দুনিয়া ও আখেরাতের জীবনে ভারসাম্য বজায় রাখবেন যেভাবে

আপলোড সময় : ১৫-১০-২০২৫ ০৩:০৩:৫২ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১৫-১০-২০২৫ ০৩:০৩:৫২ অপরাহ্ন
দুনিয়া আর আখিরাত—এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য রাখা কি সত্যিই সম্ভব? পার্থিব জীবনকে উপভোগ করার পাশাপাশি পরকালের সাফল্যও অর্জন করা কি সম্ভব?

মানুষের জীবনে এই প্রশ্ন চিরকালই প্রাসঙ্গিক। অনেক সময় আমরা নিজেদের ধর্মীয় দায়িত্ব ও পাপকে হালকাভাবে নিই। আবার কখনও এতটাই কঠোর হই যে অপরাধবোধে ভুগে আল্লাহর কাছ থেকে দূরে সরে যাই।

আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন, তোমরা মৃত ছিলে, তিনি তোমাদের জীবন দান করলেন। পরে তিনি তোমাদের মৃত্যু দেবেন এবং পুনরায় জীবন দান করবেন, তারপর তোমরা তারই কাছে ফিরে যাবে। (সুরা আল-বাকারা, আয়াত : ২৮)

মুমিনেরা জানে এবং বিশ্বাস করে এই দুনিয়ার জীবন পরকালের আসল যাত্রার মাত্র ক্ষণিক অংশ। তাই এখানে চলার পথে এমন ভারসাম্য দরকার, যাতে দুনিয়াও সুন্দর হয়, আর আখিরাতও হয় শান্তিময়।

তাহলে কীভাবে এই ভারসাম্য সম্ভব? নিচে চারটি বাস্তব পরামর্শ দেওয়া হলো, যা মেনে চললে আপনি সহজেই দুনিয়া ও আখিরাতের পথে সমন্বয় খুঁজে পাবেন।

১. প্রতিদিনের আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হোন: নতুন পোশাক কিনে বা প্রিয় খাবার খেয়ে আমরা আনন্দ পাই, কিন্তু তা স্থায়ী হয় না। প্রকৃত সুখ আসে কৃতজ্ঞতা থেকে। প্রতিদিন রাতে ইশার নামাজ শেষে নিজের পরিবারের, সুস্থতা, সুন্দর কোনো মুহূর্তের জন্য আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করুন।

এই অভ্যাস নিয়মিত করলে আপনি মানসিকভাবে আরও ইতিবাচক হবেন, ঘুম ভালো হবে, আর হতাশাও কমবে।

সপ্তাহে অন্তত একদিন নিজের নফসকে সংযত করতে চেষ্টা করুন। যেমন প্রিয় কোনো খাবার না খাওয়া, বা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ফোন ব্যবহার বন্ধ রাখা। এতে আত্মসংযম বাড়বে, কৃতজ্ঞতাও গভীর হবে।

২. সময়কে বরকতময় করুন: সময় আল্লাহর এক মহামূল্যবান নিয়ামত। তাই প্রতিটি মুহূর্তকে অর্থবহ ও বরকতময় করার চেষ্টা করা উচিত।

রাসুলুল্লাহ (সা.)  এই দোয়া ছাড়া কোনো বৈঠক শেষ করতেন না— হে আল্লাহ, তুমি পবিত্র, তোমারই প্রশংসা। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাই এবং তোমারই দিকে তাওবা করি।

নতুন পোশাক কিনলে ছোট করে সদকা করুন। পরিধানের দোয়াটি পড়ুন। জীবনের প্রতিটি কাজের সঙ্গে যদি সামান্য ইবাদতের ছোঁয়া যোগ করা যায়, তবে আল্লাহ সেই সময়কে বরকতময় করে দেন।

৩. কোরআনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলুন: দুনিয়া ও আখিরাতের ভারসাম্যের প্রকৃত পথনির্দেশনা আছে কোরআনে। কোরআনের আয়াত নিয়ে ভাবুন, তা অনুভব করুন, নিজের জীবনের সঙ্গে মেলান।

আল্লাহ বলেন, তারা দুনিয়ার জীবনকে আখিরাতের বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছে। (সূরা আল-বাকারা, আয়াত  : ৮৬)

নিজেকে জিজ্ঞেস করুন—আমি কি প্রতিদিন অন্তত একবারও আখিরাতের কথা ভাবি? যদি না ভাবি, আজ থেকেই শুরু করুন। দিনে অন্তত এক মুহূর্ত সময় দিন আখিরাত নিয়ে চিন্তা করার জন্য।

আর আশপাশে কেউ যদি দুনিয়ার ব্যস্ততায় ডুবে যায়—অতিরিক্ত আড্ডা, কেনাকাটা বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সময় নষ্ট করে—তাকে কোমলভাবে মনে করিয়ে দিন এই আয়াতের কথা।

৪. প্রতিদিন আল্লাহর কাছে দোয়া করার অভ্যাস করুন: দোয়া শুধু মুখে উচ্চারণ নয়, এটি এক আন্তরিক চাওয়া। এজন্য দোয়াকে জীবনের লক্ষ্য বানিয়ে নিন।

ছয়টি দোয়া বেছে নিন—তিনটি দুনিয়ার জন্য, তিনটি আখিরাতের জন্য। দোয়াগুলো হোক স্পষ্ট ও আন্তরিক। 

দুনিয়ার জন্যও সুনির্দিষ্ট কিছু চাওয়া ঠিক করুন—আগামী তিন মাসে কী চান, সেটা নির্ধারণ করুন। দেখবেন, আল্লাহ তাড়াতাড়িই কবুল করে নেবেন, ইনশাআল্লাহ।

দোয়ার জন্য প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় রাখুন—সেজদার সময়, নামাজ শেষে বা ঘুমানোর আগে। আল্লাহর সুন্দর নামগুলোর সঙ্গে দোয়া মিলিয়ে নিন, যেমন ‘আর-রহমান’, ‘আল-মুজীব’।

আর অবশ্যই প্রতিদিন পড়বেন সেই বিখ্যাত কোরআনি দোয়া— ‘রব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাহ, ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাহ, ওয়াকিনা আযাবান নার।’

অর্থাৎ, হে আমাদের প্রভু, আমাদের দাও দুনিয়ায় কল্যাণ, আখিরাতেও কল্যাণ, এবং আমাদের রক্ষা কর আগুনের শাস্তি থেকে। (সুরা আল-বাকারা, আয়াত : ২০১)

ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) বলেছেন, এই দুনিয়া ছায়ার মতো—তুমি যদি একে ধরতে চাও, কখনো পারবে না। কিন্তু যদি একে পেছনে ফেলে দাও, সে নিজে থেকেই তোমার পেছনে আসবে।

আমাদের বেশিরভাগ দুশ্চিন্তার মূল কারণ হলো মানুষ, ঘটনা বা প্রত্যাশা নিয়ে হতাশা। নিজেকে মনে করিয়ে দিন, যতক্ষণ আমি আখিরাতের দিকে মনোযোগী, ততক্ষণ আল্লাহ দুনিয়ার বিষয়গুলোও ঠিক করে দেবেন, ইনশাআল্লাহ।

সূত্র : অ্যাবাউট ইসলাম

সম্পাদকীয় :

Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

রাজশাহীর সময় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আবেদনকৃত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, ঢাকা ।

অফিস :

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204 Thana : Motihar,Rajshahi

Email : [email protected],                    [email protected]