আল্লাহ তাআলা অনেক সময় বান্দার জীবন থেকে বরকত উঠিয়ে নেন এবং রিজিক সংকুচিত করে দেন। মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে অভাব-অনটন ও দারিদ্র্যতা চাপিয়ে দেন। এর প্রকৃত কারণ কী?
পাপের কারণে মানুষের রিজিক সংকুচিত হয়ে যায় এবং মানব জীবন বরকতশূন্য হয়ে পড়ে। কোরআন-সুন্নাহর আলোকে তা প্রমাণিত। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত ছাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
لَا يَزِيدُ فِي الْعُمْرِ إِلَّا الْبِرُّ، وَلَا يَرُدُّ الْقَدَرَ إِلَّا الدُّعَاءُ، وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيُحْرَمُ الرِّزْقَ بِالذَّنْبِ يُصِيبُهُ
‘সৎকর্ম ছাড়া অন্য কিছু আয়ুস্কাল বাড়াতে পারে না এবং দোয়া ছাড়া অন্য কিছুতে তাকদীর রদ হয় না। মানুষ তার পাপকাজের দরুন তার প্রাপ্য রিযিক থেকে বঞ্চিত হয়।’ (ইবনে মাজাহ ৪০২২)
পবিত্র কোরআনের আয়াত এ হাদিসের সত্যতা রস্পষ্ট প্রমাণ বহন করে। মহান আল্লাহ বলেন-
وَلَوْ أَنَّهُمْ أَقَامُوا التَّوْرَاةَ وَالْإِنْجِيلَ وَمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِمْ مِنْ رَبِّهِمْ لَأَكَلُوا مِنْ فَوْقِهِمْ وَمِنْ تَحْتِ أَرْجُلِهِمْ
‘যদি তারা তাওরাত, ইঞ্জিল এবং তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তাদের উপর নাযিলকৃত বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠিত করত। তাহলে তারা তাদের উপর থেকে এবং তাদের পায়ের নীচ থেকে আহার করতো।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ৬৬)
হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন-
إِذا كُنتَ في نِعمَةٍ فَاِرعَها * فَإِنَّ الـمَعاصي تُزيلُ النِعَم.
وَحافِظ عَلَيها بِتَقوى الإِلَهِ * فَإِنَّ الإِلَهَ سَريعُ النِّقَم.
‘যখন তুমি আল্লাহর নেয়ামতের মধ্যে থাক, তখন এর যত্ন নাও। কারণ, গুনাহ/পাপ নেয়ামাতকে দূর করে দেয়। আর তুমি আল্লাহভীতির মাধ্যমে সেই নেয়ামতকে সংরক্ষণ কর। কেননা, নিশ্চয় ইলাহ/ আল্লাহ দ্রুত প্রতিশোধ গ্রহণকারী।’ (দেওয়ানে ইমাম আলি : পৃষ্ঠা ২১৫)
হজরতআব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন-
إن للحسنة نورا في القلب، وزينا في الوجه، وقوة في البدن، وسعة في الرزق، ومحبة في قلوب الخلق . وإن للسيئة ظلمة في القلب، وشينا في الوجه، ووهنا في البدن، ونقصا في الرزق، وبغضة في قلوب الخلق
‘নিশ্চয়ই নেক আমলের প্রভাব হলো- অন্তরের আলো, চেহারার উজ্জ্বলতা, শরীরের শক্তিমত্তা, রিজিকের প্রশস্তি এবং সৃষ্টিকূলের আন্তরিক ভালোবাসা। আর গুনাহের প্রভাব হলো- অন্তরের অন্ধকার, চেহারার কলুষতা, শরীরের দুর্বলতা, রিজিকের সংকট এবং সৃষ্টিকূলের অন্তরসমূহের ঘৃণা ও অপসন্দনীয়তা।’ (রাওজাতুল মুহিববীন : পৃষ্ঠা ৪৪১)
হজরত আনাস বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি-
مَنْ سَرَّهُ أَنْ يُبْسَطَ لَهُ فِي رِزْقِهِ، أَوْ يُنْسَأَ لَهُ فِي أَثَرِهِ، فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ
‘যে ব্যক্তি পসন্দ করে যে, তার রিজিক বৃদ্ধি হোক অথবা তার হায়াত বৃদ্ধি হোক, সে যেন আত্মীয়দের সঙ্গে সদাচরণ করে।’ (বুখারি ২০৬৭; মুসলিম ৬৬৮৭; আবু দাউদ ১৬৯৩)
সুতরাং বোঝা গেল যে, গুনাহ বা পাপের কারণে রিজিক ও মানুষের জীবনের বরকত কমে যায়। আর নেক আমল, সদাচরণ, দোয়া ও আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখলে রিজিক ও জীবনে বরকত নেমে আসে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জীবনে বরকত ও রিজিকে বরকত পেতে নেক আমল করার এবং পাপ কাজ ছেড়ে দেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।