গোদাগাড়ীতে কমে যাচ্ছে চারণ ভূমি, গো-খাদ্য সংকটে গৃহস্থ ও খামারিরা।


রবিউল ইসলাম মিনাল (স্টাফ রিপোর্টার): , আপডেট করা হয়েছে : 30-11-2022

গোদাগাড়ীতে কমে যাচ্ছে চারণ ভূমি, গো-খাদ্য সংকটে গৃহস্থ ও খামারিরা।

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে কমে যাচ্ছে চারণ ভূমি, গো-খাদ্য সংকটে গৃহস্থ ও খামারিরা। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে জমি পতিত না থাকায় গো-চারণ ভূমি তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে। ফলে সংকট দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে উচ্চ মূল্যে খড়, বিচালি কিনে গো-খাদ্যের চাহিদা পূরণ করতে হচ্ছে খামারি ও গৃহস্থদের। এতে করে কৃষক ও গো-খামারিরা হিমশিম খাচ্ছেন। গবাদিপশু পালনে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাদের। অনেকে গো-খাদ্য সংকটের কারণে গরু ছাগল বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, মানুষেরা জীবন-জীবিকার তাগিদে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া পালন করেন। এসব গবাদিপশু খাদ্যের প্রধান উৎস চারণ ভূমির প্রাকৃতিক খাবার। জমিতে বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন ফসল আবাদ বেড়ে যাওয়ায় কমে আসছে গো-চারণ ভূমি, কমে যাচ্ছে প্রাকৃতিক খাদ্যের উৎস। গো-চারণ ভূমির সংকটের ফলে দেখা দিচ্ছে গো-খাদ্যের সংকট। 

উপজেলার বোগদামারী গ্রামের লালু। নিজের সম্পদ বলতে তার রয়েছে ৫টি গরু। প্রতিবছর গরু বিক্রি করে সংসারের পুরো ব্যয় বহন করে থাকেন তিনি। এভাবে প্রায় দুই যুগ ধরে গবাদিপশু লালন-পালনের উপর নির্ভর করেই চলছে তার সংসারের প্রয়োজনীয় চাহিদাসহ সন্তানদের পড়ালেখার খরচ। তবে, চারণ ভূমির অভাবে প্রাকৃতিকভাবে গজিয়ে ওঠা বিভিন্ন ধরণের গো-খাদ্য হ্রাস পাওয়ায় চরম দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি। 

পতিত জমির অভাবে কেনা গো-খাদ্যের উপর নির্ভর করে গো-খাদ্যের চাহিদা মেটানো কঠিন হয়ে পড়েছে লাল মোহাম্মদের মতো এনামুল, করিমসহ অনেকের। এতে করে উপজেলার গবাদিপশু লালন-পালনের উপর নির্ভরশীল পরিবারগুলো চরম বেকায়দায় পড়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে বাজার থেকে গবাদিপশুর খাদ্য কিনে গরু মোটাতাজাকরণ ও দুধ উৎপাদন করছেন তারা। তবে সবচেয়ে বেকায়দায় পড়েছেন গো-খামারিরা।

খামারি রেজাউল জানান, কয়েকদিন পর পরই গো-খাদ্যের মূল্য বেড়ে যাচ্ছে। এ কারণে গবাদিপশু লালন-পালনে গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। দানাদার খাবারের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী এবং দুধের বাজার মূল্য কম হওয়ায় খামার টিকিয়ে রাখা কষ্টকর হয়ে পড়েছে।

আরিফ জানায়, বরেন্দ্র অঞ্চলে পতিত জমি না থাকায় পদ্মা নদীর বুকে জেগে ওঠা চরে প্রাকৃতিকভাবে গজিয়ে ওঠা বিভিন্ন ধরণের গো-খাদ্যের উপর নির্ভর করে গরু-মহিষ, ছাগল ও ভেড়া লালন পালন করতাম। গত কয়েক বছর থেকে পদ্মা নদীর বুকে জেগে ওঠা চরে আবাদ হওয়ায় প্রাকৃতিকভাবে গজিয়ে ওঠা বিভিন্ন ধরণের গো-খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। নিজেরাই গরু লালন-পালন করি। আমাদের সারা বছর গরুর দুধ, গোবর বিক্রি করে কোনরকম সংসার চলে। কিন্তু খাদ্য সংকটের কারণে গরু, ছাগল নিয়ে বিপাকে আছি। খড় দাম আগের চাইতে অনেক বেড়ে যাওয়ায় গরু ছাগল প্রতিপালন আমাদের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়েছে।

একটি স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে চরাঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো গাছপালা কমে যাচ্ছে। আর এর প্রভাব পড়ছে প্রাণিকুলে। বিশেষ করে গবাদিপশু লালন-পালনের উপর নির্ভরশীল পরিবারগুলোর জীবন-জীবিকায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ সুব্রত কুমার সরকার জানান, মানুষজনের অন্যতম সম্পদ গবাদিপশু। প্রকৃতির উপর নির্ভর করে গাছপালা ও ঘাস খেয়ে এখানকার গরু, মহিষ, ভেড়া, ছাগল বেড়ে ওঠে। চারণ ভূমি কমতে থাকায় বিকল্প হিসেবে উন্নত পদ্ধতিতে ঘাস চাষের প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দেয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, দানাদার খাবারের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় গো-খাদ্যর সংকট মোকাবেলায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে বিনামূল্যে উন্নতজাতের ঘাসের কাটিং দেওয়া হচ্ছে। যে সকল গৃহস্থ ও খামারিদের জমি আছে তারা ঘাস চাষ করে দানাদার খাবার কমিয়ে গবাদিপশুকে ঘাস খাওয়ালে আর্থিকভাবেও লাভবান হবেন। 


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]