চলন্ত বাসে পুরুষাঙ্গ বার করে মহিলাকে চোখ মারল যুবক

আপলোড সময় : ১০-০৮-২০২৫ ১১:১১:৩৪ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১০-০৮-২০২৫ ১১:১১:৩৪ অপরাহ্ন
দিল্লি পরিবহন কর্পোরেশনের (ডিটিসি) একটি বাসে এক মহিলার প্রতি অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি এবং হয়রানির ঘটনাটি ভারতে, বিশেষ করে গণপরিবহনে মহিলাদের নিরাপত্তাহীনতার এক উদ্বেগজনক বাস্তবতাকে আবার সামনে এনেছে। যদিও এই ঘটনায় অভিযুক্তকে শনাক্ত করা হয়েছে, ভুক্তভোগীর আনুষ্ঠানিক অভিযোগের অভাবে আইনি পদক্ষেপ ব্যাহত হয়, যা নারী সুরক্ষার ক্ষেত্রে এক বড় চ্যালেঞ্জের প্রতিফলন।

ভারতে নারী নির্যাতনের পরিসংখ্যান ও সামাজিক বাস্তবতা

ভারতে নারী নিরাপত্তা এক উদ্বেগের বিষয়। শহর থেকে গ্রাম, গণপরিবহন থেকে কর্মক্ষেত্র, সর্বত্রই নারীরা বিভিন্ন ধরনের হয়রানি ও সহিংসতার শিকার হন। জাতীয় মহিলা কমিশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২১ সালের তুলনায় এই বৃদ্ধির হার প্রায় ৩০ শতাংশ, যা ২০১৪ সালের পর সর্বোচ্চ। এর মধ্যে একটি বড় অংশই হলো শারীরিক, মানসিক বা যৌন নির্যাতন।

ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর (এনসিআরবি) তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালে ভারতে প্রতিদিন গড়ে ৮৬টি ধর্ষণের মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। তবে বহু ঘটনাই সামাজিক লজ্জা, প্রতিশোধের ভয় এবং বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতার কারণে নথিভুক্ত হয় না। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে গিয়েও অনেক সময় মহিলাদের হয়রানির শিকার হতে হয়, যা তাদের নিরুৎসাহিত করে।

গণপরিবহনে মহিলাদের নিরাপত্তা: এক বড় চ্যালেঞ্জ

ব্র্যাকের একটি গবেষণা অনুযায়ী, ভারতে গণপরিবহনে যাতায়াতকারী ৯৪ শতাংশ নারীই কোনো না কোনোভাবে যৌন হয়রানির শিকার হন। এর মধ্যে ইচ্ছাকৃত স্পর্শ, ধাক্কা দেওয়া বা সংবেদনশীল জায়গায় স্পর্শ করার মতো ঘটনা ঘটে থাকে। অনেক ক্ষেত্রেই, প্রতিবাদ করলে উল্টে হেনস্থার শিকার হতে হয়, এবং আশেপাশের যাত্রীরাও নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেন। দিল্লির মতো শহরে বাসে সিসিটিভি ক্যামেরা, প্যানিক বাটন এবং মার্শাল নিয়োগের মতো পদক্ষেপ নেওয়া হলেও, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে তা পুরোপুরি সফল হয়নি।

বিদ্যমান আইন ও তার প্রয়োগ

ভারতে মহিলাদের সুরক্ষার জন্য একাধিক কঠোর আইন রয়েছে। ভারতীয় দণ্ডবিধির (আইপিসি) ৩৫৪ এবং ৫০৯ ধারায় নারীর শ্লীলতাহানি ও অশ্লীল আচরণের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান রয়েছে। এছাড়া, পারিবারিক সহিংসতা থেকে নারীদের সুরক্ষা আইন, ২০০৫, কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের যৌন হয়রানি (প্রতিরোধ, নিষিদ্ধকরণ ও প্রতিকার) আইন, ২০১৩ এবং যৌতুক নিষেধাজ্ঞা আইন, ১৯৬১-এর মতো আইনগুলি মহিলাদের আইনি সুরক্ষা প্রদান করে।

তবে আইন থাকা সত্ত্বেও এর সঠিক প্রয়োগ এবং বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অনেক সময় অভিযুক্তরা আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যায়, যা ভুক্তভোগীদের বিচার ব্যবস্থার উপর থেকে আস্থা কমাতে পারে।

সামনের পথ: কী করণীয়?

নারী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শুধুমাত্র আইন প্রণয়ন বা পুলিশি নজরদারি যথেষ্ট নয়। এর জন্য একটি সামগ্রিক সামাজিক পরিবর্তন প্রয়োজন।

সচেতনতা বৃদ্ধি: পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ-সমতার মূল্যবোধ স্থাপন করা এবং হয়রানির বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি।

ভুক্তভোগীর পাশে দাঁড়ানো: সমাজকে ভুক্তভোগীর পাশে দাঁড়াতে হবে, যাতে তারা নির্ভয়ে অভিযোগ জানাতে পারেন।

দ্রুত বিচার: বিচার প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে হবে এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

নিরাপত্তা পরিকাঠামো উন্নত করা: গণপরিবহনে সিসিটিভি, জিপিএস ট্র্যাকিং এবং আরও বেশি সংখ্যক মহিলা পুলিশ ও মার্শাল নিয়োগের মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।

সামাজিক মানসিকতার পরিবর্তন: নারী সুরক্ষার বিষয়টি কেবল মহিলাদের একার লড়াই নয়, পুরুষদেরও এই লড়াইয়ে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে। শেষ পর্যন্ত, একটি নিরাপদ সমাজ গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদের সকলের। নারীর নীরবতা ভাঙার পরিবেশ তৈরি করা এবং তাদের প্রতি সম্মান ও সংবেদনশীলতা প্রদর্শনই পারে এই গভীর সামাজিক ক্ষত নিরাময় করতে।

সম্পাদকীয় :

Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

রাজশাহীর সময় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আবেদনকৃত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, ঢাকা ।

অফিস :

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204 Thana : Motihar,Rajshahi

Email : [email protected],                    [email protected]