ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। প্রকৃতির ভিন্ন বৈচিত্র রুপ নিয়ে হাজির হয় প্রতিটি ঋতু। কখনো মেঘলা আকাশ কখনো বৃষ্টি আবার কখনো গ্রীষ্মের তাপদাহ আবার কখনো কনকনে শীত। ঋতু বদলের ধারায় এখন হেমন্তকালের শেষ সময় আর কয়েক দিন পরই শুরু হবে শীতকাল। আর এই হেমন্ত-শীতের মাঝামাঝি সময়ে প্রকৃতির এক অপরুপ রুপে সেজেছে নাটোরের সিংড়ার চলনবিলের সরিষা ক্ষেতের মাঠ। যে দিকে তাকানো যায় শুধু হলুদ আর হলুদ। এ যেন রুপকথার হলুদের এক বিশাল রাজ্য। যে রাজ্যে হলুদ রাজা-রাণি আর হলুদ প্রজাদের বসবাস।
দৃষ্টি নন্দন হলুদ সরিষার এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করতে অনেক দর্শর্নাথীদের পদচারণা এখন সরিষা ক্ষেতে। জমির আইলে বসে কেউ গল্প করছেন আবার কেউ মোবাইলে তুলছেন সেলফি। সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে মৌমাছির পাশাপাশি ব্যস্ত সময় পার করছেন মধু চাষীরাও।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণের সুত্র মতে চলতি বছরে চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়া উপজেলায় সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪ হাজার ২শত হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে এবছর সরিষার চাষ হয়েছে ৪হাজার ৫শত হেক্টর। এ উপজেলায় গতবার সরিষার চাষ হয়েছিল ৩৮ হাজার হেক্টর। গতবারের তুলনায় এবছর প্রায় ৭শত হেক্টর সরিষা চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে।
কৃষকরা বলছেন, সরিষার ভালো ফলন আর সঠিক দামের পাশাপাশি লাভবান হওয়ায় সরিষা চাষে তাদের আগ্রহ বাড়ছে। এছাড়া চলতি বছরে চলনবিলের নীচু এলাকায় বন্যার আগাম পানি নেমে যাওয়ায় ওই সব এলাকায় নতুন করে সরিষার চাষ হয়েছে। সব মিলেই এই অঞ্চলে এবছর সরিষার চাষ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
সম্প্রতি উপজেলার লালোড়, ডাকমুন্ড, বারুইহাটি,শেরকোল, দমদমার জোলার বাতা, ডাহিয়ার বেড়াবাড়ি,পারিল, আয়েশ সহ বিভিন্ন মাঠ ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
লালড় বারুইহাটি গ্রামের কৃষক রনজিৎ সরকার বলেন, গতবছর ২৫ বিঘা জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষার চাষ করেছিলাম। হালচাষ,বীজ,পানি সেচ ও সার সহ ফসল ঘরে উঠানো পর্যন্ত আমার প্রতি বিঘায় খরচ হয়েিেছল সাড়ে ৬ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় ফলন পেয়েছিলাম ৬ থেকে ৭ মণ। ভেজা অবস্থায় সরিষা বিক্রয় করেছি প্রতি মণ ২হাজার ২শত থেকে ২হাজার ৩শত টাকা। এতে আমার খরচ বাদে প্রতি বিঘায় লাভ হযেছে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। ভালো ফলন আর দাম পেয়ে আমি লাভবান হয়েছি। এবছর ৫ বিঘা বৃদ্ধি করে ৩০ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি। আবহাওয়া ভালো থাকলে আশা করি এবছরও লাভের মুখ দেখবো।
রামানন্দ খাজুরা ইউনিয়নের ঝিঙা বাড়িয়া গ্রামের কৃষক হেলাল উদ্দিন বলেন, কৃষি কর্মকর্তার পরার্মশক্রমে এবছরই আমি প্রথম ১০ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ শুরু করেছি।
ডাহিয়া ইউনিয়নের বেড়াবাড়ি গ্রামের কৃষক হাসান আলী বলেন, এবছর আগাম বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় আমাদের এই মাঠ জুড়ে সবাই সরিষার চাষ করেছে। যা গত ১০-১৫ বছরের মধ্যে এই মাঠে এত সরিষার চাষ হয় নাই। আমি ২০ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেিেছ। আশা করছি সরিষা ঘরে তুলে বোরো ধান রোপন করবো।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবীদ মোঃ সেলিম রেজা বলেন, চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়া উপজেলা একটি কৃষি প্রধান অঞ্চল। গতবছর এ অঞ্চলে সরিষার চাষে লাববান হওয়ায় এবছর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে প্রায় ৭শত হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরাও খুশি। আমরা আশা করছি সরিষা উৎপাদনের এই বৃদ্ধি আগামীতেও অব্যাহত থাকবে। এতে করে বিদেশ থেকে ভোজ্য তেল আমাদানীর নির্ভরশীলতা অনেকটাই কমে যাবে এবং দেশী তেল ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে।