তানোরে যুবদল নেতার জমিতে আওয়ামী লীগ নেতার হানা

আপলোড সময় : ০৪-০৯-২০২৫ ১২:৪১:৫৩ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ০৪-০৯-২০২৫ ১২:৪১:৫৩ পূর্বাহ্ন
রাজশাহীর তানোরের কামারগাঁ ইউনিয়নের (ইউপি) মালশিরা মাদরাসা মোড়ে যুবদল নেতার দখলীয় জমিতে আওয়ামী লীগ নেতা হানা দিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় নকুল চন্দ্র বাদি আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলামসহ ৯ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ১৬ জনকে আসামি করে তানোর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।এঘটনায়  দু'পক্ষের মাঝে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়নের (ইউপি) জেল নম্বর-১৮৪, মালশিরা মৌজার, খতিয়ান নম্বর ৩১৬, দাগ নম্বর ৬৬৩ ও ৬৬৪,শ্রেণী চাতাল, পরিমাণ ২০ দশমিক ৩৩ শতক। পৈতৃক সুত্রে এই সম্পত্তির মালিক দিলিপ কুমার। কিন্ত্ত গত ২০১২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিক্রয়-কবলা রেজিষ্ট্রি দলিলের মাধ্যমে দিলিপ কুমার তার স্ত্রী লিপি রানী ও পুত্র সেতু কুমার মন্ডল দিয়েছেন।

এদিকে দিলিপ কুমার ওই সম্পত্তি বিক্রি করার কথা বলে (তিনশ' টাকার নন- জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে বায়নামা করে) যুবদল নেতা শরিফ উদ্দিন মুন্সীর কাছে থেকে ২২ লাখ টাকা নিয়েছেন। শরিফ উদ্দিন মুন্সী ওই সম্পত্তি টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে সেখানে হার্ডওয়ার ব্যবসার মালামাল রাখার গুদাম করে ভোগদখল করে আসছেন। বায়নামায় বলা হয়েছে, চাতালের দক্ষিন পার্শ্বের মেইন সড়ক সংলগ্ন ফাঁকা ০.২০৩৩ একর জমির দাম তৎকালীন সময়ে শতক প্রতি দেড় লাখ টাকা হিসেবে সর্বমোট ৩০ লাখ ৪৯ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করে গত ২০১৬ সালের ৩ অক্টোবর সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সম্মুখে উক্ত জমির বায়না বাবদ নগদ ২২ লাখ টাকা গ্রহণ করেন। এবং বাঁকি টাকা রেজিষ্ট্রির পরে নেয়ার কথা। সম্পত্তি বিক্রির জন্য দিলিপ  দুদিন শরিফ মুন্সীকে রেজিষ্ট্রি অফিসে নিয়ে গিয়ে দলিল লেখার পর রেজিষ্ট্রি না দিয়ে কৌশলে পালিয়ে গেছে।

এদিকে গত ১৮ আগস্ট মির্জাপুর গ্রামের আলাউদ্দিন আলীর পুত্র রেজাউল ইসলাম গোপণে রেজিস্ট্রি দলিলের মাধ্যমে দিলিপের স্ত্রী ও পুত্রের কাছে থেকে ওই সম্পত্তি ক্রয় করেছেন। অথচ নীতিমালা অনুযায়ী বিবাদমান বা কারো দখলীয় সম্পত্তি ক্রয় করতে হলে গ্রহীতাকে অবশ্যই পত্রিকায় লিগ্যাল নোটিশ প্রকাশ করার পাশাপাশি  দখলদারকে অবগত করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত ৩০ আগষ্ট শনিবার রেজাউল ইসলাম ও তার ভাই আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম  বহিরাগত লোকজন নিয়ে জোরপুর্বক শরিফ উদ্দিন মুন্সীর দেয়া বেড়া ভেঙে সে বাঁশের খুটি দিয়ে সম্পত্তির সীমানা নির্ধারণ করেছে।

এদিকে লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, বাদী মেসার্স জাহারা এন্টারপ্রাইজের (স্বত্বাধিকারীরা  শরিফ উদ্দিন মুন্সি) ম্যানেজার পাশাপাশি তার জায়গা-জমি দেখাশুনার দায়িত্ব পালন করে আসছি।

অভিযোগে উল্লেখ  ১নং, ২নং ও ৫নং বিবাদীর মতামতের ভিত্তিতে বায়নাকৃত জায়গার উপর একটি গোডাউন ঘর নির্মাণ করিয়া উক্ত গোডাউন ঘরে হার্ডওয়ার ও স্যানেটারি সামগ্রী রাখা হয়। গোডাউন ঘর নির্মাণের পর হইতে ২নং হইতে ৫নং বিবাদীগণ পর্যায়ক্রমে আমার মালিককে জানান যে, বায়নানামার উক্ত জমি ২০১২ সালে ১নং বিবাদী তাহার ছেলে ও স্ত্রীকে অর্থাৎ ২নং ও ৫নং বিবাদীকে দলিল মূলে রেজিস্ট্রি করিয়া দিয়াছে। অতঃপর আমার মালিক ১নং বিবাদীকে এই ব্যাপারে বলিলে ১নং বিবাদী জানান যে, আমার স্ত্রী ও সন্তানদের দ্বারা বায়নাকৃত জমি আপনার মালিককে রেজিস্ট্রি করিয়া দেওয়ার ব্যবস্থা করিয়া দিবো। যাহার কারণে আমি বায়নাকৃত জায়গায় ঘর বা গোডাউন করার অনুমতি প্রদান করিয়াছি। অপরদিকে ২নং হইতে ৫নং বিবাদীগণ উপরোক্ত বিবাদীগণসহ অজ্ঞাতনামা বিবাদীগণদেরকে সঙ্গে নিয়ে যোগসাজস করে গত ৩০ আগস্ট সকালে আমার মালিককে বিভিন্ন ধরণের ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দেয় এবং পূর্বপরিকল্পিতভাবে আমার মালিকের ভোগ-দখলীয় সম্পত্তির উপরে থাকা গোডাউন ঘর ভাংচুর শুরু করেন।এসময় বাদি তাদের  নিষেধ করা মাত্রই ২নং বিবাদীর হুকুমে অন্যান্য বিবাদীগণ তাকে এলোপাথাড়ি ভাবে মারপিট করে জোর পূর্বক গোডাউন ঘরসহ ঘরের যাবতীয় মালামাল ভাংচুর করে। 

এদিকে বিবাদীগণ  বিভিন্ন সময়ে আমার মালিকের গোডাউনে অনাধিকারে প্রবেশ করে গোডাউনে থাকা প্রায় ৫০ লাখ টাকার মালামাল লুটপাট ভাঙচুর ও লুটপাট করেন।

এদিকে সম্পত্তি নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে,শরিফ উদ্দিন মুন্সীর দাবি তিনি জায়গা বায়নামা করার পর সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মসলেম উদ্দিন প্রামানিক ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ দিলিপের পরিবারের উপস্থিতিতে জায়গা বুঝে নিয়ে,সেখানে বেড়া দিয়ে ঘিরে হার্ডওয়্যার-স্যানেটারি সামগ্রীর গুদাম হিসেবে ব্যবহার করছেন।তিনি বলেন,এলাকার সবাই জানেন ওই জায়গা শরিফ উদ্দিন মুন্সীর। তাই জায়গা কেনার আগে লিগ্যাল নোটিশ বা তাকে অবগত করা উচিৎ ছিল। এছাড়াও তার দখল যদি অবৈধ হয় তাহলে রফিকুল ও রেজাউল আদালত বা আইনের আশ্রয় নিতে পারতেন, তা না করে গত ৩০ আগস্ট শনিবার তারা বহিরাগত লোকজন নিয়ে ভাঙচুর ও রাতের আঁধারে তার মালামাল লুট করেছে এতে তার প্রায় ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।এছাড়াও ৩১ আগস্ট রোববার দুপুরে তার লোকজন লুট হওয়া মালামালের অবস্থা দেখতে গেলে রেজাউল ও রফিকুল তার লোকজনকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করেছেন।অন্যদিকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে রেজাউল ইসলাম বলেন,তিনি বৈধভাবে জায়গা কিনেছেন, কাগজ-কলমে জায়গা না পেলে তিনি নিবেন না।তার জায়গা বুঝে নিতে তিনি বেড়া ভেঙ্গে তার সীমানা ঘিরতে গিয়েছিলেন,তবে প্রশাসন নিষেধ করায তিনি জায়গা ঘেরা থেকে বিরত রয়েছেন। তিনি বলেন, উভয় পক্ষকে নিয়ে থানায় বসার কথা হয়েছে।এবিষয়ে তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি আফজাল হোসেন বলেন, অভিযোগ পাওয়া গেছে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।

সম্পাদকীয় :

Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

রাজশাহীর সময় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আবেদনকৃত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, ঢাকা ।

অফিস :

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204 Thana : Motihar,Rajshahi

Email : [email protected],                    [email protected]