বাচ্চার এক বছর হওয়ার আগে নুন, চিনি বিষের সমান!

আপলোড সময় : ২২-০৯-২০২৫ ০৩:৪৯:৫৭ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ২২-০৯-২০২৫ ০৩:৪৯:৫৭ অপরাহ্ন
শিশুর ছয় মাস বয়স পর্যন্ত তো মায়ের দুধই শ্রেয়। কিন্তু তারপর তার সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করতে কী কী খাওয়ানো উচিত, তা নিয়ে বহু পরিবারেই নানারকম টানাপড়েন দেখা যায়।

দিদা বা ঠাকুমারা বলেন—“এক চিমটে নুন দিলে খাবারের স্বাদ বাড়ে”, “এক চামচ গুড় শরীরকে শক্তি দেয়”, কিংবা “এক ফোঁটা মধু খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।” কিন্তু আধুনিক বাবা-মায়েরা চিকিৎসক ও গবেষণার পরামর্শ মেনে কোনও রকম নুন, চিনি বা মিষ্টি যোগ না করে সাদাসিধে খাবারেই ভরসা রাখেন।

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করছেন—শিশুর শরীরে সামান্য নুন, গুড় বা মধুও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করতে পারে। তাই অভিভাবকদের এই বিষয়ে সচেতন থাকা জরুরি।

নুন কেন ক্ষতিকর?
অনেকে মনে করেন, নুন ছাড়া খাবার বাচ্চার কাছে অরুচিকর হতে পারে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলেন, আসল সমস্যা লুকিয়ে আছে কিডনির সক্ষমতায়।

অ্যাপোলো ক্রেডল অ্যান্ড চিলড্রেন’স হসপিটাল, বেঙ্গালুরু-ব্রুকফিল্ডের সিনিয়র কনসালট্যান্ট (নবজাতক ও শিশু বিভাগ) সেন্টিল কুমার সদাশিবম পেরুমল জানান— “শিশুর কিডনি জন্মের সময় পুরোপুরি পরিণত থাকে না। সোডিয়াম প্রক্রিয়া করার ক্ষমতা তৈরি হতে সময় লাগে। রান্না করা ভাত বা ডালে সামান্য নুন দিলেও কিডনিতে অপ্রয়োজনীয় চাপ তৈরি হয়। এর ফলে ভবিষ্যতে কিডনির সমস্যা বা উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে।”

তিনি আরও জানান, এক বছরের কম বয়সি শিশুর দৈনিক নুনের চাহিদা এক গ্রামেরও কম, যা সম্পূর্ণভাবে পূরণ হয় বুকের দুধ বা ফর্মুলা দুধ থেকেই। আলাদা করে নুন দেওয়া একেবারেই প্রয়োজন নেই।

গুড় কি চিনির থেকে ভাল?
অনেক পরিবারে বিশ্বাস আছে যে গুড় বা মধু, পরিশোধিত চিনির তুলনায় স্বাস্থ্যকর। কিন্তু চিকিৎসকরা বলেন, এগুলিও মূলত ঘন সুগার—যা শিশুর শরীরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

ডা. পেরুমল জানান—“গুড়ের মধ্যে কিছুটা আয়রন থাকলেও, ফল, শাকসবজি আর শস্য থেকে যে পুষ্টি শিশু পায়, তার তুলনায় তা অতি নগণ্য। বরং অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার দিলে শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব দেখা দেয়।”

শিশুর ছোট্ট পাকস্থলী সহজেই ভরে যায়। যদি মিষ্টি খাবার বেশি দেওয়া হয়, তবে প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ সমৃদ্ধ খাবারের জন্য জায়গাই থাকে না। তাছাড়া, ছোট থেকেই মিষ্টির স্বাদ পছন্দ করে ফেললে ভবিষ্যতে স্থূলতা, ডায়াবেটিস, দাঁতের ক্ষয়সহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ইউনিসেফের এক সাম্প্রতিক সমীক্ষায় বলা হয়েছে—বিশ্বে বর্তমানে অপুষ্ট শিশুদের তুলনায় অতিরিক্ত ওজনের শিশু ও কিশোরের সংখ্যা অনেক বেশি। দক্ষিণ এশিয়াতেও ২০০০ সালের পর থেকে এই সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে।

শিশুকে মধু দেওয়া কি নিরাপদ?
ডা. পেরুমল স্পষ্ট বলেন—এক বছরের কম বয়সি শিশুকে মধু দেওয়া শুধু অপ্রয়োজনীয়ই নয়, মারাত্মক বিপজ্জনকও।

“মধুর মধ্যে ক্লস্ট্রিডিয়াম বটুলিনাম ব্যাকটেরিয়ার স্পোর থাকতে পারে, যা ‘ইনফ্যান্ট বটুলিজম’ নামক বিরল অথচ প্রাণঘাতী রোগ ঘটায়। শিশুদের পরিপাকতন্ত্র এখনও এতটা পরিণত নয় যে এই স্পোর সামলাতে পারবে। তাই বয়স এক বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত শিশুকে মধু দেওয়া একেবারেই বারণ,” তিনি বলেন।

ছয় মাস পর কী দেওয়া যাবে?
শিশুর ছয় মাস বয়স পূর্ণ হলে, ধীরে ধীরে ভিন্ন স্বাদের পুষ্টিকর খাবার শুরু করা যেতে পারে—
ফল: কলা, আপেল পিউরি, পেঁপে, আম, সবেদা, নাশপাতি
শাকসবজি: কুমড়ো, গাজর, বিট, মিষ্টি আলু, মটরশুঁটি, লাউ
শস্য: নরম করে রান্না করা ভাত, রাগি, সুজি, ওটস, ডালিয়া।
ডাল ও ডালজাতীয়: মুগ, মসুর অবশ্যই তা হতে হবে নুন ছাড়াস্বাস্থ্যকর ফ্যাট: সামান্য ঘি যোগ করতে পারেন খাবারে।

ডা. পেরুমল আরও জানান,  “প্রাপ্তবয়স্কদের কাছে নিরামিষ, নুন বা মিষ্টিহীন খাবার ফিকে মনে হতে পারে, কিন্তু শিশুদের জন্য এগুলোই সঠিক। জীবনের প্রথম বছর দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলে। তাই নুন, চিনি, গুড় বা মধু না দেওয়া কোনও বঞ্চনা নয়, বরং ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করার বিনিয়োগ।”

সম্পাদকীয় :

Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

রাজশাহীর সময় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আবেদনকৃত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, ঢাকা ।

অফিস :

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204 Thana : Motihar,Rajshahi

Email : [email protected],                    [email protected]