যে কৌশলে কুষ্টিয়ায় আধিপত্য ধরে রেখেছেন আ.লীগ নেতা হানিফ

আপলোড সময় : ০২-০৯-২০২৫ ০৭:৪৯:৪২ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ০২-০৯-২০২৫ ০৭:৪৯:৪২ অপরাহ্ন
অনিয়মের মধ্যই দেশের ১১৩তম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন নিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। হাসিনার শাসনামলে কুষ্টিয়া হাউজিং স্টেটের ৬ ও ৭ নম্বর প্লটের ঠিকানায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমতি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু বাস্তবে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অস্তিত্ব নেই। সেসময় ক্ষমতার দাপটে স্ত্রী ফৌজিয়া আলমের নামে বিশ্ববিদ্যালয়টির লাইসেন্স নিয়েছিলেন হানিফ।

ট্রাস্টি বোর্ডে হানিফ নিজেও সদস্য ছিলেন। বেসরকারি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ করেন ‘লালন বিজ্ঞান ও কলা বিশ্ববিদ্যালয়’। শেষ পর্যন্ত অনুমোদন মিললেও বিশ্ববিদ্যালয়টি আর চালু করতে পারেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ চলমান অবস্থায় রক্তক্ষয়ী গণ-অভ্যুত্থানে দেশের আলোচিত নেতা হানিফ পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। বর্তমানে হানিফ কলকাতায় একটি ভাড়া ফ্ল্যাটে রয়েছেন বলে দলীয় একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে অনুমোদন নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম ভারতে বসেই চালু করেছেন হানিফ। সেখানে বসেই মঞ্জুরি কমিশন থেকে পরিবর্তন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড। চলতি বছর থেকে শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন নিয়েছেন। ধুমধাম করে শুরুও করেছেন শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম। পাঁচ বিভাগে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক, প্রভাষকসহ অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। কুষ্টিয়া জেলা পরিষদ মার্কেটের সপ্তম ও অষ্টম তলায় অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন আর ছাত্র-জনতার হামলার কোনো ক্ষতচিহ্ন নেই। আধুনিকতার ছোঁয়ায় সাজানো হয়েছে ‘লালন বিজ্ঞান ও কলা বিশ্ববিদ্যালয়’। গণ-অভ্যুত্থানের মাত্র এক বছরের মধ্যে এসব কিছু করেছেন পলাতক নেতা হানিফ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের অক্টোবরে মঞ্জুরি কমিশন থেকে ট্রাস্টি বোর্ড পরিবর্তন করা হয়। নভেম্বরে শুরু করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম। নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ২৪ শিক্ষক এবং ৩৭ কর্মকর্তা-কর্মচারী। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে ভর্তি কার্যক্রম। মোট পাঁচ বিভাগের ভর্তি কার্যক্রম চালু হয়েছে। প্রতি বিভাগে ৪০ জন পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন রয়েছে। চলতি বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত পাঁচ বিভাগে ১০১ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন।

সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের পট পরিবর্তনের কারণে বন্ধ হয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম। ভারতে বসেই বিশ্ববিদ্যালয়টি চালু করতে নানা কৌশল অবলস্বন করেন হানিফ। ২০২৪ সালের নভেম্বরে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান পদ থেকে স্ত্রীর নাম বাদ দিয়ে তার অতি আস্থাভাজন আগের ট্রাস্টি বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্টনার হালিমুজ্জামানকে চেয়ারম্যান করেন। ২০২৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের সময় ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন মাহাবুবউল আলম হানিফের স্ত্রী ফৌজিয়া আলম। আর হানিফ ছিলেন ওই ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য। ট্রাস্টি বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন হানিফের আস্থাভাজন হেলথকেয়ার ফার্মার সিইও হালিমুজ্জামান।

ট্রাস্টি বোর্ডের সেক্রেটারি ছিলেন আর্কিটেক্ট তারিক হাসান। কোষাধ্যক্ষ ছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহিনুর রহমান। সদস্য ছিলেন ইবির আইন বিভাগের অধ্যাপক সেলিম তোহা এবং গার্মেন্ট মালিক আব্দুল মান্নান। হানিফ ও তার স্ত্রী ট্রাস্টি বোর্ড থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে গেলেও তারা সবাই এখনো ট্রাস্টি বোর্ডে বহাল রয়েছেন। কৌশলে শুধু পদধারী কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতাকে বাদ দিয়ে পুরো ট্রাস্টি বোর্ড নিজের আয়ত্তে রেখেছেন হানিফ।

এছাড়া বিএনপিপন্থি এক শিক্ষকনেতাকে উপাচার্য নিয়োগের চেষ্টা করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। উপাচার্য নিয়োগের জন্য ৩ জনের একটি প্যানেল মঞ্জুরি কমিশনে পাঠানো হয়েছে। প্যানেলের প্রথমেই রয়েছেন ইবির কম্পিউটর সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও জিয়া পরিষদের সভাপতি ফারুকুজ্জামান। প্যানেলের অপর দুজন হলেন ইবির ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক আক্তারুজ্জামান ও ইইই বিভাগের শরিফুল ইসলাম।

বিশ্ববিদ্যালয়টি অনুমোদন নেওয়ার ক্ষেত্রেও নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। ২০২৩ সালে কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং স্টেটের ৬ ও ৭ নম্বর প্লটের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও হানিফের ভাই আতাউর রহমান আতার নির্মাণাধীন বাড়ির ঠিকানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীকালে আতার সম্পদ নিয়ে দুদকের মামলা ও অনুসন্ধান শুরু হলে লালন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেলা হয়।

পরে ক্ষমতার দাপটে কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের নির্মাণাধীন নবম তলা ভবনের ডিজাইন পরিবর্তন করে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কাজ শুরু করেন হানিফ। ডিজাইনে ওই ভবনে বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের কোনো নকশা ছিল না। বর্তমান জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ বলছেন, ডিজাইন না মেনে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে মাসিক ৩ লাখ টাকায় ভবনের সপ্তম ও অষ্টম তলা হানিফকে ভাড়া দেন তৎকালীন চেয়ারম্যান ও পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা রবিউল ইসলাম।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হালিমুজ্জামান বলেন, বর্তমানে হানিফসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর ট্রাস্টি বোর্ডে পদধারী যারা ছিলেন, তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। হানিফ ও তার স্ত্রী ট্রাস্টি বোর্ড থেকে রিজাইন দিয়ে চলে গেছেন। পরে ট্রাস্টি বোর্ডের সিদ্ধান্তে আমাকে চেয়ারম্যান ও নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

সম্পাদকীয় :

Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

রাজশাহীর সময় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আবেদনকৃত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, ঢাকা ।

অফিস :

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204 Thana : Motihar,Rajshahi

Email : [email protected],                    [email protected]