রাজশাহীতে শেষ রক্ষা হলো না আদিবাসীদের, ঘর ছাড়ার নির্দেশ

আপলোড সময় : ০৪-০৯-২০২৫ ০১:৫৩:৩৬ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ০৪-০৯-২০২৫ ০১:৫৩:৩৬ অপরাহ্ন
রাজশাহী মহানগরীর মোল্লাপাড়ার আদিবাসীপাড়ায় ৫৩ বছর ধরে বসবাস করা পাহাড়িয়া সম্প্রদায়ের ১৬টি পরিবারকে উচ্ছেদের প্রস্তুতি চলছে। 

আগামীকাল শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) খাসি জবাই করে ভোজের আয়োজনের পর রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর)  তাদের ঘর ছাড়তে হবে বলে জানানো হয়েছে। 

স্থানীয়  ব্যক্তি সাজ্জাদ আলী এই জমি নিজের বলে দাবি করছেন।

সাজ্জাদ আলীর দাবি, ১৬ কাঠা জমি তার কেনা। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আদিবাসীদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে আছেন। 

এলাকাবাসী জানান, সাজ্জাদ এখন পুরো জায়গা দখলের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। 

পাড়ার বাসিন্দাদের বক্তব্য অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক আদিবাসী ভারতে আশ্রয় নেন। স্বাধীনতার পর ফিরে এসে তারা নিজেদের বাড়িঘর ফিরে পাননি। তখন ইন্দ্র ধুপি নামের এক ব্যক্তি মানবিক কারণে এই জমিতে ছয়টি পরিবারকে থাকতে দেন। তিন প্রজন্মে সেই ছয়টি পরিবার এখন ১৬টিতে পরিণত হয়েছে। সেই থেকে এলাকাটি আদিবাসীপাড়া' নামেই পরিচিত।

মিশ্র রাম বর্মণ (৪০) জানান, বছর দুয়েক আগে সাজ্জাদ আলী প্রথমবার উচ্ছেদের চেষ্টা করলে তৎকালীন ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম উভয় পক্ষকে নিয়ে আপোষ মীমাংসার লক্ষ্যে বসেন। তখন সাজ্জাদের কাগজপত্র দেখে কাউন্সিলর সেগুলোকে জাল দলিল বলে ঘোষণা করেন। এরপর সাজ্জাদ কৌশলে সরে যান। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের তিন দিন পর সাজ্জাদ ফের ফিরে এসে উচ্ছেদের ঘোষণা দেন। পরে ছয়টি মূল পরিবারকে প্রতি ছয় লাখ টাকা করে দেওয়ার প্রস্তাব দেন।  বিনিময়ে পাহাড়িয়াদের জমি ছেড়ে দিতে বাধ্য করেন।

মিশ্র রাম বর্মণ বলেন, প্রথমে তিন মাস, পরে ১৫ দিন, ৭ দিন, শেষে ১০ দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়। সেই বেঁধে দেওয়ার সময় শুক্রবার শেষ হবে। সেদিন খাসি কেটে খাওয়াবে বলে জানিয়েছে সাজ্জাদ। 

রবিবারের মধ্যে সবাইকে এলাকা ছাড়তে হবে। এ এলাকার প্রথম ছয়জন বসবাসকারীর মধ্যে কেবল ৮০ বছর বয়সী ফুলমনি বিশ্বাস জীবিত আছেন। 

বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় বিষন্ন মনে তিনি বাড়ির সামনে বসেছিলেন। কোথায় যাবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোথায় যাব? আমরা তো এখন চোখে অন্ধকার  দেখছি। এই যুবতী বয়স থেকে এই ভিটায় রয়েছি। শেষ বয়সে কোথায় যাব, কে আমাদের থাকতে জমি দিবে। তার চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ।

৪৫ বছর বয়সী মেয়ে সরলা বিশ্বাস, যার জন্ম এই মহল্লায়। তিনি বলেন, এখানেই জন্ম আমার। এই ভিটা ছেড়ে চলে যেতে হবে। এটা তো অন্যায়।  কিন্তু কিছু করার নাই।"

ইতিমধ্যে তিনটি পরিবার ঘরবাড়ি ভেঙে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। বাকি পরিবারগুলোও প্রস্তুতি নিচ্ছে। কেউ কেউ গ্রামে জমি কিনেছেন, তবে বাড়ি করার মতো টাকা নেই। গর্ভবতী পার্বতী রানী কেঁদে বলেন, আমি পুয়াতি। এখন কার বাড়িতে গিয়ে উঠব?" এই মহল্লার তরুণ শিপেন বিশ্বাস এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছেন। তার দাদা বামনা পাহাড়িয়া এই এলাকার প্রথম ছয়জন বসবাসকারীর একজন ছিলেন। শিপেন জানালেন, রবিবারের পর তারাও এই জমি ছেড়ে চলে যাবেন।

সাজ্জাদ আলী দাবি করে বলেন, ওই জমি আমার কেনা। কেনার সময়ই কয়েকটা ঘর ছিল। আমি কাউকে জোর করছি না বরং টাকাও দিয়েছি। সুন্দরভাবেই বিদায় দিচ্ছি। কত সালে জমি কিনেছেন জানতে চাইলে তিনি সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলতে পারেননি। 

আওয়ামী সরকারের পতনের পর কেন উচ্ছেদের প্রক্রিয়া শুরু করলেন, প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি দলটল করি না। টাকা শংকট থাকায় এতদিন জমিতে যাইনি। টাকার ব্যবস্থা করে জমি নিতে গেছি।

নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আজিজুল বারী বলেন, এ রকম কোনো বিষয় আমার জানা নেই। যদি অন্যায়ভাবে উচ্ছেদ করা হয়, পাহাড়িয়ারা আমাদের জানালে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সম্পাদকীয় :

Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

রাজশাহীর সময় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আবেদনকৃত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, ঢাকা ।

অফিস :

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204 Thana : Motihar,Rajshahi

Email : [email protected],                    [email protected]