কোন ওষুধে জিভের ক্যানসার সারল ব্রিটেনের মহিলার

আপলোড সময় : ০১-০৬-২০২৫ ১২:২৪:৩০ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ০১-০৬-২০২৫ ১২:২৪:৩০ অপরাহ্ন
মুখ ও গলার ক্যানসার সারাতে আশা দেখাচ্ছে ইমিউনোথেরাপি! ব্রিটেনের এক মহিলার জিভের ক্যানসার সারানোর জন্য অস্ত্রোপচার ও রেডিয়োথেরাপির পাশাপাশি একটি ওষুধও দিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। তাতে ক্যানসার নির্মূল হয় ও মহিলা গত ৬ বছর ধরে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন বলে জানা গিয়েছে। পেমব্রোলিজ়ুমাব নামে ওষুধটি এক প্রকার মোনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি, যা শরীরের ইমিউন সিস্টেম (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা) সক্রিয় করে তুলে ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়তে পারে বলে দাবি করেছেন ব্রিটেনের চিকিৎসকেরা। তবে কেবল ব্রিটেন নয়, এ দেশেও ওষুধটির প্রয়োগ হয় বলে জানিয়েছেন ক্যানসার চিকিৎসকেরা। কী ভাবে কাজ করে সেই ওষুধ, ইমিউনোথেরাপিতে ক্যানসার সারানোর খরচ কত, জেনে নেওয়া যাক।

ডার্বিশায়ারের বাসিন্দা ৪৫ বছরের লরা মার্সটন জিভের ক্যানসারে ভুগছিলেন। তাঁর জিভের উপর একটি আলসার ধরা পড়ে ২০১৯ সালে। পরে জানা যায়, সেটিতে ক্যানসার কোষের বিভাজন শুরু হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, লরার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ৩০ শতাংশ। অস্ত্রোপচার করে জিভ ও গলার লসিকা গ্রন্থি বাদ দেওয়া হয় তাঁর। পাশাপাশি, রেডিয়োথেরাপিও শুরু হয়। ক্যানসার আবার ফিরে আসতে পারে বলেও সতর্ক করা হয়েছিল তাঁকে। তবে পরে লন্ডনের ইনস্টিটিউট অফ ক্যানসার রিসার্চের গবেষকেরা ইমিউনোথেরাপিতে লরার চিকিৎসা শুরু করেন। তাঁকে দেওয়া হয় পেমব্রোলিজ়ুমাব নামের ওষুধটি। গবেষক কেভিন হ্যারিংটন জানান, ওষুধটি অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে দেওয়া হয় লরাকে। এতে তাঁর শরীরে ক্যানসার-বিরোধী প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়েছে। টিউমার ফের ফিরে আসার আশঙ্কাও নেই। ওষুধটি দেওয়ার পর থেকে গত ৬ বছর ধরে লরা সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন। শরীরের অন্য জায়গা থেকে কোষ নিয়ে তাঁর জিভের পুনর্গঠনও করা হয়েছে।

পেমব্রোলিজ়ুমাব নতুন আবিষ্কার নয়। এই ওষুধটির প্রয়োগ এ দেশেও হয় বলে জানিয়েছেন অনকোলজিস্ট শুভদীপ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “পেমব্রোলিজ়ুমাব ইমিউনোথেরাপি ড্রাগ। ক্যানসারের জন্য দায়ী পিডি-১ প্রোটিনকে নিশানা করে এই ওষুধ। প্রোটিন নষ্ট করে ক্যানসার ফিরে আসার পথটিকে রুখে দেয়। মুখ ও গলার ক্যানসার, মেলানোমার চিকিৎসায় এই ওষুধের প্রয়োগ হয়। অস্ত্রোপচার ও রেডিয়োথেরাপির সঙ্গেই ওষুধটি দেওয়া হয়, যাতে রোগীর শরীরে ক্যানসার আর ফিরে না আসে এবং বেঁচে থাকার সময়টা অনেক বেড়ে যায়।”

পেমব্রোলিজ়ুমাব ওষুধটি নিয়ে বিশ্ব জুড়েই ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হচ্ছে। এই ট্রায়ালের নাম ‘কিনোট ০৪৮’। ওষুধটি কী ভাবে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে, ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি ও বিভাজন থামিয়ে দিতে পারে, তা রোগীদের উপর প্রয়োগ করে দেখা হচ্ছে। ভারতেও এর ট্রায়াল চলছে। ব্রিটেনের লরা নয়, এ দেশের অনেক মানুষ ওষুধটিতে উপকার পেয়েছেন বলে জানান চিকিৎসক।

প্রতি বছর বিশ্বে মুখ ও গলা-ঘাড়ের ক্যানসারে প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হন। মৃত্যু হয় অন্তত দু’লক্ষ মানুষের। মুখ ও গলার ক্যানসারের মধ্যে প্রধানত মুখগহ্বর, গলা, নাক, ঘাড়, জিভ, গলার গ্রন্থির ক্যানসার পড়ে। বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে জিভে বা মুখের ভিতরে অন্য কোনও অংশে ঘা হতে থাকে। ধীরে ধীরে সেই ঘা ছড়িয়ে পড়ে গোটা মুখগহ্বরে। ফুলে যায় গলা। বদলে যায় স্বর। খুব দ্রুত ছড়াতে পারে ক্যানসার। মুখ ও গলা-ঘাড়ের ক্যানসারে আক্রান্তদের একটা বড় অংশের বয়স ৪০ থেকে ৬০। এখন অবশ্য ১৮-২৫ বছরের ছেলেমেয়েদেরও এই রোগ হচ্ছে।

ক্যানসার সারাতে এখন কেবল অস্ত্রোপচার বা কেমোথেরাপি-রেডিয়োথেরাপি নয়, ইমিউনোথেরাপিতেও ভরসা রাখছেন চিকিৎসকেরা। এই চিকিৎসাপদ্ধতিতে রোগীর শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বহু গুণে বাড়িয়ে তুলে ক্যানসার কোষের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়। ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার কাজ কেবল জীবাণুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করাই নয়, কোষ ও কলাগুলি যাতে সুবিন্যস্ত, সুগঠিত থাকে তার উপর নজর রাখা। সেটা যেন গোটা শরীরের উপরেই এক ‘নজরদারির ব্যবস্থা’। ক্যানসার চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায় জানান, নিজের শরীরের কোষই বদলে গিয়ে শত্রু হয়ে যায়। তখন বাইরে থেকে ওষুধ, রেডিয়েশন দিয়ে সেই কোষগুলিকে নষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টা হয়। তাতে সুস্থ ও সবল কোষগুলিরও ক্ষতি হয়। ইমিউনোথেরাপি এই সব না করে বরং শরীরের প্রতিরোধের কাঠামোটিকেই নতুন করে সাজায়, যাতে প্রতিরোধী কোষগুলি আবার জেগে উঠে লড়াই করতে পারে। পেমব্রোলিজ়ুমাব তেমনই একটি ওষুধ। তবে চিকিৎসক বললেন, “পেমব্রোলিজ়ুমাব প্রয়োগ করলেই যে ক্যানসার সেরে যাবে, তা কিন্তু নয়। জিভের ক্যানসার সারাতে অস্ত্রোপচারই একমাত্র পথ। অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে ওষুধটি প্রয়োগ করা যেতে পারে। এটি হল ‘টার্গেট থেরাপি’, যা ক্যানসার থেকে সুরক্ষা দিতে পারে। রোগীর বেঁচে থাকার সময় দ্বিগুণ করে দেয়।”

পেমব্রোলিজ়ুমাবের খরচ ২৮ থেকে ২৯ হাজার টাকার মধ্যে। ওষুধটি গবেষণার স্তরে আছে এখনও। এর ট্রায়ালের ফলাফলও ভাল। তবে এ বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা।

সম্পাদকীয় :

Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

রাজশাহীর সময় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আবেদনকৃত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, ঢাকা ।

অফিস :

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204 Thana : Motihar,Rajshahi

Email : [email protected],                    [email protected]