লালপুরের, সন্তান লাভের আশায় বটগাছের নিচে আঁচল পেতে নারীদের মানত

আপলোড সময় : ২৩-১১-২০২৫ ১১:৪৯:০৮ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ২৩-১১-২০২৫ ১১:৪৯:০৮ পূর্বাহ্ন
নাটোরের লালপুর উপজেলার দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের  রামকৃষ্ণপুরের শ্রী শ্রী ফকির চাঁদ বৈষ্ণব গোঁসাই সৎসঙ্গ সেবা আশ্রমে ৩২৮তম নবান্ন উৎসব ঘিরে সন্তান লাভের আশায় বটগাছের নিচে আঁচল পেতে নিঃসন্তান নারীদের মানত করা নিয়ে উপজেলায় ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়েছে।

শনিবার (২২ নভেম্বর, ২০২৫) সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত আশ্রম প্রাঙ্গণে ভিড় জমতে থাকে নিঃসন্তান নারীদের। দূর-দূরান্ত থেকে আসা নারীরা স্নান শেষে ভেজা কাপড়ে শতবর্ষী বটগাছের নীচে আসন পেতে রঙিন শাড়ির আঁচল মেলে রাখেন। তাদের বিশ্বাস – পূজার সময় গাছের কোনো পাতা বা ফল আঁচলে পড়লে সন্তান প্রাপ্তির লক্ষণ মিলবে। পুরো সময় তাদের সহযোগিতায় ব্যস্ত ছিলেন এক নারী বৈষ্ণব।

বগুড়া থেকে আসা এক নারী জানান, সাত বছর ধরে মা হতে পারেননি তিনি। চিকিৎসায় ফল না পাওয়ায় তিনি আশ্রমে এসেছেন। পরিচিত এক নারীর অভিজ্ঞতা থেকেই তার এখানে আসার অনুপ্রেরণা। আরেক ভক্ত বলেন, লোকমুখে এই মানতের কথা শুনেই তিনি সন্তান প্রার্থনায় এসেছেন। রাজশাহীর বাঘা উপজেলার নারায়ণপুর থেকে আসা আরেক নারী বলেন, আমার বাড়ির পাশের দুই নারী এখানে মানত করে সন্তান লাভ করেছেন। তাই তিনিও এসেছেন সন্তানের আশায়। আশ্রমের প্রধান সেবাইত শ্রী পরমানন্দ সাধু বলেন, নবান্নকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর মানত করতে অনেক নারী এখানে আসেন। নিঃসন্তান নারীরা প্রথমে স্নান করে অক্ষয় বটমূলে বসে দ্বিতীয়া তিথিতে সন্তান লাভের আশায় প্রার্থনা করেন। প্রার্থনার সময় আঁচলে ফল বা পাতা পড়লে আমাদের নিয়ম অনুযায়ী সেটা তিনদিন খাওয়াতে হয়। নিয়ম অনুযায়ী খেলে অনেকে সন্তান লাভ করেন। পরে তারা মানত অনুযায়ী আশ্রমে বিভিন্ন জিনিস দিয়ে যান।

তবে লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুনজুর রহমান বলেন, “এভাবে মানত করা বা বসে থাকার সঙ্গে সন্তান লাভের কোনো বৈজ্ঞানিক সম্পর্ক নেই। এটি চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে অগ্রহণযোগ্য।

উল্লেখ্য, শনিবার (২২ নভেম্বর, ২০২৫) সকালে নাটোরের লালপুর উপজেলার দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুরে ফকির চাঁদ বৈষ্ণব গোঁসাইয়ের আশ্রমে দুই দিনব্যাপী নবান্ন উৎসব শুরু হয়। সকালে ধ্যান তপস্যার মাধ্যমে এ নবান্ন উৎসবের উদ্বোধন করেন প্রধান সেবায়েত শ্রী পরমানন্দ সাধু। আশ্রম কমিটির সভাপতি শ্রী সঞ্জয় কুমার কর্মকারের সভাপতিত্বে প্রথম দিনের সুধী সমাবেশে ফকির চাঁদ বৈষ্ণব গোঁসাইয়ের আবির্ভাব ও তাঁর জীবনচরিত নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জুলহাজ হোসেন সৌরভ। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আবীর হোসেন ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. ওয়াজেদ আলী মৃধা। নবান্ন উপলক্ষে আশ্রম প্রাঙ্গণে ভক্তদের মাঝে প্রসাদ, কলার পাতায় পরিবেশিত খিচুড়ি, পাঁচ তরকারি ও পায়েস বিতরণ করা হয়।
আশ্রমের ৪৮তম প্রধান সেবাইত শ্রী পরমানন্দ সাধু জানান, বাংলা ১১০৪ সালে দুড়দুড়িয়ার রামকৃষ্ণপুর গ্রামে একটি বটগাছের নিচে ফকির চাঁদ বৈষ্ণব তাঁর আস্তানা স্থাপন করেন। তাঁতি পরিবারে জন্ম নেওয়া ফকির চাঁদ বৈষ্ণব ছিলেন অবিবাহিত। তাঁর বাবা নবকৃষ্ণ ও মা যশমতি। তিনি এখানে ধ্যান–তপস্যা ও বৈষ্ণব ধর্ম প্রচার শুরু করেন। প্রতি বছর ফাল্গুনে দোল পূর্ণিমা, জ্যৈষ্ঠ মাসে গঙ্গাস্নান এবং অগ্রহায়ণে নবান্ন উৎসব উপলক্ষে দেশ–বিদেশের হাজারো ভক্ত আশ্রমে সমবেত হন।
বাংলা ১২৭৪ সনে সাধু ফকির চাঁদ বৈষ্ণব অদৃশ্য হওয়ার পর তাঁর স্মৃতি ধারণ করে আছে এই আশ্রম। প্রায় ৪৫ ফুট উঁচু নকশা খচিত প্রধান ফটকের ওপরে লেখা ‘স্থাপিত ১১০৪ বাংলা’—যা ইঙ্গিত করে আশ্রমটি আনুমানিক সপ্তদশ শতাব্দীর শেষদিকে নির্মিত। বিস্তীর্ণ ৩২ বিঘা এলাকা জুড়ে রয়েছে ফলজ বৃক্ষ, পূজার উপযোগী ফুলের গাছ ও শানবাঁধানো তিনটি পুকুর।

আশ্রমের প্রবেশপথে ময়ূর, বাঘসহ বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি এবং লতা–পাতার কারুকার্য শোভা পায়। দ্বিস্তরবিশিষ্ট এই প্রবেশপথের ওপরের অংশটি একসময় অতিথিশালা হিসেবে ব্যবহৃত হতো। বাম পাশে রয়েছে বিশাল দিঘি। আখড়া প্রাঙ্গণে খালি পায়ে প্রবেশ করতে হয়।

শ্রী ফকির চাঁদ বৈষ্ণবের বর্গাকৃতির ৪০ ফুট সমাধি সৌধে রয়েছে আরেকটি গৃহ, যার একমাত্র দরজা ছাড়া কোনো জানালা নেই। মূল মন্দিরে প্রবেশ করেন কেবল প্রধান সেবাইত। প্রচলিত কথা আছে – এই মন্দিরের ভেতরেই ফকির চাঁদ বৈষ্ণব স্বশরীরে প্রবেশ করে ঐশ্বরিকভাবে স্বর্গ লাভ করেন। তাঁর পরিধেয় বস্ত্রাদি সংরক্ষণ করে সমাধি স্তম্ভ গড়া হয়েছে। গম্বুজাকৃতির সমাধির উপরের অংশ গ্রিল দিয়ে ঘেরা। ঘরের দেয়াল ও দরজায় লতাপাতার নকশা এবং ভেতরে ঝাড়বাতি শোভা পাচ্ছে।

আশ্রমে রয়েছে একটি প্রাচীন কুয়া যার সিঁড়িপথ যুক্ত রয়েছে পাশের রান্নাঘরের সঙ্গে। অতীতে সাধুরা এখান থেকে রান্না ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করতেন। বর্তমানে কুয়ার পানি ব্যবহারযোগ্য নয়। এর পাশে ভক্তদের ব্যবহারের জন্য আরেকটি কুয়া রয়েছে। সেখানে বৃহৎ মাটির চুলায় ভক্তদের জন্য প্রসাদ রান্না করা হয়।
পরিচালনা কমিটির সভাপতি শ্রী সঞ্জয় কুমার কর্মকার জানান, রামকৃষ্ণপুরে ৩২ বিঘা জমিসহ আশ্রমের অতিরিক্ত জমি রয়েছে নাটোরের নওপাড়া, রাজশাহীর বাঘা উপজেলার সুলতানপুর এবং নওগাঁর আত্রাই এলাকায়।

রবিবার (২৩ নভেম্বর) সকালে আশ্রম প্রাঙ্গণে বাসী নবান্ন প্রসাদ বিতরণের মধ্য দিয়ে ৩২৮তম নবান্ন উৎসবের সমাপ্তি হবে।

সম্পাদকীয় :

Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

রাজশাহীর সময় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আবেদনকৃত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, ঢাকা ।

অফিস :

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204 Thana : Motihar,Rajshahi

Email : [email protected],                    [email protected]