কুপিয়ে বাম পা কেটে বিচ্ছিন্ন মামলার প্রধান আসামি সিদ্দিকুর গ্রেফতার


স্টাফ রিপোর্টার : , আপডেট করা হয়েছে : 05-11-2022

কুপিয়ে বাম পা কেটে বিচ্ছিন্ন মামলার প্রধান আসামি সিদ্দিকুর গ্রেফতার

আলোচিত পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলায় ইউপি সদস্য মামুন হাওলাদারকে প্রকাশ্য দিবালোকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে বাম পা কেটে বিচ্ছিন্ন করে, শরীর ও মুখমন্ডল ক্ষত বিক্ষত ও বিকৃত করে নৃশংসভাবে হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও প্রধান আসামি সিদ্দিকুরকে নারায়ণগঞ্জ সদর থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

গত ৩১ আক্টোবর তারিখ সকাল সাড়ে দশটায় পিরোজপুরের কাউখালীর শিয়ালকাঠী ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মামুন হাওলাদারকে প্রকাশ্য দিবালকে কতিপয় দুষ্কৃতিকারী কুপিয়ে বাম পা কেটে বিচ্ছিন্ন করে, শরীর ও মুখমন্ডল ক্ষত বিক্ষত ও বিকৃত করে নৃশংসভাবে খুন করে। ওই ঘটনায় ভূক্তভোগীর ছেলে বাদী হয়ে সিদ্দিকুর রহমানকে প্রধান আসামি করে তার সহযোগী সহ আরও ১০ জন এবং অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে ভান্ডারিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু করেছেন। যার মামলা নং-১, তারিখ ১নভেম্বর ২০২২।

চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডের ঘটনা বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ ম্যাধ্যমে গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। ফলশ্রুতিতে র‌্যাব ওই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।

এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত রাতে র‌্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল নারায়ণগঞ্জ সদর থানাধীন এলাকা থেকে চাঞ্চল্যকর ইউপি সদস্য হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও প্রধান আসামি গাজী সিদ্দিকুর রহমান (৫৫), পিতা-মৃত মোসলেম গাজী, সাং-জোলাগাতি ৮নং ওয়ার্ড, থানা-কাউখালী, জেলা-পিরোজপুরকে গ্রেফতার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত সিদ্দিক বর্ণিত ইউপি সদস্য হত্যাকান্ডের ঘটনায় তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।

৪। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, ভিকটিম মামুন হাওলাদার পেশায় একজন ব্যবসায়ী এবং শিয়ালকাঠি ইউনিয়নের ০৯ নং ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য। তার সাথে গ্রেফতারকৃত সিদ্দিকুর, তার ভাই কামাল এবং ভাতিজা আসাদুল এর দীর্ঘদিন যাবৎ পারিবারিক কারণে বিরোধ চলে আসছিল। ২০১১ সালে ভিকটিম মামুনের আত্মীয়া জনৈক নারীকে ধর্ষণ করার দায়ে গ্রেফতারকৃত সিদ্দিকুর এর ভাই কামাল এবং ভাতিজা আসাদুল এর বিরুদ্ধে ভিকটিম মামুন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় আসামি কামাল এবং আসাদুল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয়।

অতঃপর জামিনে মুক্ত হয়ে তারা ভিকটিম মামুনের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে পরিকল্পনা শুরু করে। এছাড়াও বিভিন্ন সময় এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ভিকটিম মামুনের সাথে গ্রেফতারকৃত সিদ্দিকুর ও কামাল এর বিভিন্ন সময় বাক-বিতন্ডা  হয়। এই শত্রুতার জের ধরে গ্রেফতারকৃত সিদ্দিকুরের নেতৃত্বে কামাল, আসাদুল এবং তাদের আরও কয়েকজন সহযোগী মিলে ভিকটিম মামুনকে হত্যার পরিকল্পনা করে। অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে সিদ্দিকুর, কামাল, আসাদুল এবং সজল জমাদ্দারসহ বেশ কয়েকজন মোল্লারহাট বাজারে সিদ্দিকুরের অফিসে একত্রিত হয়ে হত্যার নীলনকশা তৈরি করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ভিকটিম মামুনকে কৌশলে মোটরসাইকেলে করে উত্তর ভিটাবাড়িয়ার একটি স্থানে নিয়ে আসার দায়িত্ব দেওয়া হয় সজল জমাদ্দারকে এবং কামাল ও আসাদুলসহ অন্যান্যদেরকে ধারালো অস্ত্র সংগ্রহ পূর্বক ভিটাবাড়ী এলাকায় গাছ ফেলে মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে কুপিয়ে হত্যাকান্ডের নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সজল জমাদ্দারকে পিটিয়ে আহত করার কথা বলা হয় যাতে করে বিষয়টি নিয়ে জনমনে কোন সন্দেহের সৃষ্টি না হয়।       

প্রতিদিনের ন্যায় সে গত ৩১ অক্টোবর সকালে ইউনিয়ন পরিষদে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়। পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক সজল জমাদ্দার ভুক্তভোগী মামুনকে ইউনিয়ন পরিষদে পৌছে দেয়ার কথা বলে তার মোটরসাইকেলে তোলে এবং রওনা দেওয়ার কথা সিদ্দিকুরকে কৌশলে জানায়। এরপর সিদ্দিকুর তা কামালকে জানায় এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে হবে। মামুনকে নিয়ে সজল উত্তর ভিটাবাড়িয়া আজহারিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার কাছাকাছি এসে পৌছালে সিদ্দিকুরের নির্দেশে পূর্ব থেকেই ওৎ পেতে থাকা কামাল, আসাদুল এবং অন্যান্য সহযোগীরা রাস্তায় গাছ ফেলে মোটরসাইকেলটির গতিরোধ করে এবং একযোগে ভিকটিম মামুনের উপর হামলা চালায়। এসময় দুর্বৃত্তরা বিভিন্ন দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে ভিকটিমের মুখমন্ডল ক্ষত বিক্ষত করে বিকৃত করে দেয় এবং তার বাম পা রামদা দিয়ে কেটে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সজলকে পিটিয়ে আহত করা হয়। এরপর ভিকটিমের শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত পালিয়ে যায়।

গ্রেফতারকৃত গাজী সিদ্দিকুর ঘটনার পরপরই পালিয়ে প্রথমে পিরোজপুর এবং পরে রাজধানীর ফকিরাপুল এলাকায় আত্মগোপন করে। এরপর সে অবস্থান পরিবর্তন করে রাজধানী হতে নারায়ণগঞ্জ সদর থানাধীন এলাকায় আত্মগোপন করে। সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জে আত্মগোপনে থাকাকালীন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতারকৃত গাজী সিদ্দিকুর রহমান ১৯৮৪ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ঢাকায় এসে তার এলাকার জনৈক ঠিকাদারের সাথে তার সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করে। এ সময় সে রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করত।

২০০২ সালে সে তার ঠিকাদারীর কাজ ছেড়ে দিয়ে গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরে ফিরে যায়। গ্রামে ফিরে গিয়ে সে মুরগীর ফার্ম এবং মাছের ব্যবসা শুরু করে। পরবর্তীতে ২০০৩ সালে স্বতন্ত্রভাবে শিয়ালকাঠি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে ২০১১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে। ২০১১ সালের পর এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, বিভিন্ন ধরণের বিরোধের জের ধরে তার নানাবিধ অপকর্মের সাথে সংশ্লিষ্টতা ছিল। তার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা, ধর্ষণ, ডাকাতি এবং অস্ত্র মামলাসহ প্রায় ১০ টি মামলা রয়েছে এবং এসকল মামলায় সে একাধিকবার কারাভোগ করেছে।  


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]