জাপানি ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান


অনলাইন ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 12-12-2022

জাপানি ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

বাংলাদেশে ব্যাপক বিনিয়োগ করতে জাপানের ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ একটি লাভজনক স্থান। জাপানের বেসরকারি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে আরও বড় পরিসরে বিনিয়োগ করতে পারে। গতকাল রোববার বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এই আহ্বান জানান। বৈঠকের পরে প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব কেএম শাখাওয়াত মুন সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব বলেন, জাপানের রাষ্ট্রদূত বৈঠকে শেখ হাসিনার গতিশীল ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং আগামী দিনেও এই উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের শান্তি, শৃঙ্খলা, স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে বলেও জাপানি রাষ্ট্রদূত আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন। তিনি বাংলাদেশের মেগা প্রকল্প যেমন মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল এবং মেট্রোরেল বাস্তবায়নে জাপানের সহায়তার প্রশংসা করেন। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের উন্নয়নে জাপানের অব্যাহত সমর্থন কামনা করে রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় সবসময় পাশে থাকার আশ্বাস দেন। শেখ হাসিনা বিদেশিদের জন্য বরাদ্দকৃত পর্যটন স্থান গড়ে তুলতে জাপানের সহযোগিতাও কামনা করেন। জাপানি রাষ্ট্রদূত একে একটি ভালো উদ্যোগ হিসেবে বর্ণনা করে এই বিষয়ে সহযোগিতা করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।

বৈঠকে তারা রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়েও কথা বলেন। রাষ্ট্রদূত বলেন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং তাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়া উচিত। প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের জন্য ভাসানচরের উন্নয়নে জাপানের সহযোগিতার প্রশংসা করেন।

ইতো নাওকি বাংলাদেশে তার মেয়াদ সফলভাবে সম্পন্ন করায় এবং বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধিতে ভূমিকার জন্য তাকে শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, ১৯৭৩ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে সম্পর্কের ভিত্তি রচিত হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ঠেকাতে হবে : এদিকে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ঠেকাতে সব দেশকে প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল রোববার তিনি গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত ‘গ্লোবাল হাব অন লোকালি লেড অ্যাডাপটেশন’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি এ আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, সব কার্বন নির্গমনকারী দেশগুলোকে তাদের জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদানের সুযোগ আরো বাড়ানোর আহ্বান জানাই। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ১ দশমিক ৫ সেন্টিগ্রেডের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার জন্য সবাইকে আমাদের প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করতে হবে।

জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের ক্ষতির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু অভিযোজনে সরকার এখন আমাদের জিডিপির ৬ বা ৭ শতাংশ ব্যয় করে। আমরা সম্প্রতি ২০২৩-২০৫০ এর জন্য জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা চালু করেছি। ২০০৯ সালে আমরা আমাদের নিজস্ব সম্পদ দিয়ে একটি জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করি। এ পর্যন্ত তহবিল থেকে জলবায়ু অভিযোজন এবং প্রশমন উভয়ের জন্য ৮শ’টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (ন্যাপ) বাস্তবায়নের জন্য অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক উভয় উৎস থেকে আমাদের ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থায়ন থেকে অভিযোজন এবং প্রশমনের মধ্যে ৫০-৫০ সংস্থানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

জলবায়ু অভিযোজনে বাংলাদেশের প্রচেষ্টায় অংশীদার হতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ন্যাপ বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ এবং মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনার অধীনে করা কাজের পরিপূরক হবে। প্যারিস চুক্তির চেতনায় এই প্রচেষ্টায় আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে আমি আমাদের আন্তর্জাতিক সরকারি-বেসরকারি অংশীদারদের আমন্ত্রণ জানাই।

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় এ অঞ্চলের মানুষের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যুগ যুগ ধরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহ্য করে আসছে। বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড় এবং অন্যান্য বিপদের বিরুদ্ধে এক ধরনের সহিষ্ণুতা অর্জন করেছে। তারা প্রকৃতির পরিবর্তনের সঙ্গে খাপখাইয়ে নিতে শিখেছে। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা বাংলাদেশকে জলবায়ু অভিযোজন কেন্দ্রে পরিণত করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের স্থানীয় জনগণের কাছে জলবায়ু অভিযোজনের জন্য ঐতিহ্যগত জ্ঞান এবং সমাধান রয়েছে। আমাদের সরকার সম্পদ এবং উদ্ভাবনের সঙ্গে সেই সমাধানগুলোকে সহায়তা করে। এই সমন্বয়টি স্থানীয়ভাবে পরিচালিত অভিযোজন ব্যবস্থাগুলোর সফল করছে। দুযোর্গকালীন আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, মানুষ ও গৃহপালিত প্রাণীর আশ্রয় দিতে আমরা সারাদেশে ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করেছি। সাধারণত এই কেন্দ্রগুলো প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে কাজ করে। উপকূলীয় সবুজ বেল্ট কর্মসূচিও অব্যাহত রয়েছে।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে বিনামূল্যে ঘর দেওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আশ্রয়ণ কর্মসূচির আওতায় গৃহহীনদের বিনামূল্যে দেওয়ার জন্য আমরা প্রায় এক মিলিয়ন আধা-পাকা দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি নির্মাণ করেছি। কক্সবাজারের খুরুশকুলে জলবায়ু অভিবাসীদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় বহুতল আশ্রয়ণ কেন্দ্র নির্মাণ করছি। ইতোমধ্যে ১৩৯টি বহুতল ভবনে সেখানে প্রায় ৫ হাজার জলবায়ু উদ্বাস্তুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।

প্রতিকূল পরিবেশ উপযোগী ফসল উদ্ভাবনের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা লবণাক্ততা, খরা এবং বন্যা-সহনশীল ফসলের জাত উদ্ভাবন করেছি। সবজি উৎপাদনের জন্য ভাসমান কৃষি এখন ব্যাপকভাবে প্রচলিত। কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ প্রত্যাশা করছে জানিয়ে তিনি ‘গ্লোবাল হাব অন লোকাললি লেড অ্যাডাপটেশনকে’ সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

স্বাধীনতার পর উপকূলের মানুষকে দুর্যোগ থেকে সুরক্ষা দিতে ‘মুজিব কেল্লা’ নির্মাণসহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিভিন্ন অবদানের কথা তুলে ধরেন। 


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]