ধর্ষণ ও হত্যা মামলা থেকে অব্যহতি পেয়েছেন সায়েম সোবহান আনভীরসহ সব আসামী


অনলাইন ডেস্ক: , আপডেট করা হয়েছে : 19-10-2022

ধর্ষণ ও হত্যা মামলা থেকে অব্যহতি পেয়েছেন সায়েম সোবহান আনভীরসহ সব আসামী

ঢাকার গুলশানে কলেজ ছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় 'ধর্ষণ ও হত্যা' মামলার অভিযোগ থেকে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর ও তার পরিবারের সদস্যদের অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

বুধবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পিবিআই।

পুলিশ বলছে, তাদের তদন্তে হত্যা বা ধর্ষণের অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে মামলার বাদী ও মৃত মোসারাত জাহান মুনিয়ার বোন নুসরাত জাহান বলেছেন, তিনি এই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দেবেন। বোনের জন্য বিচার পেতে তিনি আইন ও আদালতের যতদূর যাওয়া সম্ভব, তিনি যাবেন বলে জানিয়েছেন।

গত বছর এপ্রিল মাসে ওই তরুণীর মৃত্যুকে ঘিরে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয় বাংলাদেশে। মি. আনভীর বাংলাদেশের বৃহত্তম শিল্পগোষ্ঠীর একটি বসুন্ধরার ব্যবস্থাপনা পরিচালক হওয়ায় তার দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে বিস্তর তর্কবিতর্ক হয় তখন। পরে এক পর্যায়ে সেপ্টেম্বর মাসে মি. আনভীর, তার স্ত্রী ও বাবা-মাসহ আটজনকে দায়ী করে একটি ধর্ষণ ও হত্যা মামলা করেন মৃত তরুণীর বোন নুসরাত জাহান। এ মামলায় আরও আসামী ছিলেন মুনিয়া যে বাড়িতে ভাড়া থাকতেন, সেই বাড়ির মালিকসহ আরও কয়েকজন। তবে বসুন্ধরা গ্রুপের একজন মুখপাত্র এই মামলাকে ''অসৎ উদ্দেশ্য প্রণোদিত'' বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে পিবিআইকে তদন্তের আদেশ দিয়েছিলেন।

বুধবার আদালতে প্রতিবেদনটি জমা দেয়া হলেও পিবিআই চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাঠিয়েছে গত ২৬শে সেপ্টেম্বর। 

পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সরোয়ার জাহান বলছেন, এই মামলায় যে কয়েকজনকে আসামী করা হয়েছিল, সবাইকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে, এখানে দুটি অভিযোগ আছে। একটি হচ্ছে ধর্ষণ, আরেকটি হত্যা।

''এখানে ধর্ষণের ঘটনায় আমরা প্রমাণ পাইনি, কারণ হচ্ছে দুজন অ্যাডাল্ট ছেলেমেয়ে, তাদের দুজনের সম্মতিতেই এক জায়গায় ছিল, এক জায়গায় অবস্থান করেছে, এই মর্মে আমরা তথ্যপ্রমাণ পেয়েছি। আর হত্যার বিষয়টি প্রমাণিত হয়নি। কারণ এখানে সুইসাইডের ঘটনা ঘটেছে। এখানে কোন প্ররোচনার ইস্যুটাও আসেনি।''

আইনের নিয়ম অনুযায়ী, মামলার বাদী পক্ষ এই প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট না হলে আদালতে নারাজি বা আপত্তি জানাতে পারেন। সেক্ষেত্রে আদালত চাইলে অন্য কোন সংস্থাকে পুনরায় তদন্তে আদেশ দিতে পারবে অথবা মামলা খারিজ করেও দিতে পারে।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, যেহেতু মামলার তদন্তে তারা ধর্ষণ বা হত্যার আলামত পাননি, এসব কারণে অন্য যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন দেখেননি।

যখন কোন মামলায় তদন্ত শেষে পুলিশ অভিযুক্তদের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে না পায় অথবা অভিযোগ প্রমাণিত না হয়, তখন চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে থাকে। সেখানে অভিযুক্তদের অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশও করা হয়। তবে তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযোগপত্র দিয়ে থাকে পুলিশ।

পিবিআইয়ের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়ার বিষয়ে জানার পর মামলার বাদী নুসরাত জাহান বলেছেন, ''আমি এখনো এটা মুখে মুখে শুনেছি। এখন তারা কি প্রতিবেদন দিয়েছে, সেই কাগজ আদালত থেকে তুলে কোন কোন পয়েন্ট দিয়েছে, বিস্তারিত জেনে আমি অবশ্যই নারাজি দেবো"।

"কারণ এখানে তো অব্যাহতির প্রশ্নই আসে না। বোনের জন্য বিচার পেতে আইনের যে প্রক্রিয়া, আদালতের যে প্রক্রিয়া- সেই অনুযায়ী আমি কাজ করবো। এই দেশে যতক্ষণ বিচার ব্যবস্থা আছে, ততোক্ষণ আমি চেষ্টা করবো,'' বলেন মিজ জাহান।


মোসারাত জাহান মুনিয়া উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের একজন ছাত্রী ছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানের একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিয়ে কয়েকমাস ধরে তিনি একাই থাকছিলেন। ২০২১ সালের ২৬শে এপ্রিল গুলশানের অ্যাপার্টমেন্টের ফ্ল্যাটে ঢুকে মুনিয়ার মৃতদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন তার বোন। পরে পুলিশ ওই বাসায় গিয়ে দেখতে পায় যে, মৃতদেহটি সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলছে। রাতেই মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। রাতে মেয়েটির বড়বোন গুলশান থানায় একটি মামলা দায়ের করেন, তাতে ''আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার'' অভিযোগ আনা হয়।

পুলিশ তখন জানিয়েছিল, মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে যে ওই তরুণীর সাথে মি. আনভীরের দুই বছর যাবৎ সম্পর্ক ছিল। সেই মামলার তদন্ত শেষে ১৮ই অগাস্ট পুলিশ যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়, সেখানে মামলা থেকে একমাত্র অভিযুক্ত সায়েম সোবহান আনভীরকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

পরবর্তীতে মোসারাতের বোন নুসরাত জাহান ৬ই সেপ্টেম্বর ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ এনে নালিশি মামলা করেন। আদালত মামলাটি এজাহার হিসাবে রেকর্ড করার জন্য গুলশান থানাকে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি পিবিআইকে তদন্ত করার আদেশ দেন। এক বছরের বেশি সময় তদন্তের পর সেই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিলো পিবিআই।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]