দুর্গাপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ‘পার্সেন্টেজ’ আদায়ের অভিযোগ

আপলোড সময় : ১৫-০৯-২০২৫ ১২:০০:২৯ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ১৫-০৯-২০২৫ ১২:০০:২৯ পূর্বাহ্ন
রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আ ন ম রাকিবুল ইউসুফের বিরুদ্ধে ‘পার্সেন্টেজ’ আদায়ের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) প্রশাসক থাকাকালে তিনি সদস্য ও নারী সদস্যদের কাছ থেকে প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে পার্সেন্টেজ নিতেন বলে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বরাবর লিখিত অভিযোগ হয়েছে।

আ ন ম রাকিবুল ইউসুফ গেল মার্চের মাঝামাঝি থেকে জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত চার মাস এই ইউপির প্রশাসক ছিলেন। বর্তমানে পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান-৩ রুপালী খাতুন।

রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) ডাকযোগে তিনি সমাজসেবা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছেন। তিনি নিজেই রাকিবুল ইউসুফকে ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে এতে উল্লেখ করেছেন।

অভিযোগের অনুলিপি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের রাজশাহী বিভাগের পরিচালক, জেলা প্রশাসক, স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকেও (ইউএনও) দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।

অভিযোগে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান উল্লেখ করেন, রাকিবুল ইউসুফ পরিষদের আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়েই নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। তিনি পরিষদের সদস্য ও নারী সদস্যদের কাছ থেকে টিআর, কাবিটা ও উন্নয়ন তহবিলের প্রকল্পের কমিশন দাবি করেন। তা না হলে তিনি কাজের চূড়ান্ত ক্লিয়ারেন্স দেবেন না বলে জানিয়ে দেন। এ অবস্থায় বাধ্য হয়ে তিনি নিজেই তাকে ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। অন্য সদস্য ও নারী সদস্যদের কাছ থেকেও রাকিবুল ইউসুফ টাকা নিয়েছেন বলে তিনি জানতে পেরেছেন।

পরিষদের সদস্যরা জানান, রাকিবুল ইউসুফ দায়িত্বে থাকলেও ঠিকমতো অফিস করতেন না। সপ্তাহে এক-দুই দিন তিনি আসতেন দুপুর ১২টার পর। দু’এক ঘণ্টা থেকে তিনি চলে যেতেন। ফলে নাগরিক ভোগান্তি যেমন হচ্ছিল, তেমনি পার্সেন্টেজ দিতে সদস্যরা চরম বেকায়দায় পড়েছিলেন।

এ অবস্থায় প্রশাসক সরিয়ে জনপ্রতিনিধিদেরই একজনকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য সংরক্ষিত নারী সদস্য রুপালী খাতুন উচ্চ আদালতে রিট করেন। এর প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত প্রশাসককে অপসারণ করে প্যানেল চেয়ারম্যানদের মধ্যে থেকে একজনকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিতে নির্দেশ দেন। এ নিয়ে গত ১০ জুলাই পরিষদের সভা বসে। সেখানে প্যানেল চেয়ারম্যান-১ ও প্যানেল চেয়ারম্যান-২ দায়িত্ব পালনে অপারগতা জানান। দায়িত্ব নিতে সম্মত হন প্যানেল চেয়ারম্যান-৩।

কিন্তু পরে কয়েকজন সদস্য প্যানেলের ওপরই অনাস্থা আনেন। এ নিয়ে গত ১৬ জুলাই ইউএনওর কার্যালয়ে অনাস্থার ওপর গোপন ভোট হয়। সেখানে প্যানেলের পক্ষে ৭ জন ও বিপক্ষে ৫ জন ভোট দেন। ফলে প্যানেল টিকে যায়। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন রুপালী খাতুন।

তার অভিযোগ, এখন আবার তাকে সরিয়ে প্রশাসক হতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন সমাজসেবা কর্মকর্তা রাকিবুল ইউসুফ। অভিযোগে রুপালী খাতুন উল্লেখ করেন, সমাজসেবা কর্মকর্তা রাকিবুল ইউসুফ প্রশাসক হয়ে ফিরতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তিনি প্রশাসক অপসারণের হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আনোয়ার হোসেনকে দিয়ে হাইকোর্টে লিভ টু আপিল করিয়েছেন।

জানতে চাইলে ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রশাসক থাকলেই ভাল। পরিষদের স্বার্থে আমি রিট করেছি। তবে ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুল মতিন বলেন, প্রশাসক থাকলে একটা সই নিতেও সাত-আট দিন ঘুরতে হয়। আমরা পরিষদের তরফ থেকেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান চাই। আমরা ভোটে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেছি। প্রশাসক এনে ভোগান্তি চাই না।

১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হান্নান আহাদ বলেন, প্রশাসক আসায় জনগণ অনেক বিপদে ছিল। এখান থেকে কাগজপাতি নিয়ে দুর্গাপুরে যেতে হতো। সদস্যদের কোনো কাজকাম দিতেন না। আমরা সদস্যরা ভোট করে রুপালী খাতুনকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেছি। শুনেছি, এর বিরুদ্ধে আবার সমাজসেবা কর্মকর্তা রিট করিয়েছেন। তিনি নাকি আবার ফিরতে চান।

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রুপালী খাতুন বলেন, ‘টিআর, কাবিটা ও উন্নয়ন তহবিলের প্রকল্পের পার্সেন্টেজ না দিলে আগের প্রশাসক কাজের ক্লিয়ারেন্স দিতে চাননি। তাই বাধ্য হয়েই তাকে আমি নিজেই ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা দিয়েছি। অন্য সদস্যরাও টাকা দিয়েছেন। তিনি আবার ফিরলে আমাদেরকে জিম্মি করে ফেলবেন। জনগণ ভোগান্তির মধ্যে পড়বেন।’

জানতে চাইলে পরিষদের সাবেক প্রশাসক উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আ.ন.ম রাকিবুল ইউসুফ বলেন, পার্সেন্টেজ আদায়ের অভিযোগ একেবারেই সত্য নয়। এটা হয়ে থাকলে তো তিনি তখনই অভিযোগ করতে পারতেন। এতদিন পর কেন, কিসের ভিত্তিতে অভিযোগ করছেন?

তিনি দাবি করেন, তিনি আবার প্রশাসক হতে চান না। কাউকে দিয়ে আইনি লড়াইও শুরু করেননি। এখন পরিষদের কোনো সদস্য প্রশাসক চেয়ে রিট করলে তার কিছু আসে যায় না।

সম্পাদকীয় :

Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

রাজশাহীর সময় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আবেদনকৃত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, ঢাকা ।

অফিস :

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204 Thana : Motihar,Rajshahi

Email : [email protected],                    [email protected]