ভাইয়াদের ফাঁদে শিক্ষা নগরীর শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা!


মঈন উদ্দিন , আপডেট করা হয়েছে : 20-10-2022

ভাইয়াদের ফাঁদে শিক্ষা নগরীর শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা!

শিক্ষা নগরীর রাজশাহীর শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঘিরে কোচিং ব্যবসার পাশাপাশি এবার শুরু হয়েছে পাঠদানের নতুন আরেকটি পদ্ধতি সেটি হলো বিভিন্ন “ভাইয়ার ব্যাচে কোচিং”। রাজশাহী নগরীতে এখন প্রায় শতাধিক ভাইয়াদের কোচিং সেন্টার রয়েছে। ভাইয়াদের নিকট পড়াতে গেলে দিতে হয় অগ্রীম এককালীন মোটা অংকের টাকা। সন্তানদের প্রাইভেট, কোচিং নিয়ে বিড়ম্বনায় রয়েছে অভিভাবকরা। অনেক অভিভাবক প্রাইভেট ও কোচিংয়ের বিপক্ষে থাকলেও শিক্ষকদের ক্লাসে ঠিকমতো পাঠদান না করানোর কারণে বাধ্য হয়ে সন্তানকে কোচিং এর ভাইয়াদের নিকট পড়াতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন অভিভাবকরা। 

রাজশাহীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে সন্তানদের এইচএসসিতে ভালো কলেজে চান্স পাওয়ানোর জন্য নগরীতে কোচিং করাতে আসা এসএসসি ফল প্রার্থীর অভিভাব করা বলেন, কোচিংগুলোতে যে খরচ তাতে বাচ্চাদের পড়ানো হয়ে উঠছে না। আর ভাইয়াদের বিভিন্ন রকমের আলাদা সিস্টেম, এক ভাইয়া গণিত পড়াবে তো আরেক ভাইয়া ফিজিক্স, কেউ বাংলা পড়াবে তো আরেকজন অর্থনীতি। ইংলিশ আলাদা, রসায়ন আলাদা। তাও আবার অগ্রীম টাকা পরিশোধ করতে হবে। এটা কোন সিস্টেম পড়ালেখা চলছে বুঝে আসছে না। ব্যক্তিগত লাভ করছে কোচিং আর ভাইয়া সিন্ডিকেট মিলে। মাঝখানে আমরা অভিভাবকরা বেকায়দায়। এ ব্যাপারে জোরালোভাবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দেখা উচিত বলে জানান তারা।

বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর এলাকার আতাউর রহমানের ছেলে রাজশাহীর একটি সরকারী স্কুলের ছাত্র। আতাউর রহমান বলেন, আমার ছেলে নবম শ্রেণীর ছাত্র, তার একেকজন ভাইয়ার নিকট সাবজেক্ট অনুযায়ী অগ্রিম ৮ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা দিয়ে পড়াতে হচ্ছে, তাও আবার এককেটি ব্যাচে ২০ থেকে ৩০ জন করে পড়াচ্ছে।

নগরীর কুমারপাড়া এলাকার ফিরোজ হোসেন এক অভিভাবক জানান, তার ছেলে এবার এসএসসি পরিক্ষার ফলপ্রার্থী। তার ছেলের জন্য কলেজে ভর্তি কোচিং করানোর জন্য উপশহর এলাকার একটি ভাইয়াদের কোচিং সেন্টারে কোর্স ফী’র জন্য অগ্রিম পরিশোধ করতে হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। তিনি বলেন, রাজশাহী নগরীর উপশহর এলাকায় এ ধরণের ভাইয়াদের কোচিং সেন্টার অর্ধশতাধিক গড়ে উঠেছে।

রাজশাহী নগর ভবনের পশ্চিমে সবচেয়ে বড় কোচিং সেন্টার সান-ডায়াল অবস্থিত। ৩৫ বছর ধরে কোচিং করানো হচ্ছে যা তাদের লিফলেটে লেখা রয়েছে, এখানে চতুর্থ শ্রেণী থেকে সর্বোচ্চ এসএসি পর্যন্ত ব্যাচ খোলা হয়েছে। এখানে এসএসসি প্রিপারেশন তিন মাসের পরীক্ষা ব্যাচের কোর্স ফি ৮০০০ টাকা ও তিন মাসের ক্লাস ব্যাচের কোর্স ফি ৯০০০ টাকা। এখানে সবগুলো বিষয় পড়ানো হয় বলে অভিভাবকদের চাহিদা বেশি ।

এই কোচিং সেন্টারের পাশের বিল্ডিংয়ে জাহিদ ফিজিক্স নামে আরেকটি প্রাইভেট সেন্টার রয়েছে। এখানে পদার্থসহ আর দুটি বিষয়ে পড়ানো হয়। রুয়েট থেকে পাশ করা ইঞ্জি.জাহিদুল ইসলাম এটি পরিচালনা করছেন। এখানে সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায় এখানে ভর্তি হতে হলে অগ্রীম ১৩,০০০ হাজার টাকা জমা দিতে হয়। 

মহানগরীর সোনাদিঘি মোড়ের মালোপাড়ায় মাসুদ স্যারের হিসাববিজ্ঞান ও ফিনান্স প্রাইভেট কোচিং সেন্টার। পরিচালক মাসুদ রাজশাহী বিশ্ব বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র। এখানে এইচএসসি পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য নেয়া হচ্ছে দশ হাজার টাকা। অর্ধেক পেমেন্ট অগ্রীম দিয়ে ভর্তি বাকি অর্ধেক পরবর্তীতে নেয়া হয়। নগরীজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইংলিশ লার্নিং সেন্টার, ক্রিয়েটিভ ম্যাথ, জনি বাংলা একাডেমি ও এডমিশন কেয়ার, সালমান ইংলিশ একাডেমি, ওবাইদুল ইংলিশ, সজল ভাইয়ার সাধারন জ্ঞান, সামিরম্যাথ ফাইনাল পিপারেশন, ডা: তৌহিদের বাইলোজি ও মেডিকেল এডমিশন, নিউরন প্লাস, মুকুল ভাইয়ের বিএসসি ও ডিপ্লোমা নার্সিং, প্রান্ত ফিজিক্স, চঞ্চল ফিজিক্স, আজমুল ইংলিশ, জুয়েল কিবরিয়া স্যারের (বাংলা) এইচএসসি ১ম ও ২য় বর্ষ, বিশ^বিদ্যালয় কোচিং, ইসমাইল কেমিস্ট্রি, শরীফ অর্থনীতি ও পরিসংখ্যান সহ আরো বিভিন্ন ভাইয়ার প্রাইভেট কোচিং সেন্টারের সাইন বোর্ড দেখতে পাওয়া যায়।

শিক্ষার অবস্থা ও কোচিংয়ের ভাইয়া বানিজ্য নিয়ে শিক্ষাবিদরা বলেন, শিক্ষা হবে প্রাতিষ্ঠানিক। বর্তমানে শিক্ষাকে বানিজ্যকরণ করা হয়েছে। স্কুল-কলেজগুলোতে সরকারী বেতভুক্ত শিক্ষক থাকাকালীন সময়ে লেখা-পড়ায় যাতে কাউকে কোচিং না করতে হয় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে গুরুত্বসহকারে ভুমিকা রাখা দরকার। তারা বলেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটে মেডিকেলে ভর্তির জন্য জিপিএ ফাইভকে একটি যোগ্যতা হিসেবে দেখা হচ্ছে এটা উঠিয়ে দেয়া উচিত। কারণ এখানে বলা হচ্ছে জিপিএ ফাইভ না পেলে শিক্ষার্থীর যোগ্যতা কম। যদি পরীক্ষাগুলোতে এই সিস্টেম উঠিয়ে দিয়ে সকলেই আবেদন করার সুযোগ পায় তাহলে জিপিএ ফাইভের প্রতি শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ কমে আসবে। শিক্ষার্থীরা প্রকৃত লেখাপড়া করবে, অতিরিক্ত চাপ নিতে হবে না। অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা কমে আসবে।

অগ্রীম টাকা নিয়ে ভর্তির ব্যপারে শিক্ষাবিদরা বলেন, এটা অমানবিক। এটা কসাইয়ের কাজ। বানিজ্য করার জায়গা শিক্ষা নয়। কিছু শিক্ষক ও কোচিং সেন্টার ঠিক এই কাজ করছে। এখন সিন্ডিকেট চলছে অগ্রীম টাকা নেয়ার। যদি কাউকে কোন কারণে রাজশাহী ছাড়তে হয় তবে তার সেই অগ্রীম টাকাগুলো ফেরত দেয়া হচ্ছে না। এমন প্রতারণার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো উচিত যারা এককালীন অগ্রীম টাকা নিয়ে শিক্ষাকে ব্যবসা বানিয়েছে।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]