আল্লাহ মুমিনদের সওয়াব বিনষ্ট করেন না


ধর্ম ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 12-12-2022

আল্লাহ মুমিনদের সওয়াব বিনষ্ট করেন না

মুমিনরা আল্লাহর নেয়ামত ও অনুগ্রহের কারণে আনন্দ প্রকাশ করে; যখন তারা জানতে পারে যে মহান আল্লাহ মুমিনদের সওয়াব নষ্ট করেন না। কোরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ এমন ঘোষণা দিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, তারা মহান আল্লাহর অনুগ্রহ পেয়ে খুবই খুশী। তারা কারা? তারা হলেন শহীদরা। যারা আল্লাহর জীবন দিয়েছেন। তাদের যেমন কোনো চিন্তা নেই, তেমনি যারা শহীদ হবেন তাদেরও কোনো চিন্তা থাকবে না। মহান আল্লাহ শহীদ মুমিনদের খুশি ও আনন্দের কথা এভাবে তুলে ধরেছেন-

فَرِحِیۡنَ بِمَاۤ اٰتٰهُمُ اللّٰهُ مِنۡ فَضۡلِهٖ ۙ وَ یَسۡتَبۡشِرُوۡنَ بِالَّذِیۡنَ لَمۡ یَلۡحَقُوۡا بِهِمۡ مِّنۡ خَلۡفِهِمۡ ۙ اَلَّا خَوۡفٌ عَلَیۡهِمۡ وَ لَا هُمۡ یَحۡزَنُوۡنَ

‌‘আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে যা দিয়েছেন তা লাভ করে তারা আনন্দিত আর যে সব ঈমানদার লোক তাদের পেছনে (পৃথিবীতে) রয়ে গেছে, এখনও তাদের সাথে এসে মিলিত হয়নি, তাদের কোন ভয় ও চিন্তে নেই জেনে তারা আনন্দিত।'

یَسۡتَبۡشِرُوۡنَ بِنِعۡمَۃٍ مِّنَ اللّٰهِ وَ فَضۡلٍ ۙ وَّ اَنَّ اللّٰهَ لَا یُضِیۡعُ اَجۡرَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ

আল্লাহর নেয়ামাত এবং অনুগ্রহের কারণে তারা আনন্দ প্রকাশ করে আর এটা জেনে যে, আল্লাহ মুমিনদের সওয়াব বিনষ্ট করেন না। (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৭০-১৭১)

আয়াতের সারসংক্ষেপ

আর তারা সে বিষয়ে অত্যন্ত আনন্দিত যা আল্লাহ তাআলা আপন (কৃপা) ও অনুগ্রহে তাদের দান করেছেন। যেমন নৈকট্যের মর্যাদা প্রকাশ্য গোপন রিজিক ইত্যাদি। আর যেভাবে তারা নিজেদের শহীদ হওয়ার অবস্থায় আনন্দিত তেমনিভাবে যারা এখনও এ পৃথিবীতে জীবিত তথা বেঁচে রয়েছে; তাঁদের কাছে পৌঁছাতে পারেনি বরং তাদের পেছরে পড়ে রয়েছেন; তাদের এ অবস্থার জন্যও (যারা শহীদ হয়েছেন) তারা আনন্দিত যে, যদি তারাও শহীদ হয়ে যান তবে আমাদের মতোই তাদের ওপর কোনো বিপদ ভয়ভীতি আরাপিত হবে না এবং তারা দুঃখিতও হবে না।

শহীদদের মূলকথা হলো, তাঁরা দ্বিবিধ আনন্দ অনুভব করবেন। একটি হলো তাদের নিজেদের সম্পর্কে কথা আর দ্বিতীয়টি হলো তাদের নিজেদের সতীর্থদের কথা। পরবর্তীতে তাদের এ আনন্দের কারণ বিবৃত হচ্ছে যে, তারা নিজেদের অবস্থার ব্যাপারে আনন্দিত হয়। আল্লাহ তাআলা নেয়ামত ও অনুগ্রহ প্রাপ্তির কারণে। যা তারা ইতিমধ্যে প্রত্যক্ষ করে নিয়েছে।

আর অন্যদের অবস্থা সম্পর্কে আনন্দিত হয় এ জন্য যে, শহীদ হয়ে সেখানে যাওয়ার পর তারা প্রত্যক্ষ করে নিয়েছেন যে, আল্লাহ তাআলা ঈমানদারদের কাজের প্রাপ্য বিনষ্ট করে না। কাজেই তাদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যেসব লোক তাদের পেছনে রয়ে গেছেন এবং জিহাদ প্রভৃতির মতো সৎ কাজে নিয়োজিত রয়েছেন, তারাও এমনি ধরনের পুরস্কার পাবেন।

মুমিনদের মর্যাদায় আয়াত নাজিলের কারণ

তাঁদের (শহীদদের) তিরোধানের পর যেসব মুসলিমরা জীবিত আছেন অথবা জিহাদে ব্যস্ত রয়েছেন, তাঁদের ব্যাপারে তাঁরা আশা প্রকাশ করবেন যে, তাঁরাও যদি শাহাদতের মর্যাদা লাভে ধন্য হয়ে এখানে আমাদের মত তৃপ্তিময় জীবন লাভ করতেন! ওহুদ যুদ্ধের শহীদগণ মহান আল্লাহর কাছে আরজি পেশ করলেন যে, আমাদের যে মুসলিম ভাইরা দুনিয়াতে জীবিত আছেন, তাঁদেরকে আমাদের অবস্থাসমূহ এবং আমাদের এই সুখেভরা জীবন সম্পর্কে কেউ অবহিত করানোর আছে কি? যাতে তাঁরা যেন যুদ্ধ ও জিহাদ করা থেকে বিমুখ না হয়। আল্লাহ তাআলা বললেন, ‘আমি তোমাদের এ কথা তাঁদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি।’ এই প্রসঙ্গেই মহান আল্লাহ এই আয়াত নাজিল করলেন। (মুসনাদ আহমাদ ১/৩৬৫-৩৬৬, আবু দাউদ, জিহাদ অধ্যায়)

অন্য এক  হাদিসে এসেছে, ‘মৃত্যুবরণকারী কোনো প্রাণই আল্লাহর কাছে উত্তম মর্যাদা লাভ করার পর পুনরায় দুনিয়াতে ফিরে আসতে চাইবে না, কিন্তু শহীদ শাহাদতের সুউচ্চ মর্যাদা দেখে পুনরায় দুনিয়ায় ফিরে আসতে পছন্দ করবে, যাতে সে আবারও আল্লাহ রাস্তায় শহীদ হতে পারে।’ (মুসনাদ আহমদ ৩/১২৬, মুসলিম ১৮৭৭)

হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, ‘তুমি কি জানো যে, মহান আল্লাহ তোমার পিতাকে জীবিত করে বলবেন, ‘আমার কাছে তোমার কোনো আশা প্রকাশ কর (যাতে আমি তা পূরণ করে দিই)।’ তোমার পিতা উত্তরে বলবেন, ‘আমার তো শুধু এটাই আশা যে, আমাকে পুনরায় দুনিয়াতে পাঠিয়ে দেওয়া হোক, যাতে আমি তোমার রাস্তায় মৃত্যুবরণ করতে পারি।’ আল্লাহ তাআলা বলবেন, ‘এটা তো অসম্ভব। কারণ আমার অটল ফায়সালা হলো, এখানে আসার পর পুনরায় দুনিয়াতে কেউ ফিরে যেতে পারবে না।’ (সিলসিলা ৩২৯০)

দ্বিতীয় আয়াতে পরকালে শহীদদের এই আনন্দ ও প্রফুল্লতা প্রথম আনন্দের কথা সুদৃঢ়করণ এবং এ কথার বিবরণ যে, তাঁদের আনন্দ কেবল ভয়-ভীতি ও চিন্তা-ভাবনা না থাকার কারণে নয়, বরং তাঁদের আনন্দ আল্লাহর নেয়ামত এবং তাঁর সীমাহীন অনুগ্রহ পাওয়ার কারণেও। কোন কোন মুফাসসির বলেছেন, প্রথম আনন্দের সম্পর্ক দুনিয়ায় অবস্থানরত ভাইদের সাথে এবং দ্বিতীয় আনন্দের কারণ হল তাঁদের উপর আল্লাহর কৃত অফুরন্ত অনুগ্রহ ও অতিশয় সম্মান। (ফাতহুল ক্বাদির)

আয়াতটির অন্য অনুবাদ হচ্ছে, ‘তারা আনন্দ প্রকাশ করে আল্লাহর নেয়ামত ও অনুগ্রহের জন্য। আর নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের শ্রমফল নষ্ট করেন না।’


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]