রাজশাহীর পদ্মার পাড় ও প্রাচীন দর্শনীয় স্থান ঘিরে রয়েছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা!


মঈন উদ্দীন: , আপডেট করা হয়েছে : 11-10-2022

রাজশাহীর পদ্মার পাড় ও প্রাচীন দর্শনীয় স্থান ঘিরে রয়েছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা!

নির্মল দুষণমুক্ত নগরী হিসেবে রাজশাহীর পরিচিতি আজ বিশ্বজুড়ে। এ নগরী একই সাথে বিভিন্ন নামে পরিচিত, রেশম নগরী, শিক্ষা নগরী, আমের রাজধানী, শান্তির নগরী, সবুজ নগরী, ক্লিন সিটি অন্যতম। রাজশাহীর সিল্ক দেশের সুনামের গন্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। রাজশাহীতে রয়েছে সকল ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রয়েছে সুশিক্ষার সুন্দর পরিবেশ। যে একবার রাজশাহী থেকে ঘুরে গেছেন, রাজশাহীর প্রশংসা অবশ্যই তার মুখেই শুনবেন। প্রাচীন জনপদটি সবুজ ও নির্মল বায়ুর শহর এটি, যেখানে নীরবে, নিভৃতে, কোনো ঝামেলা ছাড়াই একান্ত কিছু সময় কাটানো যায়।

এখানে রয়েছে প্রায় ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মার পাড় ঘেঁষে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ। এখানে নদীর পাশাপাশি পদ্মার চরের সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন অসংখ্য দর্শনার্থী। সৌন্দর্যের কারণে জায়গাটিকে অনেকেই তুলনা করেন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সঙ্গে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গড়ে উঠছে পর্যটন কেন্দ্র। আসন্ন শীতের সকাল কিংবা পড়ন্ত বিকেলে পদ্মাপাড়ের উন্মুক্ত পরিবেশ আর নয়নাভিরাম দৃশ্য আকৃষ্ট করবে পর্যটকদের। পদ্মায় পানি থাকুক আর নাই থাকুক নির্মল বাতাস আর বাঁধ ভাঙা আনন্দে মনটাকে যে ভাসাতে পারবেন তা নিশ্চিত করেই বলছেন পর্যকটরা। নদীর পাড়জুড়ে জেগে থাকা ছোট-বড় বালুচর আর রয়েছে ক্ষুদ্র বনভূমি। যেই তপ্ত বালুচরেও খুঁজে পেতে পারেন এক অন্য রকম ভ্রমণ আনন্দ।

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন পদ্মার পাড়কে পরিকল্পিতভাবে সাজিয়ে যাচ্ছে। বড়কুঠি এলাকা, পদ্মা গার্ডেন, লালনশাহ মুক্ত মঞ্চ, আই বাঁধ, টি-বাঁধ, শিমলা পার্ক, সিমান্তে নোংগর তারই ফসল। এজন্য দেশের অন্যান্য স্থানের চেয়ে রাজশাহীর পদ্মার পাড় একটু ভিন্নভাবে গড়ে উঠছে। পদ্মার কোল ঘেঁষে প্রায় ১২ কিলোমিটার জায়গার বিভিন্ন পয়েন্ট জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে সড়ক পথ। নগরীর বুলনপুর থেকে শুরু করে বড়কুঠি ও পঞ্চবটি হয়ে সাতবাড়িয়া এলাকা পর্যন্ত এসব পয়েন্ট বিস্তৃত। এসব পয়েন্টে থাকা বাঁধের সড়কে হেঁটে কিংবা মোটরবাইকে বেশ আরামেই ঘুরা যায় পদ্মার তীর। পদ্মা নদীর কোল ঘেঁষে মহান এই সাধক হযরত শাহ মখদুম (রা) এর মাজার শরিফ রয়েছে। এটি রাজশাহীর অন্যতম পুণ্যস্থান।

স্থানীয়রা জানান, বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক সংলগ্ন বুলনপুর আইবাঁধ এবং পঞ্চবটি আইবাঁধ এলাকাতেই দর্শনার্থীদের আনাগোনা বেশি। তবে আরও কিছু সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা হলে এটিই হয়ে উঠতে পারে রাজশাহীর প্রধান বিনোদন কেন্দ্র। এই এলাকায় পর্যটক ও দর্শনার্থীবান্ধব বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধার প্রয়োজন বলে মনে করেন বিনোদনপ্রেমীরা। এমন কিছু পরিকল্পনা নিয়ে স্থানগুলো সাজানো হলে এখানে একটি ভালো পর্যটন কেন্দ্র হতে পারে।

এছাড়াও রাজশাহীতে রয়েছে দেখার মতো কিছু দর্শনীয় স্থান, নগরীর মাঝেই রয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও প্রথম প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর বাংলার ব-দ্বীপ অঞ্চলের প্রত্নতাত্ত্বিক কোষাগার হিসেবে পরিচিত। এখানে বিভিন্ন প্রাচীন প্রাচীন নিদর্শন দিয়ে সাজানো এই জাদুঘর। প্রত্নতত্ত্ব সংগ্রহের দিক থেকে এটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সংগ্রহশালা। এ জাদুঘরে পাল ও সেন আমলের প্রতিমা ভাস্কর্যের জন্য জাদুঘরটির খ্যাতি সারা বিশ্বে। খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০ অব্দ থেকে ১৯০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালের বহুবিধ প্রত্ননিদর্শন এ জাদুঘরে সংগৃহিত রয়েছে।

এছাড়া পিকনিক স্পট হিসেবে রাজশাহী বিভাগে অত্যন্ত জনপ্রিয় ‘শহীদ কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা’। রয়েছে শহীদ ক্যাপ্টেন বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর সড়কের দ্বীনেভদ্রা এলাকায় মহান মুক্তিযুদ্ধের এ স্মৃতিসৌধ ‘স্মৃতি অম্লান’। শিশুদের নির্মল বিনোদনের রয়েছে ‘শহিদ জিয়া শিশুপার্ক।এই পার্কটি অনেকটা ফ্যান্টাসি কিন্ডম এর আদলে করা হয়েছে।

এছাড়া জেলার পুঠিয়া উপজেলায় রয়েছে রাজবাড়ি। রাজবাড়িটি অধিকাংশ মন্দিরে পোড়ামাটির ফলক আছে। এখানকার পুরাকীর্তির মধ্যে পাঁচআনি রাজবাড়ী বা পুঠিয়া রাজবাড়ী, চারআনি রাজবাড়ী ও ১৩টি মন্দির রয়েছে।

জেলার বাগমারা উপজেলার গোয়ালকান্দি জমিদার বাড়ি, তাহেরপুর পৌরসভায় নিশিন্দা রাজের ধ্বংসস্তুপ, হিন্দুদের সর্ব প্রথম দুর্গাপুজার স্থান, রাজা কংশনারায়নের প্রাসাদ। বাংলার বার ভুইয়ার এক জন তাহের ভুইয়ার রাজ প্রাশাদ। জেলার পুঠিয়া উপজেলার তারাপুর গ্রামে হাওয়াখানা নামে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে হযরত শাহমখদুম বিমানবন্দর, সারদা পুলিশ একাডেমী, রাজশাহী কলেজসহ বেশকিছু দর্শনীয় স্থান।

এদিকে নাম না জানা অসংখ্য শহীদের আত্মত্যাগের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বধ্যভূমির স্মৃতিস্তম্ভটি। একটি গণকবরের ওপর স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণ করা হয়। মৃত্যুকূপ থেকে বেরিয়ে আসে হাজারো মানুষের মাথার খুলি ও কঙ্কাল। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন কাজলা এলাকা এবং রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় পাওয়া যায় আরও কয়েকটি গণকবর। এছাড়াও রয়েছে দেখার অনেক কিছু।

দর্শনার্থীদের চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) তাদের সেবার পরিধি বাড়িয়ে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান রাসিক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। তিনি বলেন, এর জন্য পদ্মা পাড়ের পুরো এলাকার মধ্যে পাঁচ থেকে ছয়টি স্থানকে দর্শনার্থীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়া এসব স্পটে যেন দর্শনার্থীরা সহজেই যাতায়াত করতে পারেন, সে জন্য এর সঙ্গে সংযোগ সড়কগুলো প্রশস্ত করা হচ্ছে। আশা করছি, এসব কাজ হয়ে গেলে দর্শনার্থীরা আরও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন আর এখানে একটি পর্যটকবান্ধব ব্যবস্থা গড়ে উঠবে।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]