ঋণ আদায়ের জন্য এখন থেকে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান চেক প্রত্যাখানের মামলা দায়ের করতে পারবে না-হাইকোর্টের এমন রায় স্থগিত করেনি আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। একইসঙ্গে রায় স্থগিত চেয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের করা আবেদনটি ১ ডিসেম্বর শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আপিল বিভাগের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম সোমবার (২৮ নভেম্বর) এই আদেশ দেন।
এ সময় ব্র্যাক ব্যাংকের কৌসুলির উদ্দেশ্যে বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেন, ‘২৫ হাজার টাকার জন্য সাধারণ কৃষকদের কোমরে দড়ি বেঁধে টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অথচ যাদের কাছে ব্যাংকের লক্ষ-কোটি টাকা পাওনা, তাদের কিছু হয় না।’
ঋণ দেওয়ার সময় গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া চেক সম্পর্কে এই বিচারপতি বলেন, ‘এই চেকে কে স্বাক্ষর করে, কে টাকার অঙ্ক বসায়, কে কলাম পূরণ করে, তার কোনো হদিস নেই। এই চেক নেওয়া যাবে না বলে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে, তার পরেও ব্যাংকগুলো এসব নির্দেশনা মানছে না? ’
গত ২৩ নভেম্বর বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এক মামলার রায়ে বলেছেন, ঋণ আদায়ের জন্য এখন থেকে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান চেক প্রত্যাখানের মামলা দায়ের করতে পারবে না। কারণ ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলো যে ব্ল্যাংক চেক নিচ্ছে সেটা জামানত। এটা নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্ট অ্যাক্টের (এন.আই অ্যাক্ট) অধীনে কোনভাবেই বিনিময়যোগ্য দলিল নয়। আর ঋণের বিপরীতে ব্ল্যাংক চেক নেওয়াটাই বেআইনি ও আইন বহিভভূত। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরে এই বেআইনি কাজ করে আসছে। তাই জামানত হিসেবে রাখা ওই চেক দিয়ে এন.আই অ্যাক্টে মামলা করার সুযোগ নাই। যদি কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান এ ধরনের মামলা করে সেগুলো গ্রহণ না করে সরাসরি খারিজের জন্য নিম্ন আদালতকে নির্দেশ দেওয়া হলো।
হাইকোর্টের এই রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে ব্র্যাক ব্যাংক। ব্যাংকের পক্ষে আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন আদালতে বলেন, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ মামলা।
হাইকোর্ট রায় দিয়ে বলেছেন, কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যক্তির বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনারের মামলা করতে পারবে না। নিম্ন আদালতে এ সংক্রান্ত বিচারাধীন সব মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে।
এ পর্যায়ে বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায় না দেখে এ বিষয়ে আপাতত কিছু বলা যাবে না। আবেদনটি পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেওয়া হলো। এরপরই আদালত ঋণ সংক্রান্ত মামলায় পাবনার ১২ কৃষককে কারাগারে পাঠানোর প্রসঙ্গ টেনে এই মন্তব্য করেন। এ সময় আদালতে বিবাদী পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুল্লা আল বাকী।