গ্রেফতার হওয়া আপ মন্ত্রী রীতিমতো আরাম করে বেডে শুয়ে আছেন আর তাঁকে ম্যাসাজ করে দিচ্ছেন আর এক বিচারাধীন বন্দি। সম্প্রতি তিহার জেলের এমনই একটি সিসিটিভি ফুটেজ ভাইরাল হয়েছিল। সেই ফুটেজকে হাতিয়ার করে মাঠে নেমেছিল রাজনৈতিক দলগুলিও। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, এই ম্যাসাজ কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এর চেয়েও অনেক বেশি অনিয়ম হয়েই থাকে তিহারের অন্দরে! এবার এই সমস্ত ঘটনা নিয়েই মুখ খুলেছেন তিহার জেলের প্রাক্তন আধিকারিক সুনীল গুপ্ত। তিনি জানিয়েছেন, জেলবন্দিরা প্রভাবশালী হলে, সেক্স করার সুযোগ পর্যন্ত পান তাঁরা!
একটি সাক্ষাৎকারে সুনীল গুপ্ত জানিয়েছেন, প্রভাবশালী কেউ জেলে বন্দি হলে, তাঁদের নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা পাইয়ে দেওয়া খুবই সাধারণ ব্যাপার। এমনকি মেটানো হয় যৌন চাহিদাও!
১৯৮১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিহারের আইনকর্তা ও মুখপাত্র হিসাবে নিযুক্ত ছিলেন সুনীল। সেই অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেছেন, ‘অন্য বন্দিদের যৌনতায় লিপ্ত করা হয় প্রভাবশালীদের সঙ্গে। কখনও স্বেচ্ছায় কখনও বা জোর করে এই ঘটনা ঘটে। যে সব বন্দি দরিদ্র, তারা টাকার লোভেই হোক কা পরিবারের কারও চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে হোক, কিংবা অন্যান্য সুবিধার জন্যই হোক, অনেক সময়েই স্বেচ্ছায় জেলবন্দি মন্ত্রী, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, প্রভাবশালীদের নানা রকম সুবিধা দিয়ে থাকে।’
এই সমস্ত কথা অবশ্য এই প্রথম বলছেন না সুনীল। অবসর নেওয়ার পরের বছরেই এ বিষয়ে একটি বই প্রকাশ করেছিলেন সুনীল। ‘ব্ল্যাক ওয়ারেন্ট’ নামের সেই বইয়ে প্রভাবশালী জেলবন্দিদের বিলাসবহুল জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত লিখেছিলেন তিনি। সেখানেই প্রাক্তন এই কারাকর্তা দাবি করেছিলেন, প্রভাবশালীদের সন্তুষ্ট করতে বহু কারাকর্মীই কোনও নিয়ম-কানুন মানতেন না।
এই সমস্ত বিষয় নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে সুনীল গুপ্ত অভিযোগও জানিয়েছিলেন বলে লিখেছেন তাঁর বইয়ে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছিল। তবে পরে আবার যে-কে-সে হয়ে যায় বলেই দাবি তাঁর। সম্প্রতি সামনে আসে সত্যেন্দ্র জৈনের ম্যাসেজের ভিডিও তারই প্রমাণ।
দিন কয়েক আগে সত্যেন্দ্র জৈনের ভিডিও নিয়ে তোলপাড় পড়ে গেছিল রাজনীতির অন্দরে। বিজেপির তরফে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল, আর্থিক দুর্নীতিতে অভিযুক্ত একজন মন্ত্রী এমন বিলাসী ম্যাসাজ কীভাবে পাচ্ছেন তিহার জেলের অন্দরে! দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী তথা আপ নেতা মণীশ সিসোদিয়া এই অভিযোগের পাল্টা জবাব দেন, কোমরে ও মেরুদণ্ডে সমস্যা থাকায় চিকিৎসকের পরামর্শেই সত্যেন্দ্রকে ‘ফিজিওথেরাপি’ দেওয়া হচ্ছে। পরে জানা যায়, ফিজিওথেরাপির নামে যে মেসেজ চলছিল তা আসলে দিচ্ছিল নিজের মেয়েকে ধর্ষণে অভিযুক্ত আর এক বন্দি।
এই ঘটনা নিয়েও সুনীল বলেছেন, ‘জেলের কক্ষে এ ভাবে মালিশ নেওয়া আইনবিরুদ্ধ। চিকিৎসার কারণে ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন হলে তা দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে, লোক রয়েছে, আলাদা ঘরও রয়েছে।