অটোরিক্সার দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে প্যাডেল রিক্সার ঐতিহ্য

আপলোড সময় : ২৮-০৯-২০২৫ ০৩:৪৪:২৪ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ২৮-০৯-২০২৫ ০৩:৪৪:২৪ অপরাহ্ন
রাজশাহী মহানগর ও উপজেলা সদরসহ প্রত্যন্ত পল্লী এলাকায় এক সময়ে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যাম ছিল প্যাডেল চালিত রিকক্সা ও রিক্সভ্যান। শহরের অলিগলি কিংবা গ্রামের আঁকাবাঁকা মেঠোপথে রিক্সা-রিক্সভ্যানের বেলের টুং-টুাং শব্দ আজও অনেকের কানে বাজে। প্যাডেল চালিত রিকশায় উঠে বসলে নিজের মধ্যে রাজকীয় ভাব চলে আসতো। মাথা সমান উচু করলেই আকাশ দেখতে পাওয়া যেত। অথচ সময়ের পরিবর্তন আর দিন বদলে আজ ঐতিহ্য হারাতে যাচ্ছে এসব রিকশা। প্যাভেল রিকশার ব্যবহার কমে গেলেও, এর স্মৃতি ও ঐতিমা আজও অমলিন। যান্ত্রিকতার এ আধুনিক যুগে কর্মজীবী মানুষের জন্য এখন পেশি শক্তির বদলে আধিক্কার হয়েছে ইলেকট্রনিক ও সহজলভ্য যানবাহন। বিজ্ঞান যত উন্নত হচ্ছে, পৃথিবী তত ক্রমশ এগিয়ে চলেছে, আর সেই সঙ্গে পিছিয়ে পড়ছে পুরনো অনেক ঐতিহ্য। একসময় রাস্তাঘাটে বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে চলতো তিন চাকার পায়ে টানা রিক্সা। বর্তমানে ব্যাটারি আলিত তিন চাকার রিক্সার দাপটে অনেকেটাই হারিয়ে যেতে বসেছে বাংলার পায়ে টানা ঐতিহ্যবাহী প্যাডেল রিক্সা।

জানা গেছে, করোনাকালীন সময়ের পর কর্মহীন হয়ে পড়া কম শিক্ষিত বা অশিক্ষিত কিংবা দিনমজুরের কাজ করা লোকেরাই এখন বেশিরভাগ ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সার চালক। ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকলেও এটাই এখন মানুষের প্রথম পচ্ছন্দ। কারো কারো মতে আলাদা মানুষের পেশা হিসেবে ব্যাটারিচালিত রিক্সা বেশি পছন্দ। প্যাডেল চালিত রিক্সার পরিবর্তে মানুষ এখন ঝুঁকে পড়েছে যান্ত্রিক এই ব্যাটারি চালিত রিক্সা ও অটো প্রতি। এজন্য হারাতে বসেছে ঐতিহ্যেবাহী প্যাডেল রিক্সা। তবে বেপরোয়া গতির ব্যাটারী চালিত রিক্সায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে বেশি। এছাড়া অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেরা ব্যাটারি চালিত রিক্সা চালিয়ে বিভিন্ন দুর্ঘটনার  করলে পড়ছে।

সরেজমিন উপজেলার কালীগঞ্জহাট, চৌবাড়িয়া ও মুন্ডুমালাসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলা সদর ও আশেপাশের এলাকায় প্রচুর রিক্সাভ্যান ও অটো রয়েছে। তবে, এর প্রায় সবগুলোই ব্যাটারি চালিত। তানোর পৌর শহরে দু'একটা পায়ে টানা রিক্সাভ্যান চোখে পড়ে, এছাড়া ব্যাটারি চালিত রিক্স্যাভ্যান ও অটো গাড়ীতে সয়লাব পুরো জেলা।

এদিকে প্রবীণ রিক্সভ্যান চালকদের সঙ্গে কথা বলে জনা যায়, বিগত ২০০০ সালের দিকেও উপজেলা জুড়ে পাডেল চালিত রিক্সভ্যানের দাপট ছিল। কিন্তু বর্তমানে এর অস্বিত্ব বিলীন হতে চলেছে। হাতে গোনা দু'চারটি প্যাডেল চালিত রিক্সাভ্যান থাকলেও ব্যাটারিচালিত রিক্সাভ্যান ও চার্জার অটোর ভিড়ে তা এখন খুঁজে পাওয়া মুশকিল। যে কয়টা প্যাডেল চালিত রিকশা চলছে সেগুলোও চালাচ্ছেন বৃদ্ধরা। টাকার অভাবে অটো রিক্সা কিনতে না পারা ও ব্যাটারি চালিত রিক্সা চালাতে সাহস না পাওযায় তারা প্যাডেল চালিত রিক্সা চালাচ্ছেন। প্যাডেল চালিত রিক্সা জায়গা পুরোটাই দখল করেছে ব্যাটারি চালিত রিক্সা।

উপজেলার তালন্দ ইউনিয়ন (ইউপি) এলাকার আব্দুল আলিম, করিম মন্ডল,কামারগাঁ ইউনিয়নের (ইউপি) সৈয়দ আলী ও আমির হোসেনসহ  কয়েকজন প্রবীণ রিকশা চালকের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, বর্তমানে যাত্রীরা খুবই ব্যস্ত তারা প্যাডেল চালিত রিকশায় চড়তে চান না। তাদের বয়স হয়েছে ব্যাটারি চালিত রিক্সা বা অটো চালানোর মতো সাহস তাদের নেই। এছাড়া অটোরিক্সা কেনার মতো টাকাও নেই। তাই বাধ্য হয়েই এই রিকশা চালাচ্ছি। তারা আরও বলেন, গত এক দশক আগেও প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা আয় করতে পারতাম। এখন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঠিকশা চালিয়ে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা আয় করতে পারি। আবার কোনো কোনো দিন সেটা হয় না। বাজারে জিনিসপত্রের যে দাম তা নিয়ে সংসার চলে না। এ পেশা ছেড়ে দিয়ে এখন অন্য কোনো পেশায় বাবো তারও কোনো উপায় নেই। 

পায়ে চালিত প্যাডেল  রেকশায় (রিক্সা) খাটুনি (পরিশ্রম) বেশি, ইনকাম কম; আর ব্যটারি চালিত রেকশায় (রিক্সা) খাটুনি (পরিশ্রম) কম, ইনকাম বেশি। তাই পায়ের রেকশা আর চালাইতে মন চায় না।” প্যাডেল রেকশা বাদ দিয়্যা ব্যাটারি রেকশা চালানো শুরু করচি  বলে জানান মজিদুল ইসলাম।

জানা গেছে,এক দশক আগেও শহরে প্যাডেল রিক্সার গ্যারেজ ছিলো।এখানো কিছু গ্যারেজে রিক্সা আছে। সেগুলোও গ্যারেজেই পড়ে আছে, চালকেরা নিচ্ছেন না। প্যাডেল রিকশা সারা দিনের জন্য নিলে একজন চালককে ১২০ টাকা দিতে হতো গ্যারেজের মালিককে। আধা বেলার (সকাল ৫টা থেকে দুপুর ২টা কিংবা দুপুর ২টা থেকে রাত ১২টা) জন্য মালিক পেতেন ৭০ টাকা।কয়েক বছর আগেও চালকের অভাব ছিল না। পরিচিত-অপরিচিত চালকরা সকাল দুপুর গ্যারেজে ধরনা দিত রিকশার জন্য। কিন্ত্ত অটো রিক্সার দাপটে প্যাডেল রিক্সা ও রিক্সা গ্যারেজ বিলুপ্তপ্রায়।

স্থানীয় কলেজ শিক্ষক আনারুল ইসলাম বলেন, আমরা ৮-১০ বছর আগেও বাজার করাসহ বিভিন্ন কাজে বের হলে প্যাডেল চালিত রিক্সভ্যানে ঘুরে বেড়াতাম। তাছাড়া সেই সময়ে এতো মোটরসাইকেল বা অটো রিক্সার ব্যবহার ছিলো না। অধিকাংশ মানুষ পায়ে চালিত প্যাডেল রিক্সা বা রিক্সাভ্যানে যোগে অফিস, আসলত ও দোকান পাটে পৌছতো। খুব অলো ছিল সেই দিনগুলো।এখনকার মতো সেইগুলোতে অন্তত্ব দূর্ঘটনা ঘটতো না। ছিল না কোনো যানজট। বর্তমানে মানুষের মধ্যে অলসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অটো চালকরা পায়ের উপর পা তুলে অটো চালায়,অথচ এরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চালক নয়।

রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও সমাজসেবক আব্দুল মালেক বলেন, কোন এক সময় এরা গ্রামের ক্ষেতখামারে কাজ করতো অথবা কেউ শহরে কুলির কাজ করতো এখন গ্রাম অথবা শহরে কুলি-মুজুর পাওয়া অনেক কষ্টকর, কারণ সবাই এখন ব্যাটারি চালিত রিক্সা,রিক্সাভ্যান বা চার্জার অটো কিনে গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত ঘুরে বেড়াচ্ছে অর এদের প্রশিক্ষণ না থাকার কারণে দুর্ঘটনাও ঘটে। বর্তমান যে পরিমাণ ব্যাটারি চালিত রিক্সা বা চার্জার অটোর দাপটে প্যাডেল চালিত রিক্সা বিলুপ্তপ্রায়।

সম্পাদকীয় :

Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

রাজশাহীর সময় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আবেদনকৃত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, ঢাকা ।

অফিস :

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204 Thana : Motihar,Rajshahi

Email : [email protected],                    [email protected]