রনির রক্তাক্ত উত্থান: ছাত্রহত্যা মামলায় জামিন, রাজশাহীতে আইনের মৃত্যু ও বিপ্লবের আলো!

আপলোড সময় : ২৬-০৮-২০২৫ ০৫:০৬:৪২ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ২৬-০৮-২০২৫ ০৫:০৬:৪২ অপরাহ্ন
রাজশাহীতে গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলিবর্ষণের অভিযোগে সন্ত্রাসী হিসেবে অভিহিত যুবলীগ নেতা বাপ্পি চৌধুরী রনি (৩৬) জামিনে কারামুক্তির মাধ্যমে একটি রক্তাক্ত উত্থানের সূচনা করেছে। গত ১২ আগস্ট সন্ধ্যায় রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে আত্মগোপনে চলে যাওয়া রনির এই পলায়ন আইনের মৃত্যু ঘোষণা করেছে, এবং জনগণের মনে বিপ্লবের আলো জ্বেলে দিয়েছে। এই ঘটনা আদালত, পুলিশ এবং প্রশাসনের ব্যর্থতাকে উন্মোচিত করেছে, যা রাজশাহীতে এক নতুন বিদ্রোহের ভিত্তি তৈরি করতে পারে।

বাপ্পি চৌধুরী রনি (৩৬), সে রাজশাহী নগরীর রাজপাড়া থানার পুলিশ লাইনস ভেড়ীপাড়া এলাকার বাসিন্দা এবং ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি।
গত বছর ৫ আগস্ট রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আলুপট্টি মোড়ে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা মিছিলে বাধা সৃষ্টি করে। সংগৃহীত ভিডিওতে রনিকে পিস্তল হাতে গুলি চালাতে দেখা গেছে, যার ফলে গুরুতর পরিণতি ঘটে।
ওই দিন শাহমখদুম কলেজের কাছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের গুলিতে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাকিব আনজুম (২৫) ঘটনাস্থলে নিহত হন। সাকিব নগরীর রানীনগর এলাকার মাইনুল হকের ছেলে ছিলেন। একই দিনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের মহানগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক আলী রায়হান (২৪) গুলিতে আহত হন এবং ৮ আগস্ট রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে মারা যান। এই দুটি হত্যা মামলার এজাহারনামী আসামি হিসেবে রনির নাম রয়েছে।

গত বছর ২২ আগস্ট নিহত সাকিবের বাবা মাইনুল হক বোয়ালিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন, যেখানে রাজশাহীর সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন প্রধান আসামি এবং ৩৪২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। ২১ আগস্ট আলী রায়হানের ভাই রানা ইসলামও অভিযুক্তদের মধ্যে রনির নামে হত্যা মামলা করেন, যেখানে ৫০ জনের নামসহ ১,১৫০ জনকে আসামি করা হয়। এছাড়া রনির বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের একটি পুরোনো মামলা এবং গত বছরের জুলাই আন্দোলন সংক্রান্ত আরও একটি মামলা রয়েছে।
গ্রেপ্তার ও কারাবরণ: গত বছর ১২ নভেম্বর রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকা থেকে র্যাব রনিকে গ্রেপতার করে। পরদিন ১৩ নভেম্বর তাকে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের বোয়ালিয়া মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়। তিনটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে আদালতে পাঠানো হয়, এবং সেই থেকে তিনি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন।

জামিন ও মুক্তির কাহিনী: গত ৪ আগস্ট উচ্চ আদালত থেকে রনি তিনটি মামলায় জামিন পান। ১২ আগস্ট সন্ধ্যায় জামিননামা জমা দিয়ে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান এবং আত্মগোপনে চলে যান। এই মুক্তির ঘটনা ১৩ আগস্ট জানাজানি হলে রাজশাহীতে পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা, কারা কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসনিক পর্যায়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়।
কারা সূত্রে জানা গেছে, ১৯ আগস্ট রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের বিশেষ শাখা কারাগারে থাকা ছয়জন বন্দির তথ্য জানতে চায়। এই তালিকায় রনির নাম ছিল, তবে তিনি আগেই মুক্তি পেয়ে যান। ছয়জনের মধ্যে দুজন ১২ আগস্ট রনির সঙ্গে জামিনে মুক্তি পান, একজনকে কারা ফটক থেকে গ্রেপ্তার করা হয়, অন্য দুজন এখনো কারাগারে, এবং একজনকে আটক করে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। মার্চ মাসে কারা কর্তৃপক্ষ পুলিশ কমিশনার ও সুপারকে গুরুত্বপূর্ণ আসামিদের তথ্য দেওয়ার জন্য চিঠি পাঠায়, কিন্তু পুলিশের কোনো উত্তর না পাওয়ায় রনি মুক্তি পেয়ে যান।

কারাগারের এক কর্মকর্তা জানান, উচ্চ আদালত থেকে জামিননামা কোর্ট পুলিশের রেজিস্ট্রারে নথিভুক্ত হয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। রনির ক্ষেত্রে কোর্ট পুলিশের অবহেলা থাকতে পারে, কারণ কারা কর্তৃপক্ষের কাছে অন্য কোনো মামলার তথ্য ছিল না। রাজশাহী সিএমএম কোর্টের জিআর শাখার পুলিশ পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন।

সুপ্রিম কোর্টের পদক্ষেপ: রনির জামিনে মুক্তির দুদিন পর ১৪ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ আদালতে তার জামিনাদেশ স্থগিত করা হয়। তবে পরবর্তী শুনানির তারিখ এখনো ধার্য হয়নি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রনির গুলিচালানোর অভিযোগ বিচারাধীন রয়েছে। সাবেক প্রসিকিউটর হাসানুল বান্না জানান, রনির জামিনের তথ্য পুলিশের বিশেষ শাখাকে দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তারা অগ্রিম তথ্য পায়নি, ফলে রনি পলায়ন করতে পারেন।

জনগণের প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভ: রনির মুক্তির খবরে নিহত সাকিব আনজুমের বাবা মাইনুল হক গভীর হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “সন্ত্রাসী রনির মুক্তি আমাদের কাছে আঘাত। আদালত ও পুলিশের অবহেলায় এমন ঘটেছে। আমি দ্রুত চার্জশিট ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।” আহতদের পরিবার ও জুলাই আন্দোলনের নিহতদের আত্মীয়রাও প্রশ্ন তুলেছেন আইনশৃঙ্খলা ও আদালতের ভূমিকা নিয়ে। তারা রনির পুনরায় গ্রেপ্তার দাবি করেছেন।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) গাজিউর রহমান জানান, রনির বিরুদ্ধে দুটি হত্যাসহ চারটি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে ২০০৯ সালের একটি পুরোনো মামলা রয়েছে। তিনি বলেন, “পুলিশ রনিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।” কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান জানান, “রনি কীভাবে মুক্তি পেল তার তদন্ত চলছে। অবহেলা থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

রনি রাজশাহী মহানগর যুবলীগের শীর্ষ ক্যাডার জহিরুল ইসলাম রুবেলের সহযোগী। গত বছর ৫ আগস্ট রুবেল ও তার দল গুলি চালিয়ে ছাত্র-জনতাকে ছত্রভঙ্গ করেছিল। রনি ও তার দলের এই কার্যকলাপ আন্তর্জাতিক মাত্রায় নিন্দিত হয়েছে।

রনি আত্মগোপনে থাকায় তার অবস্থান অজানা। জামিন স্থগিতকরণ সত্ত্বেও তার পলায়ন আইনের কার্যকারিতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। নিহত ও আহত পরিবারদের কাছে এটি একটি অপরাধী রক্ষার চেষ্টা। রাজশাহীতে এই ঘটনা আইনের প্রতি বিশ্বাস ভেঙে জনগণের বিদ্রোহের আলো জ্বেলে দিয়েছে।

সম্পাদকীয় :

Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

রাজশাহীর সময় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আবেদনকৃত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, ঢাকা ।

অফিস :

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204 Thana : Motihar,Rajshahi

Email : [email protected],                    [email protected]