রাজশাহীতে এক পরিবারকে ব্ল্যাকমেইল ও সংগঠিত চাঁদাবাজির ভয়ংকর জাল

চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় জিম্মি, শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের চেষ্টা’র অভিযোগে ভুক্তভোগী’র সংবাদ সম্মেলন!

আপলোড সময় : ১৮-১১-২০২৫ ০৯:২২:২৩ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১৮-১১-২০২৫ ০৯:২২:২৩ অপরাহ্ন
রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানাধীন টিকাপাড়া বাসার রোডে এক ভয়ংকর ঘটনা ঘটেছে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় এক ভাড়াটিয়া পরিবার ও বাড়ির মালিকের ছেলের ওপর সংঘবদ্ধ হামলা, লুটপাট, শ্লীলতাহানি, ধর্ষণের চেষ্টা এবং মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগ উঠেছে। গত শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) দিবাগত রাতে সংঘটিত এই ঘটনায় স্থানীয় রাজনীতিতে যুক্ত এবং চিহ্নিত অপরাধীসহ মোট ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

ঘটনার পরপরই স্থানীয়দের সহায়তায় মূল অভিযুক্তদের একজন দ্বীপ-কে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয় এছাড়া শনিবার বিকালে বুবাই নামের আরেক অভিযুক্তকে আটক করা হয়। এই ঘটনা মহানগরীতে সংগঠিত অপরাধ ও রাজনৈতিক লেবাসে চাঁদাবাজির রমরমা চক্রের অন্ধকার দিকটি উন্মোচন করেছে।

👥 হামলার নেপথ্যে: চাঁদা ও রাজনৈতিক প্রভাব
ঘটনার প্রধান ভুক্তভোগী ও বাড়ির মালিকের ছেলে আলিফ মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে এসে অভিযোগের বিস্তারিত তুলে ধরেন। তার বক্তব্য অনুযায়ী, এই হামলার মূল কারণ হলো দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা চাঁদাবাজির চাপ:

আলিফ বলেন: "আসামি তারেক ও সম্রাট দীর্ঘদিন ধরে আমার কাছে চাঁদা দাবি করে আসছিল। বিষয়টি স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতাকে জানানোর পর তারা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।"
তিনি আরও বলেন, শুক্রবার গভীর রাতে বাসার মেইন গেট খোলা পেয়ে নিচতলার ভাড়াটিয়া বিশালের সহযোগিতায় বাকি ৮ জন তিনতলার ভাড়াটিয়া ফুলজান বেগমের বাসায় হামলা চালায়।

লুটপাট: হামলাকারীরা প্রবেশ করেই ভাড়াটিয়া রুমি খাতুন আশার গলার স্বর্ণের চেইন ও ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়।

জিম্মি ও নির্যাতন: আলিফ, তার বন্ধু আব্দুল্লাহ, হাসনাত ও বক্কর ঘটনাস্থলে গেলে তাদের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে জিম্মি করা হয়। এ সময় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা তারেক তার কপালে পিস্তল ধরে এবং সম্রাট গলায় ছুরি ঠেকিয়ে মারধর করে।

ভিডিও ব্ল্যাকমেইল: আরও ভয়াবহ ঘটনা ঘটে যখন হামলাকারীরা আলিফ ও তার বন্ধুদের জামা খুলিয়ে ভাড়াটিয়া রিতুর সঙ্গে একই স্থানে ভিডিও ধারণ করে এবং সেই ভিডিও প্রকাশের হুমকি দিয়ে ৪ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়।

💰 আর্থিক ক্ষতি ও মুক্তি
আলিফ জানান, হামলাকারীরা নগদ টাকা, মোবাইল ফোন, এটিএম কার্ড, ব্যাংকের চেক এবং 'নগদ' অ্যাপ থেকে মোট ২৪ হাজার ৩০০ টাকা লুটে নেয়। পরে তার বড় ভাই অমিত ৫০ হাজার টাকা আসামিদের হাতে তুলে দিলে তারা আলিফকে ছেড়ে দেয়। সকালে হামলাকারীরা পালিয়ে যাওয়ার সময় আলিফের লিফান কেপিআর মোটরসাইকেলটিও নিয়ে যায়।

♀️ নারী নির্যাতনের ভয়ংকর অভিযোগ
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী নারীদের অভিযোগ ছিল আরও বেশি গুরুতর।
আশা (ভাড়াটিয়া) এর বক্তব্য: "রাতেই কয়েকজন দরজা ভাঙার চেষ্টা করলে আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। পরে ঘরে ঢুকে সম্রাট আমাকে শ্লীলতাহানি করে। লাথি মারলে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।"
ঋতু (ফুলজানের ছোট মেয়ে) এর বক্তব্য: "একপর্যায়ে তারেক আমাকে পাশের রুমে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। হাত ধরে টানাটানি করলে মা বাধা দিতে গেলে সম্রাট আমার মায়ের বুকে লাথি মারে এবং ছুরি গলায় ধরে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এরপর আমাকে পাশের রুমে নিয়ে দরজা বন্ধ করে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করে। এতে আমার জামা-পায়জামা ছিঁড়ে যায় এবং মুখে আঘাত লাগে।"

👮 মামলা ও প্রশাসন কী বলছে?
এই ঘটনায় দ্বীপ, তারেক, সম্রাট, বিশাল, আলী, বোবাই, পাভেল, ঋত্বিক ও সাগরসহ মোট ৯ জনের বিরুদ্ধে বোয়ালিয়া মডেল থানায় মামলা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে আলী বোয়ালিয়া পূর্ব থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে—
খরবোন নদীরধার এলাকার আলী, তিনি বোয়ালিয়া থানা পূর্ব সেচ্ছাসেবক দল এর আহ্বায়ক
বাসার  রোড এলাকার তারেক এর নামে বোয়ালিয়া মডেল থানায় একাধিক, ব্ল্যাকমেইল ও চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে।
তালাইমারী এলাকার সম্রাটের নামে মাদক, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে।
বাসার রোড এলাকার মানিকের ছেলে দ্বীপ কুমারের বিরুদ্ধে সোনার চেইন প্রতারণা’র অভিযোগ রয়েছে।
এই প্রোফাইলগুলো থেকেই বোঝা যায়—এটি কোনো আকস্মিক উত্তেজনার ঘটনা নয়; বরং সংগঠিত অপরাধ–চক্রের অংশ।

বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ এ বিষয়ে বলেন, "ঘটনার তদন্ত চলছে। পলাতক আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে ২জন অভিযুক্তসহ দুটি মোবাইল ফোন ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে।"

🔎 সমাজের ওপর প্রভাব: সংগঠিত অপরাধের জাল
আইনজীবীদের মতে, এই ঘটনা কেবল চাঁদাবাজি নয়, বরং অপহরণ, জিম্মি, শ্লীলতাহানি এবং ধর্ষণের চেষ্টা-র মতো একাধিক ধারায় অপরাধ।

সংগঠিত অপরাধ: স্থানীয় রাজনৈতিক সংগঠনের নাম ব্যবহার করে অপরাধীদের একটি সংঘবদ্ধ চক্রের উপস্থিতি এখানে স্পষ্ট। তারা শুধু চাঁদাবাজি নয়, নারী নির্যাতন এবং ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের মতো জঘন্য অপরাধে জড়িত।

আইনের প্রতি চ্যালেঞ্জ: পিস্তল ঠেকিয়ে মারধর এবং ভিডিও ব্ল্যাকমেইল করে চাঁদা দাবির ঘটনা প্রমাণ করে, অপরাধীরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তোয়াক্কা না করেই নির্ভয়ে তাদের কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে।

এই ঘটনা প্রমাণ করে, স্থানীয় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা এই চক্রটিকে দ্রুত ভেঙে না দিলে মহানগরীতে সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা চরমভাবে বিঘ্নিত হবে। পুলিশকে দ্রুত বাকি আসামিদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
 

সম্পাদকীয় :

Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

রাজশাহীর সময় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আবেদনকৃত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, ঢাকা ।

অফিস :

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204 Thana : Motihar,Rajshahi

Email : [email protected],                    [email protected]