভাব্য সরকারি ব্যয়ে সাশ্রয় হবে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। নতুন অর্থবছর শুরুর তৃতীয় দিনের মাথায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]