চট্টগ্রাম থেকে খুলনায় গিয়ে আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর মাহেন্দ্র চালক রিপন হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ড সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামীকে ৫ বছর পর গ্রেফতার করেছে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম।
ধৃত আসামী রনি শিকদার ও তার তিন বন্ধু মিলে গত ২০১৬ সালে অসৎ ভাবে অধিক লাভের আশায় গাড়ী ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম থেকে খুলনায় ঘুরতে যায়। সেখান থেকে আসার সময় তারা গত ১২ জানুয়ারি ২০১৬ সন্ধ্যা ৬টার দিকে পরিকল্পনা করে চার বন্ধু মিলে ৭০০ টাকা চুক্তিতে একটি মাহেন্দ্র গাড়ী ভাড়া নেয়। গাড়ীতের উঠার পর কিছু দুর আসতেই তারা চার বন্ধু মিলে গাড়ীটি ছিনতাই করে নেওয়ার জন্য গাড়ীর ড্রাইভার রিপনকে ভয়ভীতি আসামী রনি শিকদার ও তার অপরাপর তিন বন্ধু মিলে ছুরি দিয়ে ড্রাইভার রিপনকে গলার ভিতর ছুরি ঢুকিয়ে দিয়ে গাড়ীর ভিতরেই মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর তারা চার বন্ধু মিলে খুলনা মহানগরীর লবণচরা এলাকায় রাস্তার পাশে ড্রাইভার রিপনের লাশ ফেলে গাড়ীটি ছিনতাই করে নিয়ে গোপালগঞ্জ জেলার দিকে রওনা হয়।
চার বন্ধু মিলে ওই ছিনতাইকৃত মাহেন্দ্র গাড়িটি নিয়ে খুলনা থেকে গোপালগঞ্জ যাওয়ার সময় পথিমধ্যে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানি থানা পুলিশের সদস্যগণ রাস্তায় চেকপোষ্ট স্থাপন করে নিরাপত্তা ডিউটি পালন করা অবস্থায় মাহেন্দ্র গাড়িটি চলার গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হলে গাড়িটি সিগনাল দিয়ে থামায় এবং তাদের কাছে ড্রাইভিং লাইসেন্স, গাড়ীর বৈধ কাগজ পত্র দেখতে চায়। সেই সাথে কোথা থেকে আসছে সে বিষয়ে জানতে চায়। তখন তারা ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং গাড়ীর কোনো কাজগপত্র দেখাতে পারেনি এবং তাদের এক এক জনের কথা এক এক রকম গড়মিল হওয়ায় কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যের সন্দেহ আরো বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে তাদের’কে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে তারা মাহেন্দ্রের ড্রাইভার রিপনকে হত্যা করে খুলনার লবণচরা এলাকার একটি রাস্তায় ফেলে দিয়ে গাড়িটি ছিনতাই করে নিয়ে আসার কথা স্বীকার করে। পরবর্তীতে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানি থানা পুলিশ কর্তৃক তাদের দেয়া স্বীকারোক্তির উপর ভিত্তি করে খুলনার লবণচরা এলাকায় এসে রাস্তার পাশে পড়ে থাকা অবস্থায় মাহেন্দ্রের ড্রাইভার রিপনের লাশ উদ্ধার করে এবং তাদের চার জনকে হত্যাকান্ড ও গাড়ী ছিনতাইয়ের ঘটনায় আটক করে। ওই হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই বাদী হয়ে খুলনার লবণচরা থানায় তাদের চার বন্ধুর নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে, যার মামলা নং- ০৫, তারিখ ১২ জানুয়ারি ২০১৬।
ওই মামলায় খুলনার লবণচরা থানা পুলিশ একই বছরের ৩১ ডিসেম্বর চার জনের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে একটি অভিযোগ পত্র দাখিল করে। মামলাটি অধিকতর তদন্ত শেষে সিআইডি, খুলনা কর্তৃক ৪জনের বিরুদ্ধে পুনরায় বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিল করেন। মামলায় ২৩ জন স্বাক্ষীর মধ্যে ১৫ জন স্বাক্ষীর জবানবন্দির ভিত্তিতে গত (২৯ মার্চ ২০২২) খুলনার বিজ্ঞ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত কর্তৃক খুলনায় মাহেন্দ্র চালক শেখ ওহিদুর রহমান রিপন হত্যার দায়ে ৪ জনকে মৃত্যুদন্ড দন্ডিত করেন এবং একইসঙ্গে তাদের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করে। উল্লেখ্য, উক্ত মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত রায়ে ধৃত আসামী রনি শিকদার ২নং অন্যতম আসামী ছিলেন।
বিশেষ গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম জানতে পারে , খুলনার আলোচিত মাহেন্দ্রের ড্রাইভার রিপন হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ড সাজাপ্রাপ্ত একজন আসামী চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় অবস্থান করে এবং সে প্রায়ই ঢাকা-চট্টগ্রাম আসা যাওয়া করে। এছাড়াও সে মাঝে মাঝে চট্টগ্রামে তার বন্ধুদের সাথে দেখা করতে আসে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে হত্যা কান্ডের ঘটনার সাথে জড়িত আসামীকে গ্রেফতারে লক্ষ্যে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারী ও প্রযুক্তির ব্যবহার অব্যাহত রাখে। এরই ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর ২০২২) সকাল ১০টায় ঢাকা মহানগর লালবাগ থানাধীন শহিদ নগর ১নং গলি থেকে ওই মামলার মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী রনি শিকদার (২০), পিতা- আঃ রউফ শিকদার, সাং- আদ্দোপাড়া, থানা- হালিশহর, জেলা- চট্টগ্রাম’কে আটক বরে র্যাব। জিজ্ঞাসাবাদে উপরে উল্লেখিত নৃশংস হত্যা কান্ডের সাথে সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে সে।
গ্রেফতার আসামী জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানায়, ওই হত্যাকান্ডের ঘটনায় তারা খুলনার লবণচরা থানা পুলিশের কাছে গ্রেফতার হওয়ার পর ধৃত আসামী রনি শিকদার ২বছর পর বিজ্ঞ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পায়। এরপর তারা আর কোন দিন আদালতে হাজীরা দেননি এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধরা-ছোয়ার বাহিরে চলে যায়। গ্রেফতার আসামী রনি শিকদার জামিনে বের হয়ে প্রথমে চট্টগ্রামের একটি পোষাক কারখানায় অপারেটর ও আয়রনম্যানের কাজ করে। এর পর সেখান থেকে বেরিয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় অটোরিকশা ও সিএনজি চালানো শুরু করে। সর্বশেষ সে ঢাকার লালবাগ শহিদ নগর এলাকার একটি চুড়ির কারখানার কাজে নিয়োজিত ছিলো এবং নিয়মিত টিকটক ভিডিও করতো।
উল্লেখ্য যে, আটক আসামী রনি শিকদার তার নিজের নাম বাদ দিয়ে তার ব্যবহৃত মোবাইল দিয়ে “জাহাঙ্গীর আলম” ও “কলগার্ল বয়” নামের দুইটি আইডি দিয়ে বিভিন্ন রকম টিকটক ভিডিও তৈরী করে আপলোড করে থাকেন। ওই আসামীকে গ্রেফতার করার পর বাদী পক্ষ র্যাবের প্রতি গভীর সন্তোষ প্রকাশ করনে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ শেষে সংশ্লিষ্ট থানায় মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।