বাগান বিক্রি করে টানানো হলো দক্ষিণ কোরিয়ার ৪ কি.মি. পতাকা


অনলাইন ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 12-11-2022

বাগান বিক্রি করে টানানো হলো দক্ষিণ কোরিয়ার ৪ কি.মি. পতাকা

বিশ্বকাপের মহাযজ্ঞ মাঠে গড়াতে বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। কাতারের মাটিতে ২০ নভেম্বর থেকেই শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর। কাতারের মাটির এই বিশ্বকাপের উন্মাদনা এরই মধ্যে ছুঁয়ে গেছে বাংলাদেশের মানুষের মন এদেশের ফুটবল ভক্তরাও মেতে উঠেছেন সেই ফুটবল উন্মাদনায়।

বাংলাদেশের ফুটবল প্রেমীদের অধিকাংশের প্রিয় দল ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার পতাকা উড়ানোর হিড়িক পড়েছে দেশজুড়ে। তার ছোঁয়া লেগেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরেও।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহবুবুল আলম খোকন তার ছেলের শখ পূরন করতে শহরের মধ্যপাড়ার তালতলায় অবস্থিত তার পাঁচতলা  ভবনের রঙ করেছেন আর্জেন্টিনা পতাকার আদলে।

বিশ্বকাপের এই উম্মাদনায় যুক্ত হয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার দড়িকান্দি ইউনিয়নের খাল্লা গ্রামের পশ্চিম পাড়ার আবু কাউছার মিন্টু। তবে তার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটনার সাক্ষী সবাই, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা নন, মিন্টু উন্মাদনায়ু মেত্যেছে তার প্রিয় দল দক্ষিণ কোরিয়া নিয়ে। তিনি তার নিজ বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়ি পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার লম্বা দক্ষিণ কোরিয়ার পতাকা টানিয়েছেন।

পৈতৃকভাবে পাওয়া একটি আম বাগান ও স্ত্রীর ব্যাংকে জমানো টাকা দিয়ে মিন্টু এই পতাকা বানিয়েছেন। প্রতিদিন তার এই পতাকা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন ভীড় করছেন। তার এই পতাকা টানানো এলাকায় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

খাল্লা গ্রামের পশ্চিম পাড়ার হাজী আবুল হাশেমের ছেলে আবু কাউছার মিন্টু ১৯৯৮ সালে জীবন জীবিকার তাগিদে দক্ষিণ কোরিয়া যান। ২০০২ সালে ফুটবল বিশ্বকাপের আসর দক্ষিণ কোরিয়ায় হয়। সে সময় মাঠে বসে মিন্টু দক্ষিণ কোরিয়ার খেলা উপভোগ করেন। সে সময় থেকেই সে দক্ষিণ কোরিয়া ফুটবল দলকে সাপোর্ট করতে থাকেন। সেই থেকেই সে দক্ষিণ কোরিয়া ফুটবল টীমের ভক্ত হয়ে যায়।

২০০৬ সালে মিন্টু ছুটিতে দেশে ফিরে এসে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার তেজখালী ইউনিয়নের তেজখালী গ্রামের পশ্চিম পাড়ার সাবিনা বেগমকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর মিন্টুর দক্ষিণ কোরিয়া দলের প্রতি ভালোবাসা দেখে সাবিনাও দক্ষিণ কোরিয়া দলের ভক্ত হয়ে যায়। ২০১৩ সালে মিন্টু প্রবাস জীবন শেষ করে দেশে ফিরে গাজীপুরে ব্যবসা শুরু করেন।

২০১৮ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের সময় মিন্টু ঢাকার বিমানবন্দর এলাকার ওভার ব্রিজে প্রায় ১ হাজার ফুট লম্বা দক্ষিণ কোরিয়া ফুটবল দলের পতাকা টানিয়েছিলেন। চলতি বিশ্বকাপকে সামনে রেখে মিন্টু ও তার স্ত্রী সাবিনা প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ করে মিন্টুর গ্রামের বাড়ি থেকে তার শ্বশুর বাড়ি পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার লম্বা দক্ষিণ কোরিয়ার পতাকা টানান।

শুধু তাই নয়, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতি ভালোবাসা স্বরূপ তারা প্রতিদিন ভাত খান দক্ষিণ কোরিয়ার পতাকাযুক্ত প্লেটে, পানি পান করেন দক্ষিণ কোরিয়ার পতাকাযুক্ত মগে। গত বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত স্থানীয়দের সহায়তায় মিন্টু পতাকাটি টানান। 

এ ব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দা অনিক মিয়া বলেন, আবু কাউছার মিন্টু ভাই ১৯৯৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় যান। সেখান থেকে দেশে ফিরে আসেন ২০১৩ সালে। দেশে ফিরে আসলেও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতি তার ভালোবাসা কমেনি। সে ভালোবাসা থেকেই সে এবছর বিশ্বকাপে দক্ষিণ কোরিয়াকে সমর্থন করে ৪ কিলোমিটার পতাকা বানিয়েছে। আমরা জানতে পেরেছি পতাকা বানাতে গিয়ে সে তার আম বাগান বিক্রি করেছে। আমরা তাকে ধন্যবাদ জানাই।

আবু কাউছারের স্ত্রী সাবিনা বেগম বলেন, আমাদের বিয়ে হয়েছি ২০০৬ সালে। এরপর থেকেই আমার স্বামী দক্ষিণ কোরিয়া সম্পর্কে অনেক কথা জানিয়েছেন। তার কাছ থেকে শুনে আমিও দক্ষিণ কোরিয়া ফুটবল দলকে সমর্থন করি। আমাকেও দক্ষিণ কোরিয়া নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতি ভালবাসা থেকে চার বছর ধরে মাটির ব্যাংকে জমানো টাকা ও আম বাগান বিক্রি করে এই পতাকা বানিয়েছি।

এ ব্যাপারে আবু কাউছার মিন্টু বলেন, প্রথম যখন বিশ্বকাপ দেখেছিলাম, তখন দক্ষিণ কোরিয়া দলের আঞ্জুয়ান নামের একজন খেলোয়ার দুর্দান্ত খেলতেন। তার খেলা দেখেই আমি দলটির ভক্ত হই। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে দেশে ফিরলেও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতি আমার ভালোবাসা কমেনি। গত বিশ্বকাপেও আমি রাজধানীর বিমান বন্দর এলাকার ওভার ব্রীজে ১ হাজার ফুট লম্বা দক্ষিণ কোরিয়ার পতাকা ঝুলিয়েছিলাম। এবারের বিশ্বকাপে স্ত্রীর জমানো টাকা ও আমার আম বাগান বিক্রি করে ৫ লাখ টাকা খরচ করে ৪ কিলোমিটার লম্বা পতাকাটা বানিয়েছি। আমি চাই এই পতাকার মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষ বাংলাদেশকে ভালোভাবে চিনুক ও জানুক।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]