হজরত মুসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর নির্দেশে তুর পাহাড়ে যান। তিনি তুর পাহাড়ে যাওয়ার পর তাঁর জাতি গো-বাছুর বানিয়ে (প্রতিমূর্তির) উপাসনা শুরু করে। তুর পাহাড় থেকে মুসা আলাইসি সালাম অহি নিয়ে এসে দেখলেন, তার জাতি শিরকের মতো জঘন্য অপরাধে লিপ্ত হয়েছে। তখন মুসা আলাইহি সালাম তার জাতিকে আল্লাহর পথে ফিরে আসতে তওবার নির্দেশ দিলেন। সেই তওবা তথা ক্ষমা প্রার্থনার নির্দেশের বর্ণনা আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে এভাবে তুলে ধরেছেন-
وَ اِذۡ قَالَ مُوۡسٰی لِقَوۡمِهٖ یٰقَوۡمِ اِنَّکُمۡ ظَلَمۡتُمۡ اَنۡفُسَکُمۡ بِاتِّخَاذِکُمُ الۡعِجۡلَ فَتُوۡبُوۡۤا اِلٰی بَارِئِکُمۡ فَاقۡتُلُوۡۤا اَنۡفُسَکُمۡ ؕ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ عِنۡدَ بَارِئِکُمۡ ؕ فَتَابَ عَلَیۡکُمۡ ؕ اِنَّهٗ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِیۡمُ
‘আর যখন মুসা তার সম্প্রদায়কে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদেরই ক্ষতিসাধন করেছ এই গো-বাছুর নির্মাণ করে। কাজেই এখন তওবা কর স্বীয় প্রভুর কাছে এবং নিজ নিজ প্রাণ বিসর্জন দাও। তোমাদের স্রষ্টার কাছে এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর। এরপর তোমাদের প্রতি (ক্ষমা করা হলো) লক্ষ্য করা হলো। নিঃসন্দেহে তিনিই ক্ষমাকারী, অত্যন্ত মেহেরবান। (সুরা বাক্বারা : আয়াত ৫৪)
এ আয়াতে তওবা তথা ক্ষমার পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে। মুসা আলাইহিস সালাম তার কওমকে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দেওয়ার অর্থ এই যে, তাঁদেরকে (উম্মাত) যিনি সৃষ্টি করেছেন, তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যের উপাসনা শুরু করেছে, যা মারাত্মক এবং সবচেয়ে বড় জুলুম বা অত্যাচার।
এক বর্ণনায় এসেছে, মুসা আলাইহিস সালাম স্বজাতিকে আল্লাহর নির্দেশ শুনিয়ে দেন এবং যারা গো-বাছুরের পূজা করেছিল তাদেরকে বসিয়ে দেন, অন্যান্য লোকগণ দাঁড়িয়ে গিয়ে তাদেরকে হত্যা করতে শুরু করে। আল্লাহর নির্দেশে ঐ জায়গা অন্ধকারে ছেয়ে যায়। ফলে মানুষ হত্যা বন্ধ হয়। এ সময়ে প্রায় সত্তর হাজার বনি ইসরাইল হত্যা হয়। তারপর তারা তওবা করলে, সমগ্র গোত্রের তওবা কবুল হয়। আর ঐ কঠোর নির্দেশ পালন করতে গিয়ে আপন ও পর সবাইকে হত্যা করেছিল। ফলে করুণাময় আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করেছিলেন।
অন্য বর্ণনায় এসেছে, যারা জীবিত ছিল আল্লাহ তাদের ক্ষমা করেন। আর যারা হত্যা হয়েছিল আল্লাহ তাআলা তাদের শহিদের সওয়াব দান করেন।
হজরত মুসা ও হারুন আলাইহিস সালাম হত্যা দেখে আল্লাহর দরবারে এ বলে প্রার্থনা করেছিলেন-
‘হে আল্লাহ! এখন তো বনি ইসরাইল দুনিয়া থেকে নিঃশেষ হয়ে যাবে।’
সুতরাং তাদের জীবিত ও মৃত সবাইকে ক্ষমা করে দেয়া হয়। আল্লাহ বলেন-
‘হে আমার নবিগণ! তোমরা নিহতদের জন্য দুঃখ করো না, তাঁরা আমার কাছে শহিদের মর্যাদা পেয়েছে। তারা জীবিত রয়েছে এবং আহার পাচ্ছে। তখন মৃতদের স্ত্রী, সন্তান-সন্তুতিদের বিলাপ বন্ধ হয়। পিতা-পুত্র-ভাইয়ে-ভাইয়ে রক্তারক্তি বন্ধ হয়ে যায় এবং পরম দয়ালু আল্লাহ তাআলা তাদের তওবা কবুল করেন।
এ আয়াত থেকেও প্রমাণিত হলো যে, মহান আল্লাহ তাআলা তওবা বা ক্ষমা-প্রার্থনা করাকে ভালোবাসেন। সুতরাং এ আয়াতের শিক্ষা উম্মাতে মুসলিমার জন্য অনুকরণীয় আদর্শ।
আল্লাহ তাআলা সবাই গুনাহ বা অন্যায় হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর কাছে তওবা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।