মুনাফিকদের চিনে নেওয়ার আহ্বান


ধর্ম ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 30-11-2022

মুনাফিকদের চিনে নেওয়ার আহ্বান

আল্লাহ বলেন, ‘আর যাতে তিনি জেনে নেন মুনাফিকদের। আর তাদের বলা হয়েছিল, ‘এসো, আল্লাহর পথে লড়াই কর অথবা প্রতিরোধ কর’। ওহুদ যুদ্ধের আগে আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইসহ কথিত মুনাফিকদের চিনে নেওয়া সম্পর্কে কোরআনুল কারিমের এ আয়াতটি নাজিল হয়। সে সময়ের মুনাফিকদের অভিমত তুলে ধরে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَ لِیَعۡلَمَ الَّذِیۡنَ نَافَقُوۡا وَ قِیۡلَ لَهُمۡ تَعَالَوۡا قَاتِلُوۡا فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ اَوِ ادۡفَعُوۡا ؕ قَالُوۡا لَوۡ نَعۡلَمُ قِتَالًا لَّا تَّبَعۡنٰکُمۡ ؕ هُمۡ لِلۡکُفۡرِ یَوۡمَئِذٍ اَقۡرَبُ مِنۡهُمۡ لِلۡاِیۡمَانِ ۚ یَقُوۡلُوۡنَ بِاَفۡوَاهِهِمۡ مَّا لَیۡسَ فِیۡ قُلُوۡبِهِمۡ ؕ وَ اللّٰهُ اَعۡلَمُ بِمَا یَکۡتُمُوۡنَ

‘আর মুনাফিকদেরকেও জেনে নেয়া। তাদেরকে বলা হয়েছিল; এসো, ‘আল্লাহর পথে যুদ্ধ কর, কিংবা (কমপক্ষে) নিজেদের প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা কর’। তখন তারা বলল, ‘যদি আমরা জানতাম যুদ্ধ হবে, তাহলে অবশ্যই তোমাদের অনুসরণ করতাম’। তারা ঐ দিন ঈমানের চেয়ে কুফরীরই নিকটতম ছিল, তারা মুখে এমন কথা বলে যা তাদের অন্তরে নেই, যা কিছু তারা গোপন করে আল্লাহ তা বিশেষরূপে জ্ঞাত আছেন।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৬৫-১৬৬)

আয়াতের সারসংক্ষেপ: এবং সেসব লোককেও যাতে দেখে নেন, যারা প্রতারণামূলক (মুনাফিকের) আচরণ করেছে। আর যুদ্ধের শুরুতে যখন তিন শত লোক মুসলমানদের সহযোগিতা পরিহার করে চলে গিয়েছিল, তাদের বলা হয়েছিল যে, যুদ্ধের ময়দানে চলে এসো, তারপর সাহস হলে আল্লাহর পথে লড়াই কর কিংবা সাহস না হলে শত্রুকে প্রতিহত কর। কারণ ভীড় বেশি দেখে তাদের উপর কিছু প্রভাব পড়বে এবং এভাবে হয়তো সরেও পড়তে পারে। তারা বলল, আমরা যদি নিয়মানুগ লড়াই দেখতাম, তবে তোমাদের সঙ্গে এসে অবশ্যই শামিল হয়ে যেতাম। কিন্তু এটা কি কোনো লড়াই হলো যে, তারা তোমাদের তুলনায় তিন-চার গুণ বেশি! তদুপরি তাদের কাছে যুদ্ধের উপকরণও রয়েছে বহুগুণে বেশি। কাজেই এমতাবস্থায় লড়াই করা আত্মহত্যারই নামান্তর। একে লড়াই বলা যায় না। এরই প্রেক্ষিতে মহান আল্লাহ এরশাদ করেন, এই মুনাফিকরা যখন এ রকম উত্তর দিয়েছিলো, সেদিন প্রকাশ্যত তারা কুফরের কাছাকাছি হয়ে পড়ে সে অবস্থার তুলনায় যে, তারা প্রথমে বাহ্যত ঈমানের কিছুটা কাছাকাছি ছিল।

কারণ আগে যদিও তারা বিশ্বাসের দিক থেকে মুমিন ছিল না কিন্তু মুসলমানদের সামনে তাদের সমর্থনসূচক কথাবার্তা বলতে থাকতো। কিন্তু সেদিন (ওহুদের যুদ্ধের দিন) এমনিভাবে চোখ ওল্টে গেলো যে, তাদের মুখ থেকে প্রকাশ্য বিরোধিতার কথা বেরিয়ে পড়লো। সুতরাং প্রথমে ঈমানের সঙ্গে যে বাহ্যিক নৈকট্য  ছিল, তা কুফরির নৈকট্যে পরিণত হয়ে গেলো। আর এই নৈকট্য আগের নৈকট্য অপেক্ষা বেশি এ জন্য যে, তাদের তখনকার সমর্থনসূচক কথাবার্তা আন্তরিক ছিল না। কাজেই তা তেমন শান্তিপূর্ণও ছিল না।

পক্ষান্তরে এই বিরোধপূর্ণ কথাবার্তাগুলো যেহেতু আন্তরিকও ছিল, সেহেতু  এগুলো যথেষ্ট জোরদারও ছিল। এরা নিজের মুখে এমন সব কথাবার্তা বলে, যা তাদের মনে কথা নয়। অর্থাৎ লড়াই যত সুষ্ঠুই হোক, মুসলমানদের সঙ্গে সহযোগিতা না করাই হলো তাদের মনের কথা। আর তারা যা কিছু নিজের মনে পোষণ করে আল্লাহ সেসব বিষয় খুব ভালোভাবেই জানেন।

মুনাফিকদের কথা: আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই যখন তিনশত মুনাফিক নিয়ে ফিরে যেতে লাগলো। তখন কোনো কোনো মুসলমান গিয়ে তাকে বুঝাবার চেষ্টা করলো এবং মুসলিম সেনাদলে ফিরে আসার জন্য রাজি করাতে চাইলো। কিন্তু সে জবাব দিলো, আমার নিশ্চিত বিশ্বাস আজ যুদ্ধ হবে না; তাই আমরা চলে যাচ্ছি। নয়তো যুদ্ধ হওয়ার আশা থাকলে আমরা অবশ্যই তোমাদের সঙ্গে চলে যেতাম।

আহসানুল বয়ানে এসেছে, ‘যদি বাস্তবিকই তুমি যুদ্ধ করতে যেতে, তাহলে আমরাও তোমার সঙ্গে থাকতাম। কিন্তু তুমি তো নিজেকে ধ্বংসের মধ্যে ঠেলে দিতে যাচ্ছ, অতএব এ রকম ভুল কাজে আমরা তোমার সঙ্গে কিভাবে থাকতে পারি? এই ধরনের কথা আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই এবং তার সাথীরা এই জন্যই বলেছিল যে, তাদের মত গ্রহণ করা হয়নি। আর এ কথা তারা তখন বলেছিল, যখন ‘শাউত্ব’ নামক স্থানে পৌঁছে তারা (যুদ্ধ না করে) প্রত্যাবর্তন করছিল এবং আব্দুল্লাহ ইবনে হারাম আনসারী তাদেরকে বুঝিয়ে যুদ্ধে শরীক করার প্রচেষ্টা করছিলেন।

যুদ্ধ ত্যাগের কারণ: যুদ্ধ ত্যাগ করার যে কারণ মৌখিকভাবে তারা প্রকাশ করেছে, সেটা প্রকৃত কারণ নয়, বরং তাদের অন্তরে লুক্কায়িত যে কারণ ছিল তাহলো- প্রথমত, তাদের পৃথক হওয়ায় মুসলিমদের অন্তরে দুর্বলতার সৃষ্টি হবে। দ্বিতীয়ত, কাফেরদের লাভ হবে। অর্থাৎ, আসল উদ্দেশ্য ছিল ইসলাম, মুসলিম এবং নবি করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ক্ষতি করা। (আহসানুল বয়ান)

আল্লাহ তাআলা এ আয়াত নাজিল করে মুমিন মুসলমানের সামনে মুনাফিকের পরিচয় প্রকাশ করে দিয়েছিলেন। তাদের খোঁড়া অজুহাত ও উদ্দেশ্য মুমিন মুসলমান জানতে পারে। তারা ইসলাম ও মুসলমানের ক্ষতির জন্যই যুদ্ধ কাফেলা থেকে বেরিয়ে পড়েছিলো। আর তারাই মুনাফিক।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]