২০১০ সালে ময়মনসিংহের গৌরিপুরে চাঞ্চল্যকর কাজিম উদ্দিন হত্যা মামলায় ১২ বছর যাবৎ দেশে ও মালয়েশিয়ায় পলাতক প্রধান আসামি মোঃ সোহেল মিয়া’কে রাজধানীর মতিঝিল থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৩।
র্যাব-৩ এর একটি চৌকষ আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ৩ নভেম্বর ভোর ৪টায় রাজধানীর মতিঝিল এলাকা থেকে ২০১০ সালে ময়মনসিংহের গৌরিপুরে চাঞ্চল্যকর মোঃ কাজিম উদ্দিন হত্যা মামলার ১২ বছর যাবৎ দেশে ও মালয়েশিয়ায় পলাতক প্রধান আসামি মোঃ সোহেল মিয়া (৩৫), পিতা-আবুল কাশেম, সাং-চরপাড়া, থানা-গৌরিপুর, জেলা-ময়মনসিংহ’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় , ভিকটিম কাজিম উদ্দিন এবং ধৃত আসামী সোহেল মিয়া একই এলাকার বাসিন্দা ছিল। পারিবারিক সম্পত্তির দখল নিয়ে তাদের দুই পরিবারের মধ্যে পূর্ব থেকেই বিরোধ চলে আসছিল। জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ভিকটিম কাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে একটি দেওয়ানী মামলাও করেছিলেন। এক পর্যায়ে ২৯ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখ বেলা ১১টায় ধৃত আসামী সোহেল মিয়ার চাচা এবং উক্ত হত্যা মামলার অপর আসামী মোঃ আবুল হাশেম ভিকটিম কাজিম উদ্দিন এর বাড়ির পিছনের বাঁশঝাড়ে বাঁশ কাটতে গেলে ভিকটিম কাজিম উদ্দিন তাকে তার জমির বাঁশঝাড় হতে বাঁশ কাটতে বাধা প্রদান করলে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটির সৃষ্টি হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ধৃত আসামী সোহেল মিয়াসহ মামলার অপর আসামীরা ঘটনাস্থলে দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে উপস্থিত হয়ে ভিকটিম কাজিম উদ্দিনকে বেধড়ক পিটাতে থাকে। এক পর্যায়ে ধৃত আসামী সোহেল মিয়া তার হাতে থাকা বাশের লাঠি দিয়ে ভিকটিম কাজিম উদ্দিন এর মাথায় সজোরে আঘাত করতে থাকলে ঘটনাস্থলেই ভিকটিম এর মাথার মগজ এর একাংশ বের হয়ে আসে। গুরুতর আহত অবস্থায় ভিকটিম কাজিম উদ্দিনকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। উক্ত ঘটনায় ভিকটিম কাজিম উদ্দিন এর ভাতিজা মোঃ নয়ন মিয়া বাদী হয়ে গৌরিপুর থানায় ধৃত মোঃ সোহেল মিয়াকে প্রধান আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
জিজ্ঞাসাবাদে আরোও জানা যায় , গ্রেফতারকৃত মোঃ সোহেল মিয়া উক্ত হত্যাকান্ডের পর থেকেই তার বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে পলাতক জীবন যাপন শুরু করে। তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক ২০১৩ সালে উক্ত মামলার চার্জশীট দাখিলের পর সে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক ধৃত হয়ে ১০ মাস জেল খেটে জামিনে বের হয়। জামিনে বের হয়ে সে কিছুদিন নিয়মিত কোর্টে হাজিরা দেয় এবং তারপর ২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে দালালের মাধ্যমে অবৈধ পথে মালয়েশিয়া পাড়ি জমায়। মালয়েশিয়ায় সে একটি ওয়েল্ডিং ওয়ার্কশপে দিনমজুর এর কাজ করত। ভিসা জটিলতার কারণে ২০১৯ সালে তাকে দেশে ফিরে আসতে হয়। দেশে এসে সে আর তার গ্রামের বাড়িতে ফিরে না গিয়ে বিমানবন্দর থেকে সরাসরি কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে আসে এবং তখন থেকেই রাজধানীর কমলাপুর এলাকায় কখনো পাগল বেশে ভিক্ষা করে আবার কখনো রিক্সা চালিয়ে পলাতক ফেরারী জীবন যাপন করে আসছে এবং তার পরিবারের সঙ্গে মাঝেমাঝে মোবাইলে যোগাযোগ বজায় রাখত।
গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।