টাকার গন্ধে রক্তাক্ত পদ্মার কাশফুল, নেপথ্যে কাকন বাহিনীর শত কোটি টাকার খর বাণিজ্য

আপলোড সময় : ১৪-১১-২০২৫ ১২:২১:৩৮ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ১৪-১১-২০২৫ ১২:২১:৩৮ পূর্বাহ্ন
শরৎ মানেই নদীর তীরে শুভ্র কাশফুলের মন ভোলানো দৃশ্য। কিন্তু রাজশাহী, পাবনা, কুষ্টিয়া ও নাটোর জেলার পদ্মা নদীর চরাঞ্চলে এই কাশফুল এখন আর শুধু প্রকৃতির শোভাবর্ধন করে না, এটি হয়ে উঠেছে এক রক্তাক্ত বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু। বিনা চাষে জন্মানো এই কাশ বা খর বিক্রি করে প্রতিবছর সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়। যার পুরো নিয়ন্ত্রণ সন্ত্রাসী বাহিনীগুলোর হাতে। দখলদারিত্ব ও টাকার ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে প্রতিবছরই ঝরছে রক্ত, স্বজনহারা হচ্ছেন চরের সাধারণ মানুষ।

পদ্মার চরে বালির ওপর জন্মানো এই খরের সবচেয়ে বেশি চাহিদা পান বরজে। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলার ৯টি উপজেলায় প্রায় ৪,৫০৯ হেক্টর জমিতে পানের চাষ হয়। এর প্রায় পুরোটাই এই খরের ওপর নির্ভরশীল। মৌসুমের শুরুতে পদ্মার ঘাটগুলোতে এক হাজার খরের আঁটি প্রায় ২২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। যা মৌসুমের শেষে ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা পর্যন্ত পৌঁছায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী জানান, তারা ৮ টাকা দরে প্রতিটি আঁটি চর থেকে কেনেন এবং ঘাটে এনে বিক্রি করেন। কিন্তু এই ব্যবসা নির্বিঘœ নয়। তিনি বলেন, আমরা খরের জমির সামনে দাঁড়ালে বিভিন্ন বাহিনীর লোক আসে। দামাদামি হয়। অনেক সময় তারা খর কেটে নৌকায় তোলার পর খবর দিতে বলে। এরপর এসে নৌকা প্রতি ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা নিয়ে যায়।

এই বাণিজ্যের পুরো সুবিধা ভোগ করে কাঁকন বাহিনী, মন্ডল বাহিনী, টুকু বাহিনী, সাঈদ বাহিনীসহ অন্তত ১১টি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। চরের জমির প্রকৃত মালিকরা তাদের ফসল থেকে প্রায় বঞ্চিতই থেকে যান। স্থানীয় চকরাজাপুর ইউনিয়নের সদস্য তঞ্চু মোল্লা বলেন, চরের খরের টাকা জমির মালিক পায় না। সব খর বিভিন্ন বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকে। এক বিঘা জমিতে যে দুই থেকে তিন হাজার আঁটি খর হয়, তার সবটাই নিয়ন্ত্রণ করে ওরা।

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই বাহিনীগুলো প্রায়ই সশস্ত্র সংঘাতে জড়ায়। স্পিডবোট ও বড় নৌকায় করে ভারি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তারা পদ্মার বুকে মহড়া দেয় এবং সামান্য কারণেই গুলি চালায়।

এরই ধারাবাহিকতায়, গত ২৭ অক্টোবর কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের হবিরচরে কাঁকন বাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলিতে বাঘা উপজেলার আমান মন্ডল ও নাজমুল মন্ডল নামে দুজনের মৃত্যু হয়। প্রত্যক্ষদর্শী মিঠু সরদার সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে বলেন, আমরা খর কাটছিলাম। হঠাৎ কাঁকন বাহিনীর আটজন সদস্য স্পিডবোট থেকে অতর্কিতে গুলি চালাতে শুরু করে। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে তারা গুলি চালিয়েছে। এর পরদিন ২৮ অক্টোবর লিটন নামে আরেক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ, যিনি কাঁকন বাহিনীর সদস্য বলে ধারণা করা হচ্ছে।

চরাঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনতে গত ৮ ও ৯ নভেম্বর পুলিশ, র‌্যাব ও এপিবিএনের প্রায় ১,২০০ সদস্য একযোগে চার জেলার পদ্মার চরে ‘অপারেশন ফাস্ট লাইট’ পরিচালনা করে। অভিযানে অস্ত্র ও মাদকসহ মোট ৬৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, অভিযানে ১০টি অস্ত্র, গুলি, বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র, মাদকদ্রব্য এবং মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, চরাঞ্চলে শান্তি ফেরাতে এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে। যদিও এই অভিযানের পরেও চরের দখলদারিত্বের চিত্র খুব বেশি পাল্টায়নি বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়রা।

সম্পাদকীয় :

Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

রাজশাহীর সময় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আবেদনকৃত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, ঢাকা ।

অফিস :

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204 Thana : Motihar,Rajshahi

Email : [email protected],                    [email protected]