বাগাতিপাড়ায় লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগে দুঃচিন্তায় খামারীরা


মো. আবদুল্লাহ-আল-অনিক, বাগাতিপাড়া (নাটোর): , আপডেট করা হয়েছে : 04-10-2022

বাগাতিপাড়ায় লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগে দুঃচিন্তায় খামারীরা

নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার একাধিক ইউনিয়নে কয়েক সপ্তাহ ধরে গরুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। জানা যায়,  ইতোমধ্যে এ রোগে প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার গরু আক্রান্ত হয়েছে। ভাইরাসজনিত এই রোগের নির্দিষ্ট টিকা ও প্রতিষেধক না থাকায় দুঃচিন্তায় রয়েছেন গরুর খামারী ও গৃহস্থরা। তবে প্রাণি সম্পদ দপ্তর পরামর্শ দিয়েছেন আতঙ্কিত না হয়ে গরুর চিকিৎসা নেওয়ার এবং সচেতনতা বৃদ্ধির । 

গরুর মালিকরা বলেন, উপজেলার প্রায় প্রত্যেক গ্রামেই এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে গরু মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। এই রোগে গরুর প্রথমে জ্বর হচ্ছে এবং খাওয়ার রুচি কমে যাচ্ছে। এরপর গরুর সারা শরীরে চামড়ার নিচে টিউমারের মতো গুটি দেখা দিচ্ছে। ৩-৪ দিনের মধ্যে সেগুলো ফেটে ঘায়ে পরিনত হচ্ছে। আবার কিছু কিছু গরুর আক্রান্ত স্থান গুটিতে পরিনত হয়ে সেখানে পানি জমা হচ্ছে। পরে সেখানে ক্ষতের সৃষ্টি হয়ে মাংসে পচন ধরছে। উপজেলার পৌর এলাকার মুরাদপুর গ্রামের জামাল হোসেন জানান, তার গ্রামে বেশিরভাগ গরুই এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তার নিজের গরুও আক্রান্ত হওয়ায় তিনি পশু চিকিৎসককে বাড়িতে এনে চিকিৎসা করাচ্ছেন। তাছাড়াও পশু হাসপাতাল থেকে দেয়া প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ খাওয়াচ্ছেন।  ইতোমধ্যে একটি গরুর চিকিৎসা বাবদ তার প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে, তবুও গরুটি সুস্থ হচ্ছেনা। একই এলাকার আব্দুস ছামাদ জানান, তার একটি বাছুর গরু এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তবে চিকিৎসা ও পরিচর্যার মাধ্যমে অনেকটা সুস্থ হয়েছে। পাঁকা ইউনিয়নের রামপাড়া গ্রামের তৃষা জানান, ইতিপূর্বে তার একটি গরু এই রোগে আক্রান্ত হয়ে ভালো হয়েছে। আবারো আরেকটি গরু আক্রান্ত হওয়ায় উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তরে গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছেন।

সদর ইউনিয়নের স্বরপপুর এলাকার গরুর খামারি মানিক হোসেন বলেন, তার খামারের গরু লাম্পি স্কিন ডিজিজে আক্রান্ত হয়েছে। তাছাড়া এর প্রতিষেধক টিকাও না পাওয়ায় তিনিসহ তার মতো অন্য খামারিরা উদ্বিগ্ন ও উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। 

উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল হাদী জানান, তিনি পশু চিকিৎসায় প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত হওয়ায় এলাকায় বিভিন্ন খামারসহ গৃহস্থের গরুর চিকিৎসা করেন। হঠাৎ করেই কয়েক সপ্তাহ ধরে গরুর লাম্পি স্কিন ডিজিজে আক্রান্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রায় প্রত্যেক গ্রামেই এই রোগে আক্রান্ত গরুর চিকিৎসা তিনি করেছেন। তিনি ধারণা করছেন, এ পর্যন্ত এই উপজেলায় প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার গরু এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। 

উপজেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এই উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় বেসরকারি ভাবে গরুর খামারের সংখ্যা ৩৮টি। খামার ও গৃহস্থ পর্যায়ে এই উপজেলায় গরুর সংখ্যা বর্তমানে ১ লক্ষ ৫২ হাজার ২৭০ টি। 

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের ভেটেনারী সার্জন ডাক্তার আবু হায়দার আলী বলেন, লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) একটি ভাইরাসজনিত রোগ। সঙ্কর জাতের গরু এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। এ রোগটি মূলত মশা-মাছির মাধ্যমে রোগাক্রান্ত গরু থেকে সুস্থ গরুতে ছড়ায়। চিকিৎসা করালে ৭ থেকে ২০ দিনের মধ্যে আক্রান্ত গরু সুস্থ হয়ে যায়। এতে আতঙ্কিত না হয়ে খামার ও খামারের আশে-পাশে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও মশা-মাছি মুক্ত রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। তাছাড়া একটু সচেতন হলেই এই রোগ নিরাময় সম্ভব বলে জানিয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে সচেতনতা মূলক সভাও তারা করছেন বলেও জানান তিনি।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]