শারীরিক পবিত্রতায় তায়াম্মুমের বিধান


ধর্ম ডেস্ক: , আপডেট করা হয়েছে : 06-10-2022

শারীরিক পবিত্রতায় তায়াম্মুমের বিধান

অজু ও গোসলের মাধ্যমে পানি দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করতে হয়। কিন্তু কেউ যদি পবিত্রতা অর্জনের জন্য পানি না পান কিংবা পানি ব্যবহারে অপারগ হন তখন করণীয় কী? কোরআনুল কারিমের পানির অপারগতায় সুস্পষ্ট সমাধান দেওয়া হয়েছে। শারীরিক পবিত্রতায় অজু-গোসলের বিকল্প মাধ্যম হচ্ছে তায়াম্মুম। ইসলামে এটি পবিত্রতা অর্জনের সবচেয়ে সহজ মাধ্যম। তায়াম্মুমের  অনুমতি উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য মহান আল্লাহর এক বিশেষ দান।  আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে ঘোষণা করেন-


وَ اِنۡ کُنۡتُمۡ مَّرۡضٰۤی اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ اَوۡ جَآءَ اَحَدٌ مِّنۡکُمۡ مِّنَ الۡغَآئِطِ اَوۡ لٰمَسۡتُمُ النِّسَآءَ فَلَمۡ تَجِدُوۡا مَآءً فَتَیَمَّمُوۡا صَعِیۡدًا طَیِّبًا فَامۡسَحُوۡا بِوُجُوۡهِکُمۡ وَ اَیۡدِیۡکُمۡ مِّنۡهُ


‘আর তোমরা যদি অসুস্থ হও কিংবা সফরে থাকো অথবা যদি তোমাদের কেউ পায়খানা থেকে আসে অথবা তোমরা যদি স্ত্রী সহবাস কর এরপর পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর। সুতরাং তোমাদের মুখ ও হাত তা দ্বারা মাসেহ কর।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ৬)


যে সময় তায়াম্মুম করা যাবে-

যখন পানি না থাকে বা এমন দূরত্বে পানি থাকে যে পানির জন্য অপেক্ষা করলে নামাজের সময় পার হয়ে যাবে অথবা এমন অসুস্থতা বা এমন শীত যাতে পানি ব্যবহার করলে প্রাণনাশের বা বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। এ অবস্থায় অজু ও গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করা যাবে। অজু ও গোসল উভয় ক্ষেত্রে তায়াম্মুমের নিয়ম ও পদ্ধতি এক ও অভিন্ন।


তায়াম্মুম করে যেসব ইবাদত করা যাবে-

তায়াম্মুম দ্বারা নামাজ পড়া যাবে, কোরআন তেলাওয়াত করা যাবে, কাবা শরিফ তাওয়াফ করাসহ ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত এবং নফল; সব ধরনের ইবাদত করা যাবে। এছাড়াও যেসব ইবাদতে অজু বা পবিত্রতা অপরিহার্য নয়, সেসব ক্ষেত্রে সমস্যা ছাড়াও তায়াম্মুম করা যাবে। যেমন সব সময় পবিত্র থাকা, পবিত্রতার সঙ্গে ঘুমানো ইত্যাদি।


তায়াম্মুমের ফরজ-

তায়াম্মুমের ফরজ ৩টি। এ তিনটির কোনোটি বাদ পড়লে তায়াম্মুম হবে না। তাহলো- ১. পবিত্রতা অর্জনের নিয়ত বা ইচ্ছা করা। ২. উভয় হাত মাটিতে মেরে তা দিয়ে পুরো মুখমণ্ডল একবার মাসেহ করা। ৩. উভয় হাত মাটিতে মেরে উভয় হাত কনুইসহ একবার মাসেহ করা। এ প্রসঙ্গে কোরআনের নির্দেশ হলো-


فَتَیَمَّمُوۡا صَعِیۡدًا طَیِّبًا فَامۡسَحُوۡا بِوُجُوۡهِکُمۡ وَ اَیۡدِیۡکُمۡ مِّنۡهُ ؕ مَا یُرِیۡدُ اللّٰهُ لِیَجۡعَلَ عَلَیۡکُمۡ مِّنۡ حَرَجٍ وَّ لٰکِنۡ یُّرِیۡدُ لِیُطَهِّرَکُمۡ


‘তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর। সুতরাং তোমাদের মুখ ও হাত তা দ্বারা মাসেহ কর। আল্লাহ তোমাদের উপর কোনো সমস্যা সৃষ্টি করতে চান না, বরং তিনি চান তোমাদের পবিত্র করতে।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ৬)


তায়াম্মুমের সুন্নত ও পদ্ধতি

১. প্রথমেই তায়াম্মুমের ইচ্ছা করা। ২. তায়াম্মুমের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ বলা’, ৩. উভয় হাত পবিত্র পাটিতে মেরে একটু সামনে-পেছনের দিকে নিয়ে ভালোভাবে স্পর্শ নেওয়া। ৪. মাটিতে হাত মারার পর মাটি ঝেড়ে ফেলা, ৫. মাটিতে হাত মারার সময় আঙ্গুলগুলো ফাঁক করে রাখা, ৬. উভয় হাতের তালু দ্বারা পুরো মুখমণ্ডল মাসেহ করা। ৭. আগের মতো উভয় হাত পবিত্র মাটিতে মেরে একটু সামনে-পেছনে দিকে নিয়ে ভালোভাবে স্পর্শ নেওয়া। ৮. বাঁ হাতের তালু দ্বারা ডান হাত কনুইসহ মাসেহ করা এবং ডান হাতের তালু দ্বারা বাম হাত কনুইসহ মাসে করা। ৯. মাসেহের তারতিব যথাযথভাবে ঠিক রাখা, ১০. বিরতিহীনভাবে তায়াম্মু করা অর্থাৎ উভয় মাসেহে বিলম্ব না করা।


তায়াম্মুমের মুস্তাহাব

যে ব্যক্তির প্রবল ধারণা থাকে যে, শেষ সময় পর্যন্ত পানি পাওয়া যাবে, এমন ব্যক্তির তায়াম্মুমের জন্য শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করা মুস্তাহাব। আর যদি পানি পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকে তাহলে তায়াম্মুম করে মুস্তাহাব সময়ে ইবাদত সম্পন্ন করা।


তায়াম্মুম ভঙ্গের কারণ

প্রতি ওয়াক্তর জন্য আলাদা আলাদা তায়াম্মুম করতে হবে। যেসব কারণে অজু ভেঙে যায় এবং গোসল ওয়াজিব হয়; সেসব কারণে তায়াম্মুম ভাঙবে। এছাড়া পানি পাওয়া গেলে বা পানি ব্যবহারে সক্ষমতা এলে তায়াম্মুম ছুটে যাবে। মনে রাখতে হবে, কঠিন সমস্যা ছাড়া অজু ও গোসলের বিকল্প হিসেবে তায়াম্মুম গ্রহণযোগ্য নয়।


যেসব বস্তু দিয়ে তায়াম্মুম করা যাবে

পবিত্র মাটি বা মাটির সমজাতীয় জিনিস দ্বারা তায়াম্মুম করা যাবে। এই মাটি হবে এমন যে, যা সাধারণত স্বাভাবিক আগুনের তাপে জ্বলে না, ছাই হয় না এবং গলেও যায় না; এসব পবিত্র মাটিসহ আরো যা যা দ্বারা তায়াম্মুম করা যাবে; তাহলো- মাটি, পোড়ামাটি, পাথর, চুনাপাথর, কাঁচা ইট, পাকা ইট, টাইলস, সিমেন্ট এবং ইট, সিমেন্ট ও পাথরের মেঝে বা দেয়াল ইত্যাদি।

তবে দেয়াল কিংবা মেঝেতে ক্যামিকেলের প্রলেফযুক্ত টাইলস কিংবা ক্যামিকেল এবং ডিস্টেম্বার রং করা থাকে, তা দিয়ে তায়াম্মুম হবে না। উল্লেখ্য, তায়াম্মুমের জন্য ধুলাবালুর প্রয়োজন নেই; বরং হাতে বেশি ধুলাবালু লাগলে মাসেহ করার আগে তা ঝেড়ে ফেলতে হবে।

তায়াম্মুম বান্দার জন্য আল্লাহর অন্যতম অনুগ্রহ। পানি না পেলেও যেন বান্দা তার মাওলাকে ভুলে না যায়, তাই আল্লাহ তাআলা তায়াম্মুমের বিধান করে দিয়েছেন। আল্লাহ সবাইকে তার হুকুম-আহকাম পালনে সচেষ্ট হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]