রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় বহুতল ভবনে দরজা ভেঙে স্বর্ণালংকার এবং টাকা-পয়সা চুরিচক্রের গ্রেফতার হওয়া ৬ সদস্যকে দুইদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
রোববার (৯ অক্টোবর) আসামিদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর খিলক্ষেত থানায় করা চুরি মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাদের ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ইয়াসমিন আরা প্রত্যেককে দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আসামিরা হলেন: চোর চক্রের সর্দার মো. জব্বার মোল্লাহ (৬৭), মো. জামাল সিকদার (৫২), মো. আবুল (৫১), আজিমুদ্দিন (৫২), টঙ্গী এলাকার জুয়েলারি দোকান মালিক মো. আনোয়ার হোসেন (৪৪) এবং তাঁতিবাজার এলাকার জুয়েলারি দোকান মালিক মো. আব্দুল ওহাব (৪৫)।
সাত থেকে আট বছর বয়স থেকে চুরি বিদ্যায় হাতেখড়ি তাদের। এখন কেউ কেউ ষাটোর্ধ্ব। এখনও অবলীলায় চালিয়ে যাচ্ছেন চুরি। অর্ধশতাব্দী ধরে চুরি করা এই চক্রটির মূল টার্গেট স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা।
চক্রটির ছয় সদস্যকে গ্রেফতারের পর গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, দারোয়ান এবং সিসি ক্যামেরা নেই এমন বাসা বেছে নেন তারা। পরনে লুঙ্গি-পাঞ্জাবি, দেখে মনে হবে পুরোদুস্তুর ভদ্রলোক। কিন্তু তারাই ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন জায়গায় চুরি করে আসছেন বলে দাবি পুলিশের।
সিসিটিভির একটি ফুটেজে দেখা যায়, গত ১৭ আগস্ট রাজধানীর খিলক্ষেতের নিকুঞ্জ-২ এর ১৫ নম্বর সড়কে এক ডাক্তার দম্পতির বাসায় প্রবেশ করেন দুজন। বাসায় ঢোকার আগে আরও দুজনকে অনেকটা সময় ধরে সড়কটিতে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। বাসাটির তৃতীয় তলার দরজা ভেঙে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে আলমারির তালা ভেঙে ৪২ ভরি সোনা ও ৪০০০ মার্কিন ডলার চুরি করে নিয়ে যান তারা।
ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে চোর চক্রটিকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয় গোয়েন্দা পুলিশ। এই একই চক্রের চার সদস্যকে পল্লবীর একটি বাসা থেকে চুরির সময় হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের দেয়া তথ্যে গ্রেফতার করা হয় আরও দুজনকে।
পুলিশ বলছে, এক সময় এরা ছিলেন সিঁধেল চোর। সময়ের পরিক্রমায় চুরিবিদ্যায় দক্ষ হয়েছেন দিনে দিনে। বয়স আর বেশভূষার ফায়দা নিয়ে বছরের পর বছর চালিয়ে যাচ্ছিলেন চুরি।
রোববার (৯ অক্টোবর) ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, কিশোর বেলায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় ছিঁচকে চুরি দিয়ে তাদের হাতেখড়ি। এরপর অর্ধশতাব্দী ধরে চালিয়ে যাচ্ছেন এই কাজ। তাঁতীবাজার ও টঙ্গীর দুটি সোনার দোকানে প্রায় ১ হাজার ভরি চুরি করা সোনা বিক্রির কথা স্বীকার করেছে তারা। চক্রের প্রধান জব্বার মোল্লা এর আগে কখনোই গ্রেফতার হননি।
পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে চুরি করতে সক্ষম তারা। চুরি শেষে মালামাল ভাগ করে যে যার এলাকায় চলে যান। পরদিন আবার অন্য কোথাও চুরির পরিকল্পনা করেন তারা।