ইসরায়েলি হামলায় একদিনে নিহত আরও ৭৩ ফিলিস্তিনি

আপলোড সময় : ০৪-০৯-২০২৫ ০৭:২৭:১১ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ০৪-০৯-২০২৫ ০৭:২৭:১১ অপরাহ্ন
ইসরায়েলের অব্যাহত বোমাবর্ষণে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় একদিনে অন্তত ৭৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে শুধু গাজা সিটিতেই নিহত হয়েছেন ৪৩ জন। হামাসের দাবি, ইসরায়েল পুরো পরিবারকে টার্গেট করে নির্বিচারে হত্যা করছে।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) গাজা সিটি ও আশপাশের এলাকায় ইসরায়েলি সেনারা তীব্র হামলা চালায়। এতে নিহত হন অন্তত ৭৩ জন ফিলিস্তিনি। এ ঘটনায় জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি দ্রুত হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে হামাস, যা পরিস্থিতিকে তারা 'গণহত্যা' বলে আখ্যায়িত করেছে।

বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি সাবরিন আল-মাবহুহ আল জাজিরাকে জানান, 'আমার ভাইকে তার ঘরেই হত্যা করেছে। স্ত্রী-সন্তানসহ পুরো পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। কেউ বেঁচে নেই।'

শেখ রাদওয়ান এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষজনও এ হামলার শিকার হন। একটি স্কুলের তাঁবুতে গ্রেনেড হামলার ফলে আগুন ধরে যায়। স্থানীয় বাসিন্দা জাকিয়া সামি বলেন, 'শেখ রাদওয়ান জ্বলছে। যদি গাজা সিটিতে আগ্রাসন বন্ধ না হয়, আমরা সবাই মরব। যারা শুধু দেখছে, কিছু করছে না— আমরা তাদের ক্ষমা করব না।'

গাজার গণমাধ্যম দপ্তর জানায়, গত তিন সপ্তাহে ইসরায়েল অন্তত ১০০ বার রোবট বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পুরো আবাসিক ব্লক ও মহল্লা ধ্বংস করেছে। ১৩ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া অভিযানে গাজা সিটিতেই মারা গেছেন প্রায় ১ হাজার ১০০ মানুষ।

আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ সরেজমিনে জানান, 'পরিস্থিতি প্রলয়ংকরী। মনে হচ্ছে এর কোনো শেষ নেই। পুরো মহল্লা একের পর এক ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। মানুষ কয়েক দশকে যা গড়ে তুলেছিল, সবকিছু হারাচ্ছে। এটি এক দুঃস্বপ্ন।'

একই দিন উত্তর গাজার আল-জারিসি পরিবারের বাড়িতে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ১০ জন নিহত হন। হামাস একে 'ভয়াবহ যুদ্ধাপরাধ' বলে উল্লেখ করেছে এবং দাবি করেছে, এটি ফিলিস্তিনিদের জীবন ধ্বংসের এক পরিকল্পিত অংশ।

মানবিক পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, অবরোধের কারণে খাদ্য ও ওষুধ প্রবেশ বন্ধ থাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় এক শিশুসহ ছয়জন অনাহারে মারা গেছে। চলমান অবরোধকালে ক্ষুধাজনিত কারণে এখন পর্যন্ত ৩৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ১৩১ শিশু।

জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, ইসরায়েলের অভিযানে প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। কেবল ১৪ থেকে ৩১ আগস্টের মধ্যে জোরপূর্বক নতুন করে ৮২ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, যার মধ্যে ৩০ হাজারকে উত্তর থেকে দক্ষিণে সরতে বাধ্য করা হয়েছে।

শিশুদের অবস্থা আরও ভয়াবহ। ইউনিসেফের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে পাঁচ বছরের নিচের ১ লাখ ৩২ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টিতে মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়বে। বর্তমানে মোট ৩ লাখ ২০ হাজার শিশু মারাত্মক খাদ্যসংকটে ভুগছে। ইউনিসেফ সতর্ক করে বলেছে, 'দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়ছে। শিশুদের জন্য এখনই জরুরি মানবিক সহায়তা ও বিশেষ পুষ্টি সরবরাহ প্রয়োজন।'

খাদ্য নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইপিসি গত আগস্টেই নিশ্চিত করেছে যে উত্তর গাজায় দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে, যা দ্রুত দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়ছে। সহায়তাকর্মীদের ভাষায়, ইসরায়েলের অবরোধের কারণে প্রতিদিন টিকে থাকাটাই এখন ফিলিস্তিনিদের জন্য এক ভয়াবহ সংগ্রাম।

সম্পাদকীয় :

Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

রাজশাহীর সময় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আবেদনকৃত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, ঢাকা ।

অফিস :

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204 Thana : Motihar,Rajshahi

Email : [email protected],                    [email protected]