সারাদেশের সড়ক-যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ ও উন্নত করতে দেশের নয়টি অঞ্চলে ১০০টি সেতু নির্মাণ করেছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)। ৮৭৯ কোটি ৬১ লাখ ৫৭ হাজার টাকা ব্যয়ে সেতুগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। আগামীকাল ৭ নভেম্বর এই সেতুগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সেতুগুলো চালু হলে দেশের বিভিন্ন আঞ্চলিক, জেলা ও জাতীয় মহাসড়কের নেটওয়ার্ক আরও শক্তিশালী হবে বলে সওজের কর্মকর্তারা জানান।
এ বিষয়ে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী জনকণ্ঠকে বলেন, ‘আগামী ৭ নভেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারাদেশের ১০০ সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।’ এই সেতুগুলো চালু হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ ও দ্রুত হবে বলে জানান তিনি।
সওজের সূত্র জানায়, ১০০ সেতুর মধ্যে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল অঞ্চলে বেশি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৫টি সেতু রয়েছে চট্টগ্রাম অঞ্চলে। পার্বত্য অঞ্চলের সড়কগুলোতে বেশকিছু ‘মিসিং লিংক’ ছিল। এই সেতুগুলোর মাধ্যমে সেটা দূর করা হয়েছে। সাড়ে ১৬ থেকে ১৮০ মিটার পর্যন্ত দীর্ঘ ৪৫টি সেতু নির্মাণে ২৩৮ কোটি ২৪ লাখ ৫৪ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ১৮০ দশমিক ৩৭ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে চট্টগ্রাম জেলার দোহাজারীর মইজ্জারটেক-বোয়ালখালী-কানুনগোপাড়া-উদরবন্যা সড়কে। এই সড়কের দীর্ঘদিনের জরাজীর্ণ ও সংকীর্ণ কালারপোল ওহিদিয়া সেতুটি আরও বড় করে নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে ২৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।
সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন সড়কে নির্মাণ করা হয়েছে ১৭টি সেতু। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় ৭০২ দশমিক ৩২ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে সুনামগঞ্জ জেলার পাগলা-জগন্নাথপুর-রাণীগঞ্জ-আউসকান্দি সড়কে। সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৯১ কোটি ৬ লাখ ৮২ হাজার টাকা। স্থানীয়ভাবে সেতুটি রানীগঞ্জ কুশিয়ারা ব্রিজ হিসেবে পরিচিত। এছাড়া সিলেট অঞ্চলের ছোট সেতুর দৈর্ঘ্য ৩১ দশমিক ৮৩ মিটার। ১৭টি সেতু নির্মাণে মোট ২৯০ কোটি ৭০ লাখ ৭৩ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে।
বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন সড়কে ১৪টি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় ৮৫ দশমিক ১৫ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর-কাঠালিয়া-আমুয়া-বামনা-পাথরঘাটা সড়কে। স্থানীয়ভাবে এটি তালগাছিয়া সেতু হিসেবে পরিচিত। এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৪ কোটি ২০ লাখ টাকা। মোট ১৪টি সেতু নির্মাণ ব্যয় হয়েছে ৯৬ কোটি ৬৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
ময়মসসিংহ অঞ্চলে ছয়টি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় ১২৫ দশমিক ৫০ মিটার সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে জামালপুর-শেরপুর-বনগাঁও সড়কে। স্থানীয়ভাবে এটি পোড়াদাহ সেতু নামে পরিচিত। সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২০ কোটি ৯২ লাখ টাকা। ৬টি সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৭৭ কোটি ৮৬ লাখ ৪১ টাকা। এই সেতুগুলো চালু হলে ময়মনসিংহ অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত হবে বলে স্থানীয় সূত্র জানায়।
রংপুর, রাজশাহী ও গোপালগঞ্জ অঞ্চলের বিভিন্ন সড়কে পাঁচটি করে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এরমধ্যে রংপুর অঞ্চলের দিনাজপুরের বীরগঞ্জ-কাহারোল জেলা মহাসড়কের পুনর্ভবা নদীর ওপর ১১২ দশমিক ৫৬ মিটার দীর্ঘ সেতুসহ মোট ৫টি সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৪৭ কোটি ২৯ লাখ ৫৯ হাজার টাকা।
রাজশাহীর পুঠিয়া-বাগমারা সড়কে ৫৭ দশমিক ৭১ মিটার দীর্ঘ সেতুসহ ৫ সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২৮ কোটি ৪৮ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। গোপালগঞ্জের রাজবাড়ী জেলার রাজবাড়ী-বালিয়াকান্দি-জামালপুর-মধুখালী মহাসড়কে ৬৬ দশমিক ৮৩ মিটার দীর্ঘ গাইজার পাড়া সেতুসহ মোট ৫টি সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩২ কোটি ৫১ লাখ ৬৯ হাজার টাকা।
এছাড়া ঢাকা অঞ্চলের মানিকগঞ্জের আরিচা-ঘিওর-দৌলতপুর-টাঙ্গাইল আঞ্চলিক মহাসড়কে ১০৩ দশমিক ৪৩ মিটার ঘিওর সেতু এবং ঢাকা-উথুলী-পাটুরিয়া জাতীয় মহাসড়কে ৮৫ দশমিক ১৫ মিটার গাজীখালী সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এই সেতু দুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৫৬ কোটি ৮৫ লাখ ৫২ হাজার টাকা।
কুমিল্লা অঞ্চলের নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ-সোনাইমুড়ী-রামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে ৬০ দশমিক ৭৫ মিটার দীর্ঘ কালারপুর সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১১ কোটি ৯৫ হাজার টাকা। এই সেতুগুলো চালু হলে আঞ্চলিক, জেলা ও জাতীয় মহাসড়কের যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল আরও সহজ হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।