দুর্গাপুরে জমে উঠেছে ৫০০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী ঘোড়াদহ মেলা

আপলোড সময় : ১৬-১০-২০২৫ ১১:১৬:৫৩ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১৬-১০-২০২৫ ১১:১৬:৫৩ অপরাহ্ন
ফরিদ আহমেদ আবির,দুর্গাপুর: রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার উজালখলসী গ্রামের রাইচাঁদ নদীর তীরে বসেছে পাঁচ শতাব্দীর ঐতিহ্যবাহী ঘোড়াদহ মেলা। এক সময় এই মেলাই ছিল গ্রামের প্রাণের উৎসব— নদীতে নৌকা বাইচ, তীরে ঘোড়দৌড়, আর চারপাশে উৎসবের আমেজ। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই জৌলুস আজ প্রায় বিলীন। 

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) ঘুরে দেখা যায়, রাইচাঁদ নদী এখন নাব্যতা হারিয়েছে, কচুরিপানায় ভরে গেছে চারদিক। নদীর প্রবাহ রোধে বিভিন্ন স্থানে নির্মিত হয়েছে সুইসগেট। ফলে বহু বছর ধরে আর নৌকা বাইচ বা ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা হয় না এই মেলায়। তবুও ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে স্থানীয়রা প্রতিবছর আয়োজন করে যাচ্ছেন এই প্রাচীন মেলার।

স্থানীয় প্রবীণরা জানান, ঘোড়াদহ মেলার ইতিহাস প্রায় ৫০০ বছরের পুরোনো। তাঁদের পূর্বপুরুষদের আমল থেকে মেলাটি চলে আসছে। প্রতি বছর আশ্বিন মাসের শেষ দিন থেকে শুরু হয়ে কার্তিকের ২ তারিখ পর্যন্ত চলে এই আয়োজন।

মেলাটি মূলত উজালখলসী গ্রামে হলেও উৎসবের রেশ ছড়িয়ে পড়ে পুরো দুর্গাপুর উপজেলা জুড়ে। আশপাশের আলীপুর, দেবীপুর ও শ্যামপুর গ্রামেও বসে ছোট ছোট উপমেলা।

ঘোড়দৌড় ও নৌকা বাইচ বন্ধ হলেও মেলায় এখনো ভিড় জমে হাজারো মানুষের। রাজশাহী, নওগাঁ, কুমিল্লা, ফরিদপুর, বগুড়া, যশোর, নড়াইল ও কুষ্টিয়া থেকে ব্যবসায়ীরা নানা পণ্য নিয়ে আসেন। ফার্নিচার, শীতের পোশাক, মৃৎশিল্প ও গ্রামীণ সামগ্রী নিয়ে বসে শতশত  দোকান।

 শিশুদের জন্য রয়েছে নাগরদোলা, সার্কাস ও ডিজিটাল রাইড— যা এখন মেলার প্রধান আকর্ষণ। মেলাকে ঘিরে গ্রামগুলোয় চলছে উৎসবের আমেজ। জামাই-মেয়েকে দাওয়াত দিয়ে পিঠা-পায়েস তৈরির ধুম এখন এই অঞ্চলের একটি বিশেষ রেওয়াজে পরিণত হয়েছে।

স্থানীয় প্রবীণ রমজান আলী বলেন,“আমাদের ছোটবেলা থেকেই এই মেলা দেখে আসছি। তখন নদীতে নৌকা বাইচ, তীরে ঘোড়দৌড় হতো। পুরো এলাকা জুড়ে মানুষের ভিড় লেগে থাকত। এখন আর সেই দিন নেই।”
অন্যদিকে, ব্যবসায়ী স্বপন কুমার দাশ মৃৎশিল্পী জানান, “আগে ১০ দিন পর্যন্ত মেলা চলত, এখন ২-৩ দিনেই শেষ হয়। তবুও এই ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে আমরা প্রতিবছর আসি।”

মেলা পরিচালনা কমিটির সভাপতি শাহ আলম চৌধুরী বলেন, “অতীতে মেলাটি দীর্ঘদিন চলত। সার্কাস, গান-বাজনা, ঘোড়দৌড়— সবই থাকত। ২০১৮ সাল পর্যন্ত খুব জমজমাটভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু এরপর থেকে ধীরে ধীরে মেলার প্রাণচাঞ্চল্য কমে গেছে।”তিনি আরও বলেন,“এখন মাত্র দুই-তিন দিন মেলা চলে। তবুও স্থানীয়দের আগ্রহ ও অংশগ্রহণে আমরা এই ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করছি।”

নদীর নাব্যতা হারানো, আধুনিক বিনোদনের ছোঁয়া এবং বিকল্প মেলা বসার কারণে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে ঘোড়াদহ মেলার আগের জৌলুস। তবুও শত বছরের স্মৃতি বয়ে চলা এই মেলা এখনো গ্রামীণ সংস্কৃতির জীবন্ত প্রতীক হয়ে টিকে আছে স্থানীয়দের প্রাণে ও ভালোবাসায়।

সম্পাদকীয় :

Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

রাজশাহীর সময় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আবেদনকৃত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, ঢাকা ।

অফিস :

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204 Thana : Motihar,Rajshahi

Email : [email protected],                    [email protected]