মাহসা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদের আগুন নেভার কোনও ইঙ্গিত নেই। উল্টে সেই আগুন ফুলকির মতো ইরানের সীমানা পেরিয়ে বিভিন্ন দেশে গিয়েছে পৌঁছেছে। আফগানিস্তান, প্যারিসের রাস্তাতেও শুরু হয়েছে প্রতিবাদ মিছিল। এদিকে এই প্রতিবাদে অংশ নিয়ে মৃতের সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে।
দুই,চার, ছয় থেকে শুরু করে সংখ্যাটা এখন ১০০ ছুঁই ছুঁই। ১ জনের মৃত্য়ুর প্রতিবাদে প্রাণের তোয়াক্কা না করেই রাস্তায় নেমেছে হাজার হাজার নাগরিক। সেখানকার স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্ট ও তাঁর জারি ফরমানের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন নাগরিকদের একাংশ।
রবিবার ইরান মানবাধিকার গোষ্ঠী জানিয়েছে, প্রতিবাদে অংশ নিয়ে এখনও পর্যন্ত ৯২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৪১ জনই মারা গিয়েছেন শুক্রবার পাকিস্তান ও আফগানিস্তান লাগোয়া ইরানের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে। ওসলোর এই মানবাধিকার গোষ্ঠী জানিয়েছে, এই প্রতিবাদের মধ্যেই বালুচ সম্প্রদায়ের এক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে পুলিশ প্রধানের বিরুদ্ধে। তারপরই সেখানে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ আরও জোরদার হয়। আর সেই বিক্ষোভে অংশ নিয়েই প্রাণ গিয়েছে প্রায় ৪১ জনের। এদিকে আইএইচআর ডিরেক্টর মেহমুদ আমিরি মোঘাদ্দাম ইরানে বিক্ষোভকারীদের হত্যা বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক কমিউনিটির কাছে এই ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন।
এদিকে এই প্রতিবাদ বিক্ষোভ ঘিরে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসির স্বৈরাচারী মনোভাব আরও প্রকাশ্যে এসেছে। তিনি বিক্ষোভ দমনে আরও কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন সম্প্রতি। এদিকে রবিবার তিনি বলেছেন, ইরানের শত্রু দেশের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে। তাঁর প্রেসিডেন্সির তরফে প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে তিনি জানিয়েছেন, ‘এমন এক সময়ে যখন ইসলামী প্রজাতন্ত্র অর্থনৈতিক সমস্যা কাটিয়ে এই অঞ্চলে ও বিশ্বে আরও সক্রিয় হয়ে উঠছিল, তখন শত্রুরা দেশকে বিচ্ছিন্ন করার অভিপ্রায়ে মাঠে নেমেছে। কিন্তু তারা এই ষড়যন্ত্রে ব্যর্থ হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গিয়েছে ২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে ইরানের পশ্চিম প্রান্তে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। সেই বিক্ষোভ কমার তো কোনও আভাস নেই। বরং তা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আরও বেশি করে ছড়িয়ে পড়ছে। রাস্তায় নেমে হিজাব ওড়াচ্ছেন মহিলারা। আগুন ধরাচ্ছেন সেই হিজাবেও। আমিনির মৃত্য়ু ঘিরে ফুঁসছে ইরান।