প্রেমিকার সাথে শারীরিক সম্পর্ক, বিয়ের জন্য চাপ দেয়ায় তরুণীকে পুড়িয়ে হত্যা


অনলাইন ডেস্ক : , আপডেট করা হয়েছে : 03-12-2022

প্রেমিকার সাথে শারীরিক সম্পর্ক, বিয়ের জন্য চাপ দেয়ায় তরুণীকে পুড়িয়ে হত্যা

ঢাকার কেরানীগঞ্জে বাকপ্রতিবন্ধী লতা সরকারকে ধর্ষণের পর শরীরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার মূল আসামি সুজন মিয়াকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শারীরিক সম্পর্কের কথা গোপন রাখতেই লতাকে পরিকল্পিতভাবে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

শনিবার (৩ ডিসেম্বর) সকালে জনসন রোডে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান সংবাদ সম্মেলন করে গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান।

পুলিশ সুপার জানান, ভুক্তভোগী লতা সরকারের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকায় পুলিশ কর্তব্যরত চিকিৎসক ও একজন সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ এক্সপার্টের সহায়তায় বাকপ্রতিবন্ধী লতার মৃত্যুকালীন জবানবন্দি গ্রহণ করে। পরে তদন্ত টিম ঘটনাস্থলের বিভিন্ন আলামত ও সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করা হয়। নিহত লতার ডায়িং ডিক্লারেশন, ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ এবং তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তদন্ত টিম চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত অজ্ঞাতনামা আসামিকে শনাক্ত করে।

তিনি জানান, শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) ভোরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দিন কবীর কেরানীগঞ্জ সার্কেলের নেতৃত্বে একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া থানার তেগাছিয়া বাজার থেকে মূল আসামি সুজন মিয়াকে (২৫) গ্রেফতার করে।

আসামি সুজন মিয়ার বাড়ি শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাটের কোদালপুরে।

মো. আসাদুজ্জামান জানান, বাকপ্রতিবন্ধী লতার সঙ্গে সুজনের ৮ থেকে ১০ দিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে গ্রেফতার সুজন। ঘটনার দিন বিকেলে সুজন বালির গদির খাটে লতার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে। এরপর লতা সুজনকে বিয়ের জন্য জোর-জবরদস্তি করতে থাকে। লতা সুজনকে বলে, সে যদি লতাকে নিয়ে পালিয়ে না যায়, তাহলে সে শারীরিক সম্পর্কের কথা সবাইকে জানিয়ে দেবে। সুজন তখন লতাকে জামাকাপড় নিয়ে রাতে নির্দিষ্ট জায়গায় অপেক্ষা করতে বলে। লতা সেখানে গেলে সুজন তাকে হত্যার পরিকল্পনা শুরু করে।


পরে লতাকে নিয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার চুনকুটিয়া সাবান ফ্যাক্টরি রাস্তার ব্রিজের কাছে অন্ধকার জায়গায় নিয়ে যায় সুজন। সেখানে নিয়ে লতাকে ঘুষি মেরে ও ধাক্কা দিয়ে রাস্তার পাশে খাদে ফেলে দেয়। তখন লতা চিৎকার করতে থাকলে সুজন লতার গলা চেপে ধরে এবং সিমেন্টের পাথরের সঙ্গে মাথায় ৩ থেকে ৪টা আঘাত করে। এতে লতা জ্ঞান হারিয়ে ফেললে সুজন মনে করে লতা মারা গেছে। তারপর লতার ব্যাগের জামাকাপড় তার শরীরের ওপর রেখে আগুন ধরিয়ে দিয়ে সুজন পালিয়ে যায়। স্থানীয় ব্যক্তিরা লতাকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়। রাতেই সুজন শরীয়তপুর গোসাইরহাটের কোদালপুরে তার গ্রামের বাড়িতে যায়। সেখান থেকে সে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় তার শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে লুকিয়ে থাকে।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘মূলত শারীরিক সম্পর্কের কথা গোপন রাখতেই সুজন পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। মামলার তদন্ত এখনও চলমান রয়েছে।’

নিহত লতা সরকারের ভাই ও এই মামলার বাদী স্বপন সরকার বলেন, ‘আমার বোন বাকপ্রতিবন্ধী  ছিল। তাকে ফুসলিয়ে নিয়ে এসে ধর্ষণ করার পর আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমরা খুনির ফাঁসি চাই।’

উল্লেখ্য, গত ২৮ নভেম্বর রাত সাড়ে ১০টায় ৯৯৯-এর মাধ্যমে পুলিশ খবর পায় কেরানীগঞ্জের সাবান ফ্যাক্টরী রোডের পাশে এক নারীর শরীরে কে বা কারা আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। পুলিশ নারীকে উদ্ধার করে প্রথমে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে (মিটফোর্ড) ও পরে শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৯ নভেম্বর রাতে সাড়ে ৮ টায় লতা মৃত্যুবরণ করে।



Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]