নাটোরের বাগাতিপাড়ায় টানা ৩ দিনে তিন শিক্ষার্থীর আত্মহত্যাসহ গত ১০ দিনের ব্যবধানে ৮ জনের অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ রশিতে ঝুলন্ত দুই শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বিষপানে এক ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও সড়ক দূর্ঘটনায় এক সঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু, নদের পানিতে তলিয়ে এক বৃদ্ধ এবং এক আনসার ভিডিপি সদস্যের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে জমির সীমানা নিয়ে দুই জনের বাগ-বিতন্ডার পর আকষ্মিকভাবে এক বৃদ্ধ মারা যান।
সম্প্রতি এমন অপমৃত্যু নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, শুক্রবার নাটোরের বাগাতিপাড়ায় মাছ ধরতে গিয়ে বড়াল নদের পানিতে তলিয়ে সাদিকুল ইসলাম (৩২) নামের এক আনসার ভিডিপি সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারি দল নদের তলদেশ থেকে তার লাশ উদ্ধার করে। তিনি মৃগীরোগে ভুগছিলেন বলে স্বজনরা জানিয়েছেন। নিহত সাদিকুল ইসলাম বাগাতিপাড়া পৌরসভার দক্ষিণ মুরাদপুর মহল্লার সিদ্দিক সরকারের ছেলে।
এর আগে ১০ নভেম্বর বৃহস্পতিবার বাগাতিপাড়া পৌরসভার আরজিমাড়িয়া এলাকার নওশারা মহল্লায় বাবার বকুনি খেয়ে অভিমান করে বিষপানে চৈতালী মন্ডল চৈতি (১৩ নামের সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া এক ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। সে ওই গ্রামের পলাশ কুমার মন্ডলের মেয়ে । এছাড়াও গত ৯ নভেম্বর বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভারসিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির (বাউয়েট) আইন ও বিচার বিভাগের সপ্তম ব্যাচের ছাত্র মেজবাহুল জারিফ অর্ঘের ঝুলন্ত লাশ তাদের মেস থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে পুলিশ এটিকে আত্মহত্যা বলে ধারনা করছেন।
এদিকে গত ৮ নভেম্বর উপজেলার স্বরাপপুর দেলিপাড়া থেকে মিতু খাতুন (১৩) নামের এক স্কুল ছাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়। বাবা-মায়ের বকুনি খেয়ে অভিমান করে ঘরের আড়ার সাথে নিজের ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে পুলিশের ধারনা। সে লোকমানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল।
অন্যদিকে গত ৬ নভেম্বর রাতে বাগাতিপাড়ার নওশেরা মহল্লার স্বামী-স্ত্রী টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কের কালিহাতীর আনালিয়াবাড়ি এলাকায় সড়ক দূর্ঘটনায় একই সাথে ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান। নিহতরা হলেন, বাগাতিপাড়া উপজেলার আরজি মাড়িয়া গ্রামের আমিরুল ইসলামের ছেলে অসিউল ইসলাম সবুজ (৩০) ও তার স্ত্রী ওসরা খাতুন শোভা (২৬)। পরদিন নিজ এলাকায় তাদের লাশ দাফন করা হয়।
এছাড়াও গত ৫ নভেম্বর দয়ারামপুর ইউনিয়নের নন্দীকুজা এলাকায় বড়াল নদে গোসল করতে গিয়ে মুনসুর রহমান মন্টু (৬৫) নিখোঁজ হলে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল পরদিন বড়াল নদ থেকে তার লাশ উদ্ধার করে। তিনি পার্শ্ববর্তী লালপুর উপজেলার বাসিন্দা হলেও বাগাতিপাড়া উপজেলার নন্দীকুজা গ্রামের শ্বশুর নজির আলীর বাড়িতে দীর্ঘদিন থেকে স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন। অন্যদিকে গত ২ নভেম্বর জমির সীমানা নিয়ে দুই ব্যক্তির মধ্যে বিবাদের জেরে বাগবিতন্ডার পর আকষ্মিকভাবে ছইমুদ্দিন (৬৫) নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তিনি উপজেলার ফাগুয়াড় দিয়াড় ইউনিয়নের ভাটোপাড়া এলাকার বাসিন্দা ছিলেন।
এ বিষয়ে বাগাতিপাড়া থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম বলেন, হঠাৎ করেই এই উপজেলায় অপমৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে গেছে। গত ১০ দিনে ৮ জনের মৃত্যুর ঘটনায় বাগাতিপাড়া থানায় ৬টি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। দূর্ঘটনায় নিহত স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যুর বিষয়টি ঘটনাস্থলের অধীনের বঙ্গবন্ধুসেতু পূর্ব থানা দেখছে। তবে তিন শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার কারন খুঁজতে তদন্ত চলছে। এছাড়াও আত্মহত্যার প্রবণতারোধে সামাজিকভাবে সচেতনতা সৃষ্টির বিষয়েও করনীয় ঠিক করতে পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে বাগাতিপাড়া মহিলা ডিগ্রী কলেজের মনোবিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক মামুনুর রশিদ বলেন, সকল মৃত্যুই দুঃখজনক তবে অপমৃত্যু আরো বেশি দুঃখ জনক। তবে সামাজিক মূল্যবোধ, পারিবারিক বন্ধন, ধর্মীয় অনুশাসনসহ নৈতিকতা বৃদ্ধি বিষয়ে সকলে সচেতন হলে অপমৃত্যূ রোধ করা সম্ভব।